Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কক্সবাজারে তারকামানের হোটেলগুলো মানছেনা বিধি নিষেধ

পর্যটক ও এনজিও কর্মীদের আনাগোনায় ঠেকানো যাচ্ছেনা -এপ্রিল মে জুনে বেড়েছে সংক্রমণ

বিশেষ সংবাদদাতা, কক্সবাজার | প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০২১, ১১:০৪ এএম

দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকারি বিধি-নিষেধ অনুযায়ী পর্যটন কেন্দ্র এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট এলাকার হোটেল-মোটেল গুলো বন্ধ রাখার কথা থাকলেও কক্সবাজারের তারকামানের হোটেলগুলো মানছেনা এই বিধি নিষেধ। এতে করে ঠেকানো যাচ্ছেনা সংক্রমণ। প্রাপ্ত তথ্যমতে এপ্রিল মে জুনে কক্সবাজারে বেড়েছে সংক্রমণ।

সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত স্বাভাবিক করা হলেও সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকিতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে পর্যটনখাত। বিশেষজ্ঞদের মতে পর্যটনখাত খুলে দিলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বেশি। এ কারণে ঝুঁকি এড়াতে সরকারি ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে পর্যটন খাত।

সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে কক্সবাজারের
দায়িত্ব প্রাপ্ত সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদ জানান, সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে এখনই পর্যটন খাত খোলে দেয়া যাচ্ছেনা।

এদিকে গণপরিবহন চালু হওয়ার পর কক্সবাজারে ভিড় জমাতে শুরু করেছে পর্যটকরা। ইতোমধ্যে ছুটি শেষে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কক্সবাজার আসতে শুরু করে এনজিও কর্মকর্তারাও। ছোটখাট হোটেলগুলো প্রশাসনের নজরদারীতে বন্ধ থাকলেও মাঝারী ও তারকামানের হোটেলগুলো ব্যবহার করছেন পর্যটকও এনজিও প্রতিনিধিরা। এতে করে কক্সবাজারে করোনা সংক্রমণ কমছেনা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন অফিসের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. সাকিয়া হক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে বুধবার (১৬ জুন) পর্যন্ত গত ১৫ মাসে কক্সবাজারে মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ২২৬ জন। একইসময়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজার জেলায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১১৮ জন। এর মধ্যে ১৯ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী এবং ৯৯ জন স্থানীয় নাগরিক। তথ্যমতে মোট আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ১’০৬% ভাগ।

প্রাপ্ত তথ্যমতে ১৬ জুন পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলা ৪ হাজার ৭৬২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। এটি জেলার মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর প্রায় ৪৩% ভাগ। ১ হাজার ২৮৫ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী সহ মোট ২ হাজার ৬৮২ জন করোনা রোগী নিয়ে উখিয়া উপজেলা রয়েছে দ্বিতীয় শীর্ষে অবস্থানে। এরমধ্যে, স্থানীয় নাগরিক ১ হাজার ৩৯৭ জন। ২৫০ জন রোহিঙ্গা শরনার্থীসহ মোট ১ হাজার ৫৩৫ জন করোনা রোগী নিয়ে টেকনাফ উপজেলা তৃতীয় শীর্ষে অবস্থানে রয়েছে। এতে স্থানীয় নাগরিক ১ হাজার ২৮৫ জন। সংশ্লিষ্টদের মতে
এটি কিন্তু ভাবার বিষয়।

এছাড়াও ৭৯২ জন করোনা রোগী নিয়ে চকরিয়া উপজেলা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। ৬৭১ জন করোনা রোগী নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে রামু উপজেলা। ৬৫৪ জন করোনা রোগী নিয়ে মহেশখালী উপজেলা রয়েছে ষষ্ঠ অবস্থানে। ২৯৯ জন করোনা রোগী নিয়ে পেকুয়া উপজেলা সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। ১১০ জন করোনা রোগী নিয়ে কুতুবদিয়া উপজেলা রয়েছে
অষ্টম অবস্থানে।

কক্সবাজার আরআরআরসি অফিসের স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, ১৬ জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৩৫ জন রোহিঙ্গা শরনার্থীর শরীরে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। তারমধ্যে, উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে ১ হাজার ২৮৫ জন এবং টেকনাফ উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে ২৫০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ১৯ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী মারা গেছেন। তবে গত এক বছরের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিল-মে-জুন মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে আক্রান্তের হার অনেক গুণ বেড়েছে।

মেডিকেল অফিসার ডা. সাকিয়া হক এর দেওয়া তথ্য মতে, গত ১৬ জুন পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ১০ হাজার ৬৪ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। তবে আক্রান্তের তুলনায় সুস্থতার হার ৯০% ভাগ বলে জানা গেছে।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে এই উদ্বেগজনক অবস্থার পরেও
কোন বিধি নিষেধের তোয়াক্কা না করে হোটেল গুলো অবাধে ভাড়া দিচ্ছেন অতিথিদের। অনলাইনে বিশেষ আকর্ষণীয় ছাড়েরও দেখা মিলছে এইসব হোটেলগুলোর পক্ষ থেকে। তবে তারাকা মানের হোটেল গুলো অবাধে ব্যবসা করলেও বন্ধ রাখতে হচ্ছে ছোট হোটেল গুলো।

কক্সবাজারে একটি হোটেলে কর্মরত একজন কর্মকর্তা জানান, 'বড় হোটেল গুলো খোলা রাখলেও আমরা খোলতে পারি না। আমরা খুললেই ম্যাজিস্ট্রেট কতৃক জরিমানা করা হয়। এই ভয়ে আমরা হোটেল গুলো খুলতে পারছি না।'

ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, 'কক্সবাজারে আগত পর্যটকগন তাদের আত্মীয়দের বাসায় উঠছে। তবে বড় হোটেল গুলো বিদেশি এনজিও কর্মকর্তাদের রাখার শর্তে হোটেল কিছুটা খোলা রাখলেও সেখানে কিছু দেশীয় পর্যটকদের রাখছেন। কিন্তু ছোট হোটেল গুলো একেবারে বন্ধ রাখা হয়েছে।'

কলাতলিসহ পর্যটন জোন সরজমিনে ঘুরে দেখা যায় বীচে পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধ থাকলেও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন স্পটে অবাধ বিচরণ করছে পর্যটকরা।

এ ব্যাপারে পর্যটন ও প্রটোকল শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুরাদ হাসানের সাথে কথা বললে তিনি জানান," সংক্রমণ রোধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। তবে তারাকা মানের হোটেল গুলোতে মাসিক ভিত্তিতে এনজিও'র কর্মকর্তাগন আছেন বলে আমরা জানি। যদি তারা এই ধরনের সাধারণ পর্যটক রাখেন আমরা ডিসি স্যারের সাথে কথা বলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।"

কক্সবাজার কেন্দ্রীক যে গাড়ী গুলো আসছে তাদের ক্ষেত্রে কোন নির্দেশনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমরা সব সময় তাদেরকে নিরুৎসাহিত করে আসছি, কিন্তু তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে এনজিও বা জরুরি কাজে কক্সবাজার যাচ্ছি। তখন তো আর কিছু বলার থাকে না।"

সচেতন মহলের মতে পর্যটকদের কক্সবাজার ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা না গেলে কক্সবাজারে সংক্রমন বৃদ্ধি ঠেকানো যাবেনা। সেক্ষেত্রে তারাকা মানের হোটেল গুলোকেও বিধি নিষেধের আওতায় আনা দরকার বলে মনে করছেন সচেতন মহল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হোটেল

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