Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুস্বাদু আম

| প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০২১, ১২:০৫ এএম

আম বাংলাদেশের মৌসুমী ফল। সারা বাংলাদেশের বাড়ি ঘরের আশে পাশে, পথে ঘাটে, সড়কে আম গাছ দাড়িয়ে ছায়া ও ফল প্রকৃতির মানুষকে উজাড় করে দিয়ে বাঁচিয়ে রাখছে। রসালো আম ফল ছোট বড় সকলের নিকট প্রিয় খাবার। পাকা আম স্বাদে গন্ধে ও পুষ্টিতে অতুলনীয়। তাই আমকে দেশীয় ফলের রাজা বলা হয়। ফল হলো ভিটামিনের নির্ভরযোগ্য উৎস। তাই শরীরের ফলের বলকারক প্রভাব আছে। আমাদের শরীরের অম্ল-ক্ষারের সমতা বজায় রাখতে ফল খুবই উপকারি ভূমিকা পালন করে। অম্ল সৃষ্টিকারী খাদ্য বেশী পরিমাণে খাওয়ার জন্য শরীরে যে বিষাক্ত অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে ফল প্রশমিত করে এবং ক্ষারতা ফিরিয়ে আনে। এটি শরীরের বর্জ্য পরিস্কার করতে সাহায্য করে এবং শরীরের প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক চিনি, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের যোগান দেয়। ফলের আঁশ জাতীয় পদার্থ সেলুলোজ, পোষ্টিক নালীতে খাদ্যবস্তুর সহজ চলাচলে সাহায্য করে এবং পেটের মল বের করে দেয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হয় না।

পরিচিতি: আম গাছ চির সবুজ বৃহৎ বৃক্ষ জাতীয় গাছ। ১৫-২০ মিটার উচ হয়। ফুল মনোসিয়াম, ক্ষুদ্রকার হলুদ এবং লম্বা প্যানিকেলে অবস্থিত। ফল ড্রপ জাতীয় বৃহৎ মাংসল আঁশ যুক্ত কাচা শক্ত পাকায় রসালো হয়।
রাসায়নিক উপাদান: পাতায় থাকে পলিফেন জ্যান্থোন, ম্যাঙ্গিফেরিন, আইসোম্যাঙ্গিফেরিন, ফেনলিকস ও খনিজ পদার্থ। এতে আরো থাকে পেন্টাসাইক্লিক টার্পিন, ইন্ডিকল, চিনি, দুইটি হাইড্রোকার্বন, বিটা সিটোস্টেরল ও গ্লাইকোসাইডিক পদার্থ। ফলে থাকে ভিটামিন এ, বি, সি, ডি, খনিজ পদার্থ ও ফলিক এসিড। বাকলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ট্যানিন।

ফলের পুষ্টি উপাদান: পাকা আমে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ পাওয়া যায়। তাছাড়া প্রায় সব ধরণের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। পুষ্টিবিদদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে পুষ্টি উপাদান নিম্নরূপ: ভিটামিন-এ ৮৩০০ মাইক্রোগ্রাম, খাদ্যশক্তি ৯০ কিলোক্যালরি, আঁশ ১.৫ গ্রাম, প্রোটিন ১.০০ গ্রাম, চর্বি ০.৩৮ গ্রাম, কর্বোহাইড্রেট ২০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম, আয়রণ ১.৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.১০ মিলিগ্রাম, বি-২ ০.৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৪১ মিলিগ্রাম, শর্করা ২০ গ্রাম, স্নেহ ০.৭ মিলিগ্রাম। তাছাড়া প্রতি আমের তার ওজনের প্রায় ৮০ ভাই পানি থাকে।

উপকারিতা : আমকে বলা হয় ফলের রাজা। তেমনি স্বাদে গন্ধে ও পুষ্টি গুণে আমের জুড়ি নেই। কাঁচা, পাকা দুই ধরণের আমই শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ পাওয়া যায়। এই ভিটামিন ছোট বড় সবার শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। যা আমাদের রাতকানা রোগ ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে বিরাট ভ‚মিকা পালন করে। ভিটামিন এ এর অভাবে শরীরের চামড়া শুকিয়ে যায়, খসখসে হয়, মুখের উজ্জ্বলতা কমে যায়। ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় এবং সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা কমে যায়। শারীরিক বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

অপরদিকে ভিটামিন সি এর অভাবে ঘনঘন সর্দি কাশি হয়। দাঁতের মাড়ি নানা রোগে আক্রান্ত হয়। রক্ত শূণ্যতা দেখা দেয়, শরীর দুর্বল হয়, চামড়ার সৌন্দর্য নষ্ট হয়, চর্মরোগে আক্রান্ত হয় এবং শরীরের ঘা শুকাতে দেরি হয়। সুতরাং মৌসুমী ফল আম খেয়ে দেহের এ ধরণের সব অভাব দূর করা যায়।

আমে প্রি-বাটোটিক ডায়াটোরি ফাইবার খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সমৃদ্ধ ফল। এ এ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান স্তন, কোলন, প্রোটেস্ট ক্যানিসারের ঝুঁকি কমায়। তাছাড়া বিটা ক্যারোটি, আলফা ক্যারোটিন নামক ফ্যাভিনয়েডসের ভালো উৎস আম। এ ফলটি আমাদের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে এবং চোখের নানা রোগের আক্রমণ থেকে মুক্ত রাখে। প্রাকৃতিক ফলে বিদ্যমান ক্যারোটিন উপাদান থাকে যা গ্রহণ করলে ফুসফুস ও মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

