পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্বের নবম বৃহৎ শহর ঢাকা। এর আয়তন ৩০৬ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা দুই কোটির বেশি। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বসবাস করে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। এমন ঘনবসতিপূর্ণ শহর বিশ্বে আর কোথঠর নেই। দেশের সব মানুষেরই স্বপ্নের শহর এটি। সবাই মনে করে ঢাকায়ই যত সুখ রয়েছে। ফলে সবপ্রান্ত থেকে মানুষ ঢাকায় ছুটে আসে। মানুষের এই চাপের কারণে ঢাকাও ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ফলে এর সম্প্রসারণ হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। যে যেভাবে পারছে এর আয়তন বৃদ্ধি করে চলেছে। সম্প্রসারিত এলাকায় নিয়ম কানুনের কোনো বালই নেই। অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি, যানজট, পানিবদ্ধতা, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণসহ এমন কোনো অনিয়ম নেই যা এ নগরীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পাহাড়সম সমস্যার মধ্য দিয়েই নগরবাসীকে জীবনযাপান করতে হচ্ছে। এসব সমস্যার কারণে ঢাকা বরাবরই বিশ্বের সবচেয়ে বসবাস অযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষ সারিতে স্থান পায়। বহু বছর ধরেই এই স্থান ধরে রেখেছে। সম্প্রতি বিশ্বের ১৪০টি শহরের মান নিয়ে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংস্থা ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের করা জরিপে ঢাকার স্থান হয়েছে ১৩৭ তম। অবাসযোগ্যতার দিক দিয়ে ঢাকার অবস্থান চতুর্থ। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কর্মকাÐের অসামঞ্জস্য, অপ্রতুল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এবং মাত্রা ছাড়ানো পরিবেশ দূষণের উপর ভিত্তি করে এ জরিপ করা হয়। বসবাস অযোগ্য তালিকায় ঢাকার শীর্ষ সারিতে থাকা এবারই প্রথম নয়। বিগত এক দশক ধরেই এ তালিকায় রয়েছে। নগরবিদরা বলছেন, ‘ঢাকা মহানগর এখন বিকলাঙ্গ ও ঝুঁকিপূর্ণ শহর। এর অস্তিত্ব হুমকির মুখে। এই অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা ‘মৃত নগরে’ পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারা বলেছেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বিশ্বের অনেক নগরীর মরে যাওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে হলে আগামী প্রজন্মের জন্য ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে হবে।
দুই.
নগরীর যেমন জন্ম আছে, তেমনি এর বৃদ্ধি ও মত্যু আছে। পৃথিবীতে নতুন নতুন নগরীর জন্ম হয়েছে, তেমনি অনেক নগরী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। এসব নগরী ধ্বংস হওয়ার পেছনে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, অপরিকল্পিত কর্মকান্ড, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগব্যাধি এবং যুদ্ধের কারণ রয়েছে। যুদ্ধের কারণে ট্রয় নগরী বারবার ধ্বংসের পর পুনরায় গড়ে তোলা হলেও শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লন্ডন, বার্লিন, ওয়ারস ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে পড়েছিল। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে প্রথম শতকে প্রাচীন নগরী পম্পেই পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ১৭৫৫ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামিতে পর্তুগালের লিসবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। এসব শহরের ধ্বংসের পেছনের কারণ উল্লেখ করা হলো এজন্য যে, শহর বা নগর যেকোনো উপায়ে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। ঢাকা নগরীতে অপরিকল্পিতভাবে যেসব কর্মকান্ড হচ্ছে, তাতে এর ধ্বংস হওয়ার প্রাকৃতিক ঝুঁকিও রয়েছে। ঢাকা ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলে রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন। তারা বলেছেন, মাঝারি আকারের ভূমিকম্প হলে এর ৭২ হাজার ভবন ধ্বসে পড়বে। এতে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। এ পরিস্থিতিতে পড়লে ঢাকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে। এটি আর তখন নগর হিসেবে থাকবে না। ভূমিকম্পের এই ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে, অপরিকল্পিতভাবে