নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
আরেকটি আর্জেন্টিনা ম্যাচ। আরেকটি মেসি-শো!
আর্জেন্টিনা মাঠে নামবে, নানাভাবে গোলের চেষ্টা করবে, কিন্তু ব্যর্থ হবে। পরে সেই লিওনেল মেসিকেই কিছু না কিছু করতে হবে। দুইবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নদের খেলা মানেই এই চিত্রনাট্য। আজ রোববার কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালেও এর কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। মেসিতে ভর করেই কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে উঠল আর্জেন্টিনা।
শুরুর দিকে একটি সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন লিওনেল মেসি। পরে কী দারুণভাবেই না সেটা পুষিয়ে দিয়েছেন তিনি। গোল করেছেন, করিয়েছেন। অধিনায়কের নৈপুন্যে ইকুয়েডরকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে আর্জেন্টিনা। আর তাতে টানা চতুর্থবারের মতো লাতিন ফুটবলের প্রাচীণ এই প্রতিযোগীতার শেষ চারে গেল লিওনেল স্কালোনির দল।
গোইয়ানিয়ার অলিম্পিকো স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রোববার সকালে কোয়ার্টার-ফাইনালের তিনটি গোলেই ছিল মেসির অবদান। প্রথম দুটি গোল সতীর্থ রদ্রিগো ডি পল, লউতারো মার্তিনেজদের যেন একদম পাতে তুলে দিয়েছেন। পরের গোলটি নিজে করেছেন দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিক থেকে। চলতি আসরে আর্জেন্টিনা অধিনায়কের একটি চতুর্থ গোল, ফ্রি কিক থেকে দ্বিতীয়।
স্কোর লাইন যেমন বলছে ম্যাচ ততটা সহজ ছিল না। মার্তিনেসের গোলের আগ পর্যন্ত ম্যাচে ভালোভাবেই ছিল একুয়েডর। বল দখলে কিছুটা পিছিয়ে থাকা আর্জেন্টিনা গোলমুখে নেয় ২১টি শট। এর মধ্যে আটটি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, ইকুয়েডর দশটি শট নিয়ে দুটি রাখে লক্ষ্যে।
সমতা আনার বেশ কিছু সুযোগও পেয়েছিল দলটি। সেগুলো কাজে লাগাতে না পারার খেসারত দিতে হলো পরে। উল্টো যোগ করা সময়ে ডি মারিয়াকে বিপজ্জনক ফাউলের কারণে হিনচিপে লাল কার্ড দেখলে শেষ কিছুটা সময় ১০ জন নিয়ে খেলে তারা। তবে দিনটি যখন নিজের করে নেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন মেসি- তখন প্রতিপক্ষ যে কেউই হোক হালে পানি পায়না।
এই যেমন ধরুন ম্যাচের ৪০ মিনিটের গল্পটা। অন্য যে কেউ হলে হয়তো ওখান থেকে শট নেওয়ার চেষ্টা করতেন। গোলকিপার নেই গোলবারে, সামনে দুজন প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় থাকলেও তাঁরা স্থির নেই। এমন অবস্থায় গোলে শট নিলে কেউ আপত্তি তুলতেন না। বিশেষ করে সেই ব্যক্তি যদি মেসি হন।
কিন্তু মেসি বলেই ওখান থেকে শট নেওয়ার চেষ্টা করলেন না। মেসির সঙ্গে খেলেছেন এমন যে কেউ বলবেন, মাঠের পরিস্থিতি বোঝার ক্ষেত্রে মেসি অদ্বিতীয়। সেটা টের পাইয়ে দিলেন পরের ঘটনায়। বক্সের অন্য প্রান্ত দিয়ে উঠে আসা রদ্রিগো দি পলকে দেখে ফেললেন। বাঁকানো এক পাস পাঠিয়ে দিলেন সতীর্থের দিকে। ফাঁকায় দাঁড়ানো দি পল এতটাই সময় পেলেন যে শট নেওয়ার আগে বলটা থামিয়ে একটু মঞ্চটা প্রস্তুতও করতে পারলেন। গোল!