আমে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীরের রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। আমের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই যা চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

আমে ভিটামিন বি-৬ বা পাইরিডক্সিন উপাদান থাকে। এই উপাদান মানুষের মস্তিষ্কের গাবা নামক এক ধরণের হরমোণ তৈরি করে যা স্ট্রোক ও মস্তিষ্কের জটিল রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। আমে কপার নামের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা দেহের রক্ত তৈরি সাহায্য করে। বিশেষ করে রঙিন ফলে লাইকোপেট আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরে রোগ সৃষ্টিকারী টক্সিন নামক বিষাক্ত পদার্থ দেহ থেকে বের করে দেয়। ফলে শরীর সুস্থ ও সবল থাকে।

ঔষধী গুণাগুন: * করোনা মহামারিতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিনিধি নিয়মিত পরিমাণ মত আম খান দেহ সুস্থ্য ও সবল হবে। * যাদের পায়খানা শক্ত হয় বা মলের পরিমাণ কম হয় তারা নিয়মিত আম খান উপকার পাবেন। * যাদের হজমে সমস্যা হয় তারা দিনের বেলা আম খান উপকার পাবেন। * যাদের দেহে রক্তের পরিমাণ কম তারা দিন দুপুরে আম খান আর রাতের বেলায় কিছমিছ খান উপকার পাবেন। * যাদের দেহে ক্লোস্টোরেলের সমস্যা আছে তারা আম খান খারাপ ক্লোস্টোরেলের ক্ষতিকর মাত্রা কমে আসতে সাহায্য করে। * নিয়মিত আম খেলে চেহারায় বয়সের চাপ পড়ে না। * আম রক্তের গ্লুকোজ কমাতে সাহায্য করে। * যাদের শরীরে রোগারোগা রক্ত স্বল্পতা রয়েছে তারা নিয়মিত পাকা আম খান। দেহে আয়রণের সমস্যা দূর হবে। শরীর সুস্থ্য থাকবে। * যাদের চামড়ায় ঘনঘন রোগ হয় তারা নিয়মিত পাকা আম খান ভালো উপকার পাবেন। * গর্ভবর্তী মায়েরা নিয়মিত পাকা আম খান নিজের এবং সন্তানের খুবই উপকার হবে। * যেসব মহিলাদের বয়স ৪৫ বছরের উপরে এবং যাদের মনোপেজ হয়ে গেছে বা মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে তারা নিয়মিত পাকা আম খান, দেহের সুস্থ্যতা বজায় থাকবে। * আমের পুষ্টি বিভিন্ন উপাদান বিভিন্ন স্ট্রোকের প্রতিরোধক। যা রক্তের হেমোসিসটিন এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এই উপাদানটি রক্তের ধমনি ও শিরার জন্য খুবই ক্ষতিকারক। * আমের ভিটামিন সি পেকটিন এবং ফাইবার কোলেস্টোরেলের মাত্রা কমিয়ে রাখে। * তরতাজা আম পটাশিয়ামের উৎস। যা কোষ ও রক্ত প্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উহা দেহের রক্তের চাপ ও হৃদপিন্ডে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। * আমে প্রচুর পরিমাণে গ্লুটামিন এসিড থাকে। যা নিয়মিত খেলে স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। * অতিরিক্ত গরম লাগলে এক গ্লাস পাকা আমের জুস খান অতি অল্প সময়ে শরীরে ঠান্ডা চলে আসবে। এতে হিটস্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। * আম শরীরের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কপার, পটাশিয়াম, সেলেনিয়াম ও জিংক প্রভুতি দেহের চাহিদা পূরণ করে দেহকে সুস্থ ও সবল রাকে।

ফল খাওয়ার পর পানি খাওয়া উচিত নয়: ফল খাওয়ার পর হজমের জন্য যে এনজাইম নিঃসরণ হয় পানি খেলে তা পানির সাথে মিশে যায়। ফলে পেটে কার্বন-ডাই-অক্সাইড অ্যালকোহল তৈরি হয় যা গ্যাস ও পেট ফাপার অন্যতম কারণ। বিশেষ করে আম, কলা, পেঁপে, আনারস, তরমুজ, স্ট্রবেরী ফল খেয়ে কমপক্ষে ৩০ মিনিট পর পানি খাবেন।

সতর্কতা: * কিডনী রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আম খাবেন না। * যারা অতিরিক্ত মোটা তারা আম কম খাবেন। * ডায়রিয়া চলাকালে আম খাবেন না। * আম কেটে বেশিক্ষন খোলা রাখবেন। কাটার পরপরই খেয়ে নিবেন। * ডায়বেটিস রোগী অল্প পরিমাণে আম খান। অতিরিক্ত মিষ্টি আম খাবেন না। তবে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ মতে আম খাবেন। * আম অবশ্যই দিনের মধ্যভাগে খাওয়া ভালো রাতের বেলায় খাবেন না, এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। নিয়মিত পরিমাণমহ মৌসুমী ফল খান সুস্থ থাকুন।

মো: জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুস্বাদু আম

২৫ জুন, ২০২১
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