পবিত্র লাইলাতুল বরাত
![img_img-1719945080](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678112525_editorial-inq.jpg)
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রতিষ্ঠিত জ্বালানি তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি এখনো দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার। এই রিফাইনারির বাণিজ্যিক উৎপাদনশীলতার আয়ুষ্কাল আরো ২০-২৫ বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। এর বিশাল অবকাঠামো প্রকল্পের আধুনিকায়ন, সংস্কার ও সম্প্রসারণের সুযোগ থাকলেও ৫৩ বছরের পুরনো রিফাইনারিটিকে কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালানোর পন্থা গ্রহণ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে শিল্পায়ন, নগরায়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কলেবর বৃদ্ধির সাথে সাথে জ্বালানি তেলের চাহিদা বহুগুণে বৃদ্ধি পেলেও নতুন তেল পরিশোধনাগার নির্মাণ বা পুরনো রিফানারিটিকে সম্প্রসারণ ও যুগোপযোগী করে তোলার প্রয়োজনীয়তা অগ্রাহ্য করে বিদেশ থেকে বেশি দামে পরিশোধিত তেল কেনার দিকেই সংশ্লিষ্টদের বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এতে বছরে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হলেও একশ্রেণির ক্ষমতাধর মধ্যস্বত্বভোগী নিজেদের স্বার্থে নতুন রিফাইনারি স্থাপন, পুরনো রিফাইনারির সংস্কার ও সম্প্রসারণের বদলে সরকারকে বেশি দামে রিফাইন্ড অয়েল কিনতে বাধ্য করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইস্টার্ন রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ প্রতিবছরই মেরামত বাবদ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে তেল পরিশোধন ব্যয় বাড়িয়ে চলেছেন, যদিও এই রিফাইনারি দিয়ে এখন দেশের চাহিদার এক-চতুর্থাংশও পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
দেশে বর্তমানে বার্ষিক জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৫৫ লাখ মেট্টিক টন। প্রতিষ্ঠার সময় থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারির তেল পরিশোধন ক্ষমতা বছরে ১৫ লাখ টন হলেও বর্তমানে তার ক্ষমতা ১২ লাখ টনে এসে দাঁড়িয়েছে। আরো বহু আগেই এর দ্বিগুণ ক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় ইউনিট চালুর উদ্যোগ নেয়া যেত, যা দেশের সামগ্রিক চাহিদা পূরণে সক্ষম। কিন্তু অনেক দেরিতে হলেও ২০১০ সালে ৩০ লাখ মেট্টিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে গত ১১ বছরেও এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি হয়নি। ১৯৬৮ সালে ফরাসি কোম্পানি টেকনিপের কারিগরি সহায়তায় ইর্স্টান রিফাইনারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দ্বিতীয় ইউনিটের নকশা ও কারিগরী প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৭ সালে সেই টেকনিপের সাথেই চুক্তি করা হয়েছিল। গত চার বছরেও সে চুক্তির অগ্রগতি না হওয়া সন্দেহজনক ও বিস্ময়কর। আমলাতন্ত্রের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা রাষ্ট্রবিরোধী এজেন্ট ও জনস্বার্থবিরোধী শক্তি এমন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার প্রাপ্য প্রকল্পের বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট প্রকল্প গ্রহণের শুরুতে এর প্রাক্কলন ব্যয় ১৩ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ২০ হাজার কোটি টাকার উপরে দাঁড়িয়েছে। এক দশকেরও আগে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও আর্থ-কারিগরি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মতো প্রাথমিক স্তরে সময় ক্ষেপণ করে রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের কাজকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নানামুখী তদবিরের খেলা এবং পরামর্শক ভারতীয় কোম্পানি ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেডসহ বেশ কয়েকটি চক্র এই প্রকল্প ঘিরে তেলেসমাতি কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বলে কেউ কেউ বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
কোটি কোটি মানুষের শ্রমে দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে। দেশের অর্থনীতির প্রধান দুই খাত কৃষি ও শিল্পের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে জ্বালানি তেল বা পেট্টোলিয়াম। জেট ফুয়েল, অকটেন, পেট্রোল, কেরোসিন, ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, লুবঅয়েল থেকে শুরু করে ১৭ ধরনের পেট্রোলিয়াম উপজাত তৈরি হয় রিফাইনারিতে। এসব রিফাইন্ড তেল ও উপজাত পুরোটাই বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়। সউদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের ভ্রাতৃপ্রতিম দেশগুলো থেকে কম দামে বিশেষ রেয়াতে ক্রুডঅয়েল আমদানি করে নিজস্ব রিফাইনারিতে রিফাইন্ড করে এসব পেট্রোলিয়াম ও তার মূল্যবান উপজাতসমূহের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোতে রফতানিরও সুযোগ ও সম্ভাবনা বাংলাদেশের রয়েছে। দেশে পদ্মাসেতু, মেট্টোরেলের মতো মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন দ্রুত এগিয়ে চলেছে। দেশের জ্বালানি চাহিদা ও জ্বালানি নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে দেশের একমাত্র রিফাইনারির সংস্কার ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ এসব মেগা প্রকল্পের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এমন এক উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বছরের পর বছর ধরে ঠেকিয়ে রেখে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকার অপচয় ও জ্বালানি খাতে পরনির্ভরশীল করে রাখার নেপথ্যে যারা সক্রিয় রয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। ইতোমধ্যে একাধিক বেসরকারি কোম্পানি নিজস্ব তেলশোধনাগার স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। দেশের একমাত্র সরকারি রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট সম্প্রসারণ হলে সন্দেহাতীতভাবে দেশ লাভবান হবে। কাজেই স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতির দুষ্টচক্রকে পরাস্ত করে সরকারকে দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের কাজ দ্রুত শুরু করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।