Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফরাসিদের হৃদয় ভেঙে সুইস রূপকথা

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২১, ১১:৪৬ পিএম

এত নাটক, এত রোমাঞ্চ বোধ হয় কোনো গল্পকারও লিখতে পারবেন না। এত কিছু বোধ হয় ফুটবলেই সম্ভব। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে সুইজারল্যান্ডকে ম্যাচের আগে খুব বেশি কেউ গোনায় ধরেননি। সেই সুইজারল্যান্ড দুই গোলে পিছিয়ে থেকে শেষ মুহ‚র্তে গোল করা সমতা ফেরাল নির্ধারিত সময়ে। খেলা গড়াল টাইব্রেকারে, সেখানে প্রথম চার কিক সমতায় থাকার পর শেষ কিকটা মিস করলেন কিলিয়ান এমবাপে, আর তাতেই সুইজারল্যান্ড উঠে গেল কোয়ার্টার ফাইনালে। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ স্পেন। আর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স বিদায় নিল দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই।
এ ফুটবলে একটা ম্যাচ কী কী হওয়া সম্ভব? যা হতে পারে, তার অনেক কিছুই হয়েছে এই ম্যাচে। পেনাল্টি মিস হয়েছে, গোলের পর গোল হয়েছে, এর মধ্যে দুর্দান্ত গোলও হয়েছে, হয়েছে শেষ সময়ের গোলের নাটক এবং শেষ পাতে দইয়ের মতো টাইব্রেকার। আর হয়েছে অঘটন, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে স্তম্ভিত করে যে কাজটা করেছে সুইসরা। আগের ম্যাচে আগের থ্রিলারে ক্রোয়েশিয়া বিদায় নিয়েছিল, এই ম্যাচে ফ্রান্সের বিদায় হলো আরও নাটকীয়। একই দিনে বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট বিদায় নিল, আর সুইজারল্যান্ড ১৯৫৪ সালের পর প্রথম কোনো বড় আসরের কোয়ার্টারে উঠে গেল।
সিজারল্যান্দ শুরুটা করেছিল স্বপ্নের মতো। জুবেরের ক্রস থেকে হারিস সেফেরোভিচের হেডে যখন সুইসরা এগিয়ে যায়, তখন ম্যাচের আয়ু মাত্র ১৫ মিনিট। ৩-৪-৩ ফর্মেশনে খেলতে নামা ফ্রান্স পুরো প্রথমার্ধে নিজেদের হারিয়ে খুঁজেছে। বলার মতো একটা আক্রমণও করতে পারেনি, সুইজারল্যান্ডের গোলে কোনো শটও ছিল না। বরং সুইসরাই এগিয়ে যাওয়ার আর এক দুইটি সুযোগ পেয়েছিল। এগিয়ে থেকেই শেষ করে প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য সবকিছু জাদুমন্ত্রের মতো বদলে যায়। শুরুটা হয় ৫৪ মিনিটে, বেঞ্জামিন পাভাড পেনাল্টি বক্সের ঠিক ওপর ফাউল করলে সেটা প্রথমে এড়িয়ে গিয়েছিলেন রেফারি। কিন্তু ভিএআরের পর বদলে যায় সিদ্ধান্ত। রিকার্দো রদ্রিগেজ আগের তিনটি পেনাল্টিই মিস করেছিলেন, এটি নেওয়ার আগে বেনজেমা কানে কানে কী যেন বলে গিয়েছিলেন হুগো লরিসের। অবিশ্বাস্যভাবেই রদ্রিগেজের পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিলেন লরিস।
সেটাই যেন ফ্রান্সকে জাগিয়ে দিল। বেনজেমা এরপর এমবাপের পাস থেকে বল পেয়ে গোল করলেন। মিনিট দুয়েক পর গ্রিজমানের ক্রস থেকে হেড করে বেনজেমার আরেকটি গোল। মিনিট চারেকের মধ্যে টালমাটাল সুইজারল্যান্ড। খেলা তখন ফ্রান্সের কাছেই ছিল। কোমান লেংলের বদলে নামতে পুরনো ফর্মেশনে ফিরে খেলাটাও যেন ফিরে পেল তারা। এ রমধ্যে ৭৫ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় পল পগবার গোলার মতো শটের গোলটা মনে হয়েছিল যথেষ্ট। ফ্রান্স তখন পরের রাউন্ডের অপেক্ষায়।
কিন্তু খেলাটা যে ফুটবল! ৮১ মিনিতে আরেকটি হেড করে সেফেরোভিচ করেন দ্বিতীয় গোল। কিন্তু যোগ করা সময়ে এসে ফ্রান্সের আরেকটি ধাক্কা। এবার দারুণ একটা আক্রমণ থেকে গাভ্রানোভিচ গোল করে সমতা ফেরান। ম্যাচ গেল অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও এগিয়ে যাওয়ার আরও সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল ফ্রান্স,। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি এমবাপে। কোমানের একটা শটও ফিরে আসে পস্টে লেগে। সুযোগ পেয়েছিল সুইসরাও, কিন্তু গোল হয়নি। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
সেখানেও দুই দলের প্রথম চারটি করে শটে সবগুলো গোল। কেউ কোনো ভুল করলেন না, লরিস একবার হাত লাগালেও ঠেকাতে পারেননি। ফ্রান্সের হয়ে পগবা, কিম্বেপম্বে, থুরাম, জিরুরা কাজ করে গেছেন ঠিকঠাক। ওসিকে সুইসরাও গোল দিয়েছে সব। শেষটা নিতে এলেন এমবাপে, কিন্তু মিস করলেন। সেটাই লিখে দিল ফ্রেঞ্চদের এপিটাফ। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের আর ইউরো জেতা হলো না।।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউরো


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