Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গণমুখী এই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

সরকার গত রোববার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানানো হয়েছে, পরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এ সম্পর্কিত আদেশ জারি করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন বিষয়ক জাতীয় টাক্সফোর্সের তৃতীয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে আরো কতিপয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে টার্মিনাল ছাড়া যানবাহনে চাঁদা আদায় বন্ধ, মোটর সাইকেলে দু’জনের বেশি লোক ওঠা বন্ধ, পরিবহন শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। স্মরণ করা যেতে পারে, এসব সিদ্ধান্ত এই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন আইন ও আদেশে সিদ্ধান্তগুলো ঘোষিত হয়েছে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, কোনো সিদ্ধান্তই যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান ইত্যাদি সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির একটা বড় কারণ। এসব যান বড় শহর ও সড়ক-মহাসড়কে চলাচলের অনুপযুক্ত। হরহামেশাই এগুলো উল্টে কিংবা বড় কোনো দ্রুতযানের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটাচ্ছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যানসহ রূপান্তরকৃত যানবাহন চলাচল অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ২০১৮ সালে প্রণীত সড়ক পরিবহন আইন ও ১৯৮৩ সালের মোটর ভেহিক্যালস অর্ডিনেন্সে। এছাড়া হাইকোর্ট ২০১৪ সালে ধীরগতির এবং স্টেবল নয়, এমন যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপের নির্দেশনা দেন। সে মোতাবেক সরকার ২০১৫ সালে সব ধরনের ত্রিচক্রযান এবং অযান্ত্রিক যান চলাচল দেশের ২২টি মহাসড়কে নিষিদ্ধি করে। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলও এ ধরনের যান চলাচল অবৈধ করেছে। প্রশ্ন হলো, এতকিছুর পরও কি ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান, ত্রিচক্রযান, ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, ভটভটি চলাচল কোথাও বন্ধ হয়েছে? খোদ রাজধানী এবং দ্বিতীয় প্রধান শহর চট্টগ্রামে এসব নিষিদ্ধ যানবাহন অবাধে চলাচল করছে। মহাসড়কগুলোতেও এসব যানবাহন পাল্লা দিয়ে চলাচল করছে। কেউ আইন-আদেশ মানছে না। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও নিশ্চুপ।

শহরের রাস্তাঘাটে, আন্তঃজেলা সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে অবাধে চলাচল করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত রিকশা, ভ্যান এবং বিভিন্ন প্রকার যানবান। এদের মোট সংখ্যা কত হতে পারে, তার ধারণাও কেউ দিতে পারে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেদিনের বৈঠকে জানিয়েছেন, ঢাকা শহরে সম্প্রতি ১৩ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা ধ্বংস করা হয়েছে। এতে কতকটা আন্দাজ করা যায়, ঢাকা শহরে এর সংখ্যা কত হতে পারে। যারা দেশের বিভিন্ন অংশে প্রায়শই যাতায়াত করেন বা ভ্রমণ করেন, তারা সাক্ষ দেবেন, এ ধরনের নিষিদ্ধ যানের একটা সয়লাব দেশে তৈরি হয়েছে। যাতায়াতে গতি মন্থরতা, যানজট, দুর্ঘটনা বৃদ্ধিতে এসব যানের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এ নিয়ে সব সময়ই বিভিন্ন মহলে কথাবার্তা হয়। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আইন-আদেশসহ এসব কথাবার্তায় কাজ না হওয়ার প্রধান কারণ, সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের অনেকে এসব নিষিদ্ধ যানের মালিক, অনেকে পৃষ্ঠপোষক। তাছাড়া এ থেকে বড় অংকে চাঁদা আদায় হয়। সরকারি দলের নেতাকর্মীরা তা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। এটা তাদের অনেকেরই আয়ের প্রধান উৎস। অনেকেরই মনে থাকার কথা, নির্বাচনের আগে সকল অবৈধ ও নিষিদ্ধঘোষিত যান চলাচল বন্ধ করার গণদাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি মহল থেকে কেউ কেউ বলেছিলেন, এটা করলে নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। রাজনীতি এখানে কতটা সক্রিয়, সেটা এ থেকে হৃদয়ঙ্গম করা যায়।

দলীয় নেতাকর্মীদের স্বার্থে কিংবা ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে জনগুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কিত আইন-আদেশ-তাকিদ উপেক্ষা করার নজির কোনো মতেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। যেহেতু বিষয়টির সঙ্গে সরকারি দল ও তার নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতা বিদ্যমান, সতুরাং প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করে চলে। ফলে কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। আইন-আদেশ-তাকিদ অকার্যকর থাকায় বৃহত্তর জনস্বার্থ ব্যাহত হচ্ছে। এটা সঙ্গত কারণেই চলতে পারে না। এক্ষেত্রে ড্রাস্টিক অ্যাকশনে যাওয়ার বিকল্প নেই। অবৈধ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান ও অন্যান্য যানবাহন যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখান থেকে তুলে নিয়ে ধ্বংস করে দিতে হবে। অনেকেই কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলতে চান, বিপুল সংখ্যক চালকের এতে কর্মসংস্থান হয়েছে। এসব যানবাহন বন্ধ হলে তারা বেকার হয়ে পড়বে। তাদের পরিবার-পরিজন আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে এসে দাঁড়াবে। একথার সত্যতা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু তাই বলে, জনগণের বৃহত্তর ক্ষতি ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি বহন করা কীভাবে সম্ভব? এই সব যানচালক ও শ্রমিকের জন্য পৃথক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে তাদের আয় রোজগার আরো বাড়তে ও নিশ্চিত হতে পারে। সরকার গরুত্ব সহকারে এ দিকটি বিবেচনায় নেবে বলে আশা করি। সেইসঙ্গে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশা করি, সরকার গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন করবে।

 



 

Show all comments
  • Dadhack ২২ জুন, ২০২১, ১:৩৪ পিএম says : 0
    যতদিন না আমাদের প্রিয় দেশ আল্লাহর আইন দিয়ে চলবে না ততদিন চাঁদাবাজি থাকবে....শরীয়তের বিধান অনুযায়ী এরা হচ্ছে সন্ত্রাসী এবং সন্ত্রাসীদের শাস্তি হচ্ছে হাত এবং পায়ের বিপরীত থেকে কেটে দেওয়া....যখনই যেকোনো পার্টি ক্ষমতায় আসে তখন তারা সন্ত্রাসী পালন করে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গণমুখী সিদ্ধান্ত
আরও পড়ুন