পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কথায় বলে, খাজনার চেয়ে বাজনা বড়। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে শুরু হয়েছে এই খাজনা ও বাজনার খেলা। দেশের কোটি কোটি লোককে যখন ভোটার আইডি কার্ড দেওয়া হয় তখন এটি এনআইডি বা ভোটার আইডি কার্ড হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীকালে এটি জাতীয় পরিচয়পত্র হিসেবে আখ্যায়িত হয়। দেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে ভোটার আইডি কার্ড পৌঁছাতে যেখানে হয়নি কোনো বিড়ম্বনা, সেখানে কয়েক হাজার কার্ড সংশোধন করতে গিয়ে হয়েছে চরম বিড়ম্বনা। দেশের ৯/১০ কোটি কার্ড ইস্যু করার সময় শোনা যায়নি কোনো অভিযোগ, হয়নি কোনো ব্যক্তি হয়রানির শিকার। অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে জনগণের কাছে পৌঁছে গেছে তাদের আইডি কার্ড। অথচ এখন নামের ভুল বা বানান সংশোধন করতে গিয়ে মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। কেন এই দুর্ভোগ? কারণটি সম্ভবত এই যে, ভোটার আইডি প্রণয়ন ও বিতরণ করা হয়েছিল সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। কিন্তু এখন সংশোধনীর কাজটি করা হচ্ছে বেসামরিক প্রশাসনের অধীনে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, এদেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ বিদেশে বসবাস করছেন। তাদের সকলেরই ভোটার আইডি কার্ড রয়েছে। বাংলাদেশে ২০০৬ সালের আগে ন্যাশনাল আইডির কথা কারো মাথায় ঢোকেনি। ১/১১-এর পর ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনের আধা মিলিটারি শাসনের আমলে দেশে সর্বপ্রথম ন্যাশনাল আইডি দেওয়ার কথা চিন্তা করে ওই সরকার। তারপর দ্রুততম সময়ে ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনের সরকার কোটি কোটি মানুষের হাতে এই কার্ডটি পৌঁছে দেয়। তখন শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল যে, সম্ভবত শুধু ভোট দেওয়ার জন্যই এই কার্ডটি ব্যবহৃত হবে। কিন্তু ধীরে ধীরে দেখা গেল, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ন্যাশনাল আইডি অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। জমি কিনতে গেলে লাগবে আইডি কার্ড, স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে লাগবে আইডি কার্ড, এমনকি ঢাকার বড় বড় হাসপাতালে রোগী হিসেবে ভর্তি হতে গেলেও পরিচয়পত্র লাগবে। রেজিস্ট্রেশনের সময় পরিচয়পত্র, চাকরির জন্য দরখাস্ত করার সময় পরিচয়পত্রÑ সর্বত্র এখন এনআইডি’র প্রয়োজন হয়। এটি এখন জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যও এনআইডি’র প্রয়োজন। এমনকি কয়েক মাস আগে মোবাইলের সিম কার্ড নিবন্ধনের সময়ও আইডি কার্ডের প্রয়োজন হয়, যদিও এটি ছিল একটি জবরদস্তিমূলক কাজ।
ফখরুদ্দিনের মিলিটারি নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বহু কাজ নিয়েই প্রচ- সমালোচনা করা হয়েছে। কিন্তু একটিমাত্র ভালো কাজও যদি তারা করে থাকে তাহলে সেটি হলো এই ন্যাশনাল আইডি কার্ড তৈরি করা এবং জনগণের মাঝে সেটি বিতরণ করা। এখন দেখা যাচ্ছে, নাগরিকের পাসপোর্ট যেমন তার একটি নাগরিক অধিকার, তেমনি ন্যাশনাল আইডি কার্ডও আরেকটি নাগরিক অধিকার। ফখরুদ্দিনের সরকার এটি করে গেছেন। কিন্তু তারপরেও মানুষ প্রতিদিন পরিণত বয়স্ক হচ্ছে এবং প্রতিদিন নতুন এনআইডি ইস্যু করতে হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, মিলিটারি নিয়ন্ত্রিত সরকার যে কাজটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে জনগণের জন্য কোনো বিড়ম্বনা সৃষ্টি না করেই সম্পাদন করেছে, সেই একই কাজ এখনকার বেসামরিক সরকার করতে গিয়ে হয় জনগণের জন্য দুর্ভোগের সৃষ্টি করছে, না হয় সমগ্র প্রক্রিয়াটি লেজে গোবরে করে ফেলছে। ফখরুদ্দিনের সরকার কোটি কোটি এনআইডি ইস্যু করেছেÑ সেখানে স্বাভাবিকভাবেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছোট-খাটো ভুল রয়ে গেছে। যেমন কারো পিতার নামের বানান ভুল, কারো মায়ের নামের বানান ভুল, আবার অনেক ক্ষেত্রে যার আইডি কার্ড তার নামের বানানেও ভুল রয়ে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আইডি কার্ডে প্রদত্ত জন্মতারিখ এবং এসএসসি পাস সার্টিফিকেটে প্রদত্ত জন্মতারিখে গরমিল রয়েছে। এসব গরমিল সংশোধনের জন্য আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনে নির্বাচন কমিশনের অফিস স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে এসব ভুল-ত্রুটি সংশোধন করা হয়। কিন্তু এই সংশোধন কাজে এখন মানুষকে প্রচুর হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। শুধু ঢাকা শহরেই নয়, মফস্বলের দূর-দূরান্ত থেকেও সেই সংশোধনের জন্য মানুষকে ঢাকায় আসতে হচ্ছে। অথচ সেই সংশোধন কাজ করতে শুধু দিনের পর দিন নয়, মাসের পর মাস লেগে যাচ্ছে বলে প্রচুর অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে। গতকাল দৈনিক ‘ইনকিলাবের’ প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত প্রধান সংবাদে এই দুর্ভোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। এই ছোট কাজটি করার জন্য ঢাকা শহরের একপ্রান্তের মানুষকে অপরপ্রান্ত আগারগাঁওয়ে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। কিন্তু মফস্বলের মানুষের পক্ষে এমন একটি ছোট কাজের জন্য ঢাকায় এসে দিনের পর দিন থাকা সম্ভব হয় না। তাই অনেককে কাজ অসমাপ্ত রেখেই ফিরে যেতে হচ্ছে। সেটি করতে গিয়ে অর্থ এবং সময় উভয়ের অপচয় হচ্ছে। যে কাজ দু-তিন দিনে করা সম্ভব, সেই কাজ দু-তিন মাসেও সম্পন্ন হচ্ছে না। এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শৈথিল্য এবং গাফিলতি যেমন দায়ী, তেমনি সারাদেশে একটিমাত্র অফিস অর্থাৎ আগারগাঁওয়ের অফিসে সেই কাজটি কেন্দ্রীভূত হওয়াও বহুলাংশে দায়ী।
এই সমস্যার সমাধান মাত্র দুটি পথে হতে পারে। একটি হলো, নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং কর্মচারীগণকে গাফিলতি এবং শৈথিল্য ঝেড়ে ফেলে দিয়ে কর্মতৎপর ও পরিশ্রমী হতে হবে, অন্যদিকে এই অফিসটি মফস্বলে বিশেষ করে বিভাগীয় সদর দফতরসমূহে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। যদি পাসপোর্ট অফিস এবং বিদেশীদের ভিসা অফিস বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে পারে তাহলে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধন শাখা মফস্বলের বিভিন্ন জেলায় থাকতে পারবে না কেন?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।