রাজধানীর বিস্তৃতি ও এর যেমন খুশি তেমন ব্যবহার। নগরী ব্যবহারেরও একটা নিয়ম আছে, কেবল ঢাকায়ই তা নেই। এখানে যে যেভাবে পারে ব্যবহার করছে। এক হিসেবে দেখানো হয়েছে, প্রতি বছর রাজধানীর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এক মিটার করে নেমে যাচ্ছে। এতে মাটির নিচে যে ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে নতুন পানি জমা হতে পারছে না। এর ফলে ভূমিকম্প হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। মাটির নিচে পানিশূন্য হওয়ার কারণ হচ্ছে, রাজধানীর অভ্যন্তরে যেসব জলাধার, খাল ও লেক ছিল সেগুলোর বেশিরভাগ দখল ও ভারাটের কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ঢাকার চারপাশের নদী অবৈধ দখল আর দূষণে মৃতপ্রায় অবস্থায় উপনীত। এতে পর্যাপ্ত পানির অভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না। নগরবিদরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে ঢাকায় কোন ভূগর্ভস্থ পানি থাকবে না। এর ফলে ভয়াবহ ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।
বর্ষায় সড়কে হাঁটু পানি, শুষ্ক মৌসুমে ধুলো-বালি-এ নিয়ে ঢাকায় আছি। এমন কথা নগরবাসীর মুখে মুখে। এ অবস্থা থেকে তারা কবে পরিত্রাণ পাবে, তা কেউই বলতে পারছে না। বর্ষা মৌসুমে রাজধানীর বিভিন্ন সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নের নামে নির্বিচারে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি যুগের পর যুগ ধরেই চলে আসছে। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বহু লেখালেখি হয়েছে। সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে শুষ্ক মৌসুমে তাদের কর্মকাÐ চালানোর পরামর্শও নগরবিদরা বারবার দিয়েছেন। এসব কথা তারা আমলে নেয়নি এখনও নিচ্ছে না। এসব কথায় কান না দিয়ে তারা তাদের সমন্বয়হীন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। উল্টো রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির দায় এক প্রতিষ্ঠান আরেক প্রতিষ্ঠানের উপর চাপিয়ে পারস্পরিক দোষারোপের মধ্য দিয়েই তাদের কার্যক্রম চলাচ্ছে। অথচ সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯ এ বলা হয়েছে, বর্ষা মৌসুমে (মে থেকে সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কোনো সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না। কাটাছেঁড়াও করা যাবে না। খনন কাজ করতে হবে রাতের বেলা, দিনে কোনো খোঁড়াখুঁড়ি করা নয়, কাটছেঁড়া নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে খনন কাজ শুরু করলে মূল খরচের ৫ গুণ জরিমানা করা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে জরিমানা দিতে হবে। সড়ক খননের এ নীতিমালা আজ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। এ সময়ে ঢাকার প্রধান সড়কগুলো দেখলে দেখা যাবে সেখানে দেদারছে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। জনভোগান্তি চরমে উঠেছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। নগরবাসী মনে করে, অসময়ে এসব উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের বেশিরভাগ কার্যাদেশের সাথে সরকারি দলের লোকজন এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা জড়িত। লাভবান হওয়ার জন্যই তারা বর্ষা মৌসুমে রাস্তা খুঁড়ে বৃষ্টির উছিলা দিয়ে তা যথাসময়ে শেষ করে না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়, আর্থিক বছরের অর্থছাড় হতে হতে বর্ষা শুরু হয়ে যায়। ফলে বর্ষায়ই তাদের কাজ শুরু করা ছাড়া বিকল্প থাকে না। এটা এক ধরনের বাহানা ছাড়া কিছু নয়। তারা যাতে এ ধরনের বাহানা সৃষ্টি করতে না পারে এজন্য পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থবছর এমন সময়ে শুরু করা দরকার যাতে বর্ষায় উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড শুরু করতে না হয়। বিশ্বের অনেক দেশেই জানুয়ারী থেকে অর্থ বছর শুরু হয়। আমাদের দেশেও অর্থ বছর এ সময়ে শুরু করা যায় কিনা, তা সরকারের বিবেচনা করা দরকার। তাহলে বর্ষার উছিলা দিয়ে উন্নয়ন কর্মকান্ডে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে অর্থের অপচয় যেমন রোধ করা যাবে তেমনি দুর্নীতির সুযোগও অনেকটাই বন্ধ হবে।
তিন.
