পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত এক দশক ধরে দেশের উন্নয়ন ও ডিজিটালাইজেশন নিয়ে অনেক রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণা চলছে। বিশ্বের ১৪০টি শহরের মধ্যে বাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকার অবস্থান ১৩৭। অন্যদিকে ইন্টারনেটের গতির ক্ষেত্রেও একই রকম চিত্র দেখা যাচ্ছে। ইন্টারনেটের গতির দিক থেকে বিশ্বের ১৩৭ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৪তম। এমনকি সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া-ইয়েমেনে ইন্টারনেটের গতি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত,পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, নেপাল ও মালদ্বীপে ইন্টারনেটের গতি ও পরিষেবার মান বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ভাল। বিশ্বের দেশগুলোতে ইন্টারনেটের গতি নিয়ে কাজ করা স্পিডটেস্ট ইনডেক্সের এবারের জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। বহু বছর ধরে বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন মিয়ানমারের অবস্থান যেখানে ৮৮তম, ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের অবস্থান ৪৫তম, সেখানে দশক ধরে ডিজিটালাইজেশনের শ্লোগান ধরা বাংলাদেশের অবস্থান আফ্রিকার ইথিওপিয়া, সোমালিয়া বা উগান্ডার চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে। উন্নয়ন ও অর্থনৈতিকভাবে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার সরকারের জন্য এটা অপ্রত্যাশিত ও লজ্জাজনক বিষয়।
করোনা পেন্ডেমিক আমাদের ডিজিটালাইজেশনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলার গতি অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। করোনা লকডাউনে গৃহবন্দী মানুষ অফিসের কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাড়িতে বসে করাসহ নিত্য প্রয়োজনের প্রতিটি ধাপেই ইন্টারনেট নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় ডিজিটাল বাংলাদেশের যে লক্ষ্য ২০২৪-২৫ সালে অর্জনের কথা তা ২০২০ সালেই অর্জিত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। ইন্টারনেট পরিষেবাকে অতি সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার কৃতিত্ব দেশের মোবাইল অপারেটর কোম্পানীগুলোর। তারা দেশের ৯৫ শতাংশ এলাকাকে মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। সেই সাথে ইন্টারনেটের গতির ক্ষেত্রে তঞ্চকতা ও জনদুর্ভোগের অভিযোগও এসব মোবাইল অপারেটরদের বিরুদ্ধে উঠেছে। মোবাইল অপারেটর কোম্পানীগুলোর ইন্টারনেটর পরিষেবা ও গতি নিশ্চিত করার দায়িত্ব মূলত নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র। বিটিআরসি সে দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে। মোবাইলফোন অপারেটর কোম্পানীগুলো থ্রিজি-ফোরজি গতির ইন্টারনেট পরিষেবা দেয়ার জন্য স্পেক্ট্রাম বরাদ্দ নিলেও রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় টুজি গতিতে চলছে ইন্টারনেট। ডিজিটাল বাংলাদেশ সরকারের একটি অগ্রাধিকারভিত্তিক রূপকল্প হওয়ায় বিটিআরসি’র বাজেট বরাদ্দ নিয়ে সরকারের কোনো কার্পণ্য নেই। ব্রডব্যান্ড অপারেটিং সিস্টেমে ইন্টারনেটের গতি তুলনামূলক সন্তোষজনক হলেও দেশের সব অঞ্চলের সব মানুষের হাতে তথ্যপ্রযুক্তির সেবা ও সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দিতে হলে মোবাইল ফোন অপারেটরদের ঘোষিত ফোর-জি, ফাইভ-জি গতি নিশ্চিত করতে হবে। এখন ইন্টারনেটসেবা এতটাই ধীর যে যথাসময়ে কাজ করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। মোবাইলে ডাটা কিনে তা ব্রাউজ করতে করতেই শেষ হয়ে যায়। এর ফলে ব্যবহারকারির কাজ সমাপ্ত করতে না পারলেও মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো ঠিকই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। এছাড়া কত ডাটা কত সময় ধরে ব্যবহার করা হয়েছে তার সঠিক হিসাবও পাওয়া যায় না। ফলে মোবাইল কোম্পানিগুলো ব্যাপকভাবে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে নিচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এখন বিশ্বের সবকিছুই ইন্টারনেটভিত্তিক হয়ে পড়েছে। এই মহাসড়কের মাধ্যমেই যাবতীয় কার্যক্রম সাধিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে ইন্টারনেটের গতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেখা যাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে। আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছি বলা হলেও ইন্টারনেটের যে মহাসড়ক তার ধারেকাছেও যেতে পারছি না। অথচ উন্নয়নের জন্য এই মহাসড়কই এখন অন্যতম প্রধান পথ হয়ে রয়েছে। এ থেকে পিছিয়ে থাকা অর্থ উন্নয়ন থেকেও পিছিয়ে পড়া।
করোনাকালে দেশের অর্থনীতি অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষা কারিকুলাম, টেলিমেডিসিন, অনলাইন মার্কেটিং, অনলাইন ব্যাংকিং, ই-কর্মাস, সরকারি তথ্য পরিষেবা ও ই-গর্ভনেন্সসহ প্রতিটি বিষয়ের মান ও বিশ্বস্ততা ইন্টারনেটের গতির উপর নির্ভর করছে। আমাদের শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে থাকলে, যানজটের কারণে গণপরিবহণের গতি পায়ে হাঁটার গতির সমান হলে যেমন কেউ এ দেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে না, একইভাবে তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেটের গতির দিক থেকে ২০ বছর পিছিয়ে থাকলে বিনিয়োগ ও ব্যবসা করতে আগ্রহী হবে না। টেকসই উন্নয়নের অর্থই হচ্ছে, বাসযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন ও নগরায়ণ এবং গতিশীল, নিরাপদ রাস্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইন্টারনেটের গতি ও সহজলভ্যতা এখন উন্নয়নের অন্যতম মানদণ্ড হয়ে উঠেছে। তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির সম্প্রসারণ নিয়ে কথার ফুলঝুরি ছড়ানোর পর যদি সোমালিয়া-ইথিওপিয়া-উগান্ডার চেয়ে পিছিয়ে থাকে, তবে তা লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রতিশ্রুতি ও সেবার মানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সেই সাথে দেশের আইজিডাব্লিউ, আইএসপি সহ ইন্টারনেট পরিষেবার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাজে সমন্বয় ও সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা জরুরি। করোনাকালের অনিশ্চিত সময়ে সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, কৃষক, ব্যবসায়ী, ফ্রি-ল্যান্সার থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টর ও বিভাগের কর্মকাণ্ডের মানোন্নয়ন ও সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতির অন্যতম ভিত্তি এখন নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট পরিষেবা ও গতির উপর নির্ভরশীল। এ ক্ষেত্রে গতি বাড়ানোর বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।