গোলের পরিস্থিতি সৃষ্টিও হয়েছে মেসির সুবাদে। মাঝমাঠে লওতারো মার্তিনেজের ব্যাক ফ্লিক থেকে বল পেয়ে মেসি একটা থ্রু বল দিয়েছিলেন নিকো গঞ্জালেসের দিকে। ইকুয়েডর রক্ষণের সবাইকে এড়িয়ে বলের দিকে ছুটছিলেন গঞ্জালেস। তাঁকে আটকে বক্সের বাইরে ছুটে এসেছিলেন ইকুয়েডর কিপার গালিন্দেজ। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে আটকেও দিয়েছিলেন। ধাক্কা খেয়ে গঞ্জালেস যখন মাটিতে গড়াগড়ি দিচ্ছেন, তখন বল মেসির পায়ে। চাইলেই শট নিতে পারতেন কিন্তু মেসি করলেন যা তা শুধু মেসি-ই চিন্তা করতে পারেন। বল থামিয়ে ম্যাচ দিলেন রুখে।
৮৪ মিনিটের গোলে এতটা নাটকীয়তা ছিল না। ডি-বক্সের একদম বাইরে বল খোয়ান ইকুয়েডরের হিনচাপি। বলটা পেয়ে গেলেন মেসি। বক্সের অন্যদিকে থাকা মার্তিনেজের দিকে বল পাঠিয়ে দিলেন। এবারও সেই দৃশ্য। এতটা ফাঁকায় ছিলেন মার্তিনেজ যে বেশ সময় নিয়েই বল থামিয়ে গোলে শট নিলেন। ২-০ গোলে এগিয়ে গেল আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোলে চাইলে একটু হলেও দাবি রাখতে পারেন বদলি নামা আনহেল দি মারিয়া। হাজার হলেও প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে চাপে ফেলে বল আদায়ের কাজটা তিনিই করেছেন। তৃতীয় গোলেও পার্শ্ব চরিত্র দি মারিয়া। বল নিয়ে বিপজ্জনকভাবে বক্সে ঢুকে পড়ছিলেন পিএসজি উইঙ্গার। তাঁকে আটাকানোর জন্য ফাউল করে বসলেন দ্বিতীয় গোলের ভিলেন হিনচাপি। পেনাল্টি!
ভিএআর অবশ্য বাধা দিল সে সিদ্ধান্ত। রেফারিকে আরেকবার চেক করতে বললেন ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি। রেফারি সেটা দেখে সিদ্ধান্ত বদলালেন। পেনাল্টি বক্সের একটু বাইরে হওয়ায় ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু কপাল পোড়ে হিনচাপির। বল আটকানোর কোন চেষ্টা না থাকায় এবং পেনাল্টি না হওয়ায় তাঁকে লাল কার্ড দেখান রেফারি।
ফ্রি-কিক নিতে নিতে ৯৩ মিনিট। বক্সের একদম ওপর থেকে কিক নিলেন মেসি। বাঁকানো শটটি পোস্টের একদম কোনা ঘেষেঁ জালে ঢুকেছে। টুর্নামেন্টে মেসির চতুর্থ গোল ঠেকানোর কোনো উপায় ছিল না গালিন্দেজের।
আর্জেন্টিনা আজ আরও বড় ব্যবধানে মাঠ ছাড়তে পারত। কিন্তু প্রথমার্ধে সুবর্ণ এক সুযোগ নষ্ট করেছেন গঞ্জালেস। অবশ্য মেসিও ফাঁকায় দাঁড়িয়ে পোস্টে লাগিয়েছেন বল। কিন্তু ম্যাচ শেষে এ নিয়ে হাপিত্যেশ করার কোনো কারণ রাখেননি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
সেই সঙ্গে একই দিন উরুগুয়েকে বিদায় করে সেমিফাইনালে ওঠা প্রতিপক্ষ কলম্বিয়াকে যেন একটা বার্তাই দিয়ে রাখলেন সময়ের সেরা তারকা।
৭ জুলাই (রোববার) বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় ব্রাসিলিয়ার মানে গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ২০০১ আসরের চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে যে লড়াইটা সহজ হবে না সেটি বুঝতে উরুগুয়েকে টাইব্রেকারে হারানো ম্যাচটিই যথেষ্ট।
দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে বড় টুর্নামেন্টে শিরোপা-খরায় ভুগছে আর্জেন্টিনা। ভালো দল নিয়ে এসেও শিরোপার দেখা পায়নি দলটি। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে হারের পর টানা দুবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেও শিরোপার ছোঁয়া হয়নি আলবেসেলেস্তাদের।
যদিও যৌথ আয়োজক ছিল আর্জেন্টিনাই, তবে করোনার কারণে এবার কোপা হচ্ছে প্রতিবেশি দেশ ব্রাজিলে। ৪ ম্যাচে ৩ জয় ও ১ ড্রয়ে ‘এ’ গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবেই উঠেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। এবার সেমির মঞ্চে। যেভাবে ছুটছে দল, যে ছন্দে আছেন মেসি, তাতে করে এবার বুঝি স্বপ্ন দেখতেই পারে ডিয়াগো ম্যারাডোনার অনুজরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।