যানজট, পানিবদ্ধতা, নিরাপত্তাহীনতা, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানাবিধ সমস্যা রাজধানীবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী। এত সমস্যার মধ্যেও সারা দেশের মানুষ ঢাকামুখী। এক হিসেবে দেখা গেছে, প্রতিদিন ঢাকায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি মানুষ প্রবেশ করে। তাদের অধিকাংশই ঢাকায় থেকে যাচ্ছে। একবার ঢাকায় থেকে গেলে কেউ আর বের হতে চায় না। এর মূল কারণ, প্রশাসন থেকে সবকিছুই ঢাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। ফলে মানুষও ঢাকামুখী হচ্ছে। রাজধানীতে শিল্পকারখানা ও আবাসিক এলাকা পাশাপাশি থাকার নজির বিশ্বে খুব কমই রয়েছে। যেসব দেশের রাজধানীতে ছিল, সেসব দেশ তাদের শিল্পকারখানা রাজধানীর বাইরে সরিয়ে নিয়েছে। এর উল্টোচিত্র দেখা যায় ঢাকায়। এখানে প্রতি বছর পুরনো শিল্পকারখানার পাশাপাশি কোন না কোন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠে। এমন কোন শিল্পকারখানা নেই যা, রাজধানীতে গড়ে উঠছে না। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে প্রায়ই শুনি ঢাকার উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এমনকি তেজগাঁও-মহাখালি এলাকাকে ম্যানহাটনের মতো গড়ে তোলার কথাও বলা হয়েছে। এসব পরিকল্পনা কবে শুরু হবে, তার কোন নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হয়নি। তবে অনেক অপরিকল্পিত কর্মকান্ডের মধ্যেও যানজট নিরসনের জন্য পাঁচটি ফ্লাইওভার গড়ে তোলা হয়েছে। শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব ফ্লাইওভার নির্মিত হয়েছে ঠিকই, এগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এখন এসব ফ্লাইওভারও যানজট নিরসন করতে পারছে না। বরং যানজট এখন নিচ থেকে উপরে উঠে গেছে। আবার রাজধানীর সৌন্দর্যের তিলক হিসেবে হাতিরঝিল গড়ে তোলা হয়েছে। এখন এই হাতিরঝিল হয়ে উঠেছে নানা ধরনের অপকর্মের আখড়া। অর্থাৎ নানা সমস্যার মধ্যেও যেসব স্থাপনা গড়ে উঠছে, সেগুলো যেন গড়ে তোলার জন্যই গড়ে তোলা হয়েছে। আমাদের মতো উন্নয়নকামী একটি দেশে শুধুমাত্র যানজটের কারণে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়। কোনো কোনো পরিসংখ্যানে আরও বেশি ক্ষতি হয়। এ নিয়ে নীতিনির্ধারকদের কোন মাথাব্যাথা আছে বলে মনে হয় না। যানজট নিরসন করে এ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া কি খুব কঠিন কাজ? বছরের পর বছর এই আর্থিক ক্ষতি কি মেনে নেয়া যায়? অথচ যানজট নিরসনের বিষয়টি যদি সরকার সিরিয়াসলি নেয়, তবে এ সমস্যার সমাধান করা কোন অসম্ভব কাজ নয়। প্রয়োজন ড্র্যাস্টিক অ্যাকশন। যানজটের কারণে এক কিলোমিটার যেতে প্রায় তিরিশ-চল্লিশ মিনিট চলে যায়। রাস্তার দুই পাশের ফুটপাত থেকে দোকানপাট উচ্ছেদ করে হকারমুক্ত করা হলে এ পথটুকু যেতে সিগনালের সময়সহ লাগার কথা ১০ মিনিট। রাজধানীর যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ রিকশা। গতিশীল যানবাহনের সাথে ধীরগতির এই রিকশা চলার কারণে যানজট লেগেই থাকে। রিকশা চালকদের মধ্যে কোন নিয়ম-কানুনের বালাই নেই। পুরো রাস্তা জুড়ে যেভাবে খুশি সেভাবে রিকশা হাঁকিয়ে চলেছে। এ ব্যাপারে ট্র্যাফিক পুলিশকে কোন দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় না। ভিআইপি সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে অবাধে রিকশা চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। রিকশার এই অবাধ চলাচলের কারণে নিত্যদিনের যানজট আরও তীব্র ও অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এর কি কোন প্রতিকার নেই? যানজট নিরসনে সরকারের তরফ থেকে গণপরিবহণ বৃদ্ধির কথা প্রায়ই বলা হচ্ছে। নতুন নতুন বাস নামানোর কথাও বলা হয়েছে। অথচ বাস্তবে তার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। উল্টো যানজট এবং মেট্রোরেলের নির্মাণযাজ্ঞের কারণে সড়ক বেহাল হয়ে পড়ায় যানজট অসহনীয় হয়ে উঠেছে। ট্রিপ কমে যাওয়ায় বেসরকারি যাত্রী পরিবহণ কোম্পানিগুলো তাদের বাসের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যাত্রীদের চলাচল করতে হচ্ছে। অর্থাৎ রাজধানীতে মানুষের স্বচ্ছন্দ চলাচলের কোন যোগাযোগ ব্যবস্থাই আজ পর্যন্ত করা যায়নি। একটি রাজধানীতে বিশুদ্ধ পানির সংকট, গ্যাস সংকট, যোগাযোগ সংকট, নিরাপত্তাহীনতা-এতসব সংকট যদি বছরের পর বছর চলতেই থাকে, তবে রাজধানী কিভাবে বাসযোগ্য হবে?
চার.
রাজধানীকে বলা হয় দেশের মস্তিষ্ক, আত্মা বা প্রাণস্পন্দন। মস্তিষ্ক বা হার্ট ভাল না থাকলে মানুষ যেমন ভাল থাকতে পারে না, তেমনি রাজধানী ভাল না থাকলে দেশও ভাল থাকতে পারে না। রাজধানীকে সুস্থ, বাসযোগ্য ও পরিপাটি করে গড়ে তুললে তার প্রতিক্রিয়া দেশে-বিদেশে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে রাজধানীকে বাসযোগ্য ও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। একটি মধ্যম আয়ের দেশের রাজধানী কেমন হয়, তা বিবেচনায় নিয়ে এখন থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পরও যদি তার প্রতিফলন রাজধানীর চিত্রে দেখা না যায় এবং অবাসযোগ্যই থাকে, তবে বিশ্ব ও দেশের মানুষের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য হবে না। সরকার ও রাজধানী কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়টি মাথায় নিয়েই নগরায়ণ ও নগর পরিকল্পনা, জনসংখ্যা ও বাসস্থান, পরিবহন ও যোগাযোগ, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, সুশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও নগরের সক্ষমতা, অর্থনীতি ও বিনিয়োগ, নগর পরিবেশ ব্যবস্থাপনা এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য- এসব বিষয়গুলো পরিকল্পিতভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ঢাকাকে বাঁচাতে হলে এসব বিষয় বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। শিল্পকারখানা ও আবাসিক এলাকার পাশাপাশি অবস্থান কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশ্বের কোথাও রাজধানীতে এমন দৃশ্য দেখা যায় না। ভারি শিল্পকারখানা, গার্মেন্ট ও কেমিক্যাল কারখানা সরিয়ে বিকল্প শিল্পপার্কে স্থানান্তরের মাধ্যমে ঢাকাকে ভারমুক্ত করতে হবে। বিকেন্দ্রিকরণ করতে হবে। বিকেন্দ্রিকরণের মাধ্যমে বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরগুলোতে রাজধানীর মতো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। এতে ঢাকামুখী মানুষের ঢল যেমন কমবে, তেমনি ঢাকার উপর থেকে চাপ কমাসহ নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ণের কাজও সহজ হবে। ঢাকাকে কোনভাবেই অবাসযোগ্য, অচল বা মৃত নগরে পরিণত হতে দেয়া যাবে না।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।