পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
২০২০ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় প্রায় সাত শতাংশ এবং পণ্য ও সেবা-সার্ভিসের মূল্য ছয় দশমিক ৩১ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। গতকাল বুধবার ২০২০ সালের জীবনযাত্রার ব্যয় ও ভোক্তা-স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ওপর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন এসব তথ্য উঠে এসেছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল সভায় উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান, সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভুইয়া।
প্রতিবেদনে রাজধানী ঢাকায় ১৫টি খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবা সার্ভিসের মধ্যে থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য, ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী এবং ১৪টি সেবা-সার্ভিসের সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ক্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ছয় দশমিক ৮৮ শতাংশ ও পণ্য ও সেবা-সার্ভিসের মূল্য বেড়েছে ছয় দশমিক ৩১ শতাংশ। এর আগে ২০১৯ সালে এই হার ছিল যথাক্রমে ছয় দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ছয় দশমিক ০৮ শতাংশ। এছাড়া ২০১৮ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় এবং মূল্যবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ছয় দশমিক শূন্য শতাংশ এবং ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ।
এ বিষয়ে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, স্পষ্টতই বিগত তিন বছরের মধ্যে ২০২০ সালে রাজধানীতে জীবনযাত্রার ব্যয় সবচেয়ে বেড়েছে। অন্যদিকে এ সময়ে করোনা মহামারির প্রভাবে নিন্ম ও নিন্ম-মধ্যবিত্ত মানুষের আয় রোজগার ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে ২০২০ সালে নিন্ম ও নিন্ম-মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের জীবনমান বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্যাবের প্রতিবেদনে বেশ কিছু পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়। ক্যাব মনে করে ২০২০ সালে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বছরের শেষে আমন ধানের ভরা মৌসুমে চালের দামের ঊর্ধ্বগতি থেমে থাকেনি। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে চালের গড় মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। অন্যদিকে দেশি ও আমদানি করা ডালের দাম গড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং শাক-সবজির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে গড়ে নয় দশমিক ৮৮ শতাংশ।
এছাড়া ওয়াসার পানি প্রতি হাজার লিটারে দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ। আবাসিকে বিদ্যুতের গড় মূল্য বেড়েছে ছয় দশমিক ০৫ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক বিদ্যুতে মূল্য বেড়েছে গড়ে চার দশমিক ৮১ শতাংশ। বিপরীত দিকে ঢাকায় বসবাসরত নিন্ম ও নিন্ম-মধ্যবিত্তের গড় বাড়ি ভাড়া বেড়েছে পাঁচ দশমিক ৩৫ শতাংশ, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ফ্ল্যাট বাসায় সাত দশমিক ৮৫ শতাংশ, বস্তিতে ঘর ভাড়া বেড়েছে তিন দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং মেসের আট সিট বিশিষ্ট রুমের ভাড়া বেড়েছে তিন দশমিক ৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে সাধারণ শাড়ি কাপড়ের দাম বেড়েছে গড়ে নয় শতাংশেরও বেশি।
এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পৃথক বিভাগ কিংবা স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়ের দাবি করেছে ভোক্তাদের জন্য গড়া সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। এর পক্ষে যুক্তি হিসেবে ক্যাব জানায়, ভোক্তা শ্রেণি দেশের সর্ব বৃহৎ অর্থনৈতিক গোষ্ঠী। তাদের জীবনমানের উন্নয়ন আর দেশের অগ্রগতি সমার্থক। প্রতিবেশী দেশ ভারত ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ ও প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশে ১৯৯৭ সালে পৃথক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করেছে।
সংগঠনটি আরো জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে পেঁয়াজ বা ভোজ্য তেলের দাম বাড়লে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে, চালের দাম বাড়লে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে, আলুর দাম বাড়লে কৃষি মন্ত্রণালয়কে, লবণের দাম বাড়লে শিল্প মন্ত্রণালয়কে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখেছি। কিন্তু ভোক্তার স্বার্থ সার্বিকভাবে দেখা এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন করার জন্য একক কোনো মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে নেই।
সরকার প্রতিনিয়ত নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারের সিদ্ধান্ত ভোক্তাদের ওপর কী প্রভাব ফেলবে তা বিবেচনায় আসে না। এ প্রেক্ষাপটে ভোক্তা-স্বার্থ বিবেচনায়, ভোক্তা-স্বার্থ সংরক্ষণ এবং সমন্বয় করার জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় বা বিভাগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল থেকে যাতে দরিদ্র, স্বল্প-আয় এবং নিম্ন-মধ্য বিত্তের ভোক্তারা বঞ্চিত না হন, সেজন্য জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে রাখা জরুরি। বিশেষ করে ১৫ থেকে ২০টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব অর্পণ করে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় বা বিভাগ গঠন যৌক্তিক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বিজনেস অ্যাফেয়ার্স ও কনজ্যুমার্স অ্যাফেয়ার্স নামে দুইটি পৃথক বিভাগ সৃষ্টি করেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভোক্তা স্বার্থের সমন্বয় সাধনও সহজ হবে।
এদিকে ঋণ খেলাপির বিষয়ে ক্যাবের প্রতিবেদন বলছে, জোর প্রচারণা করা হয় যে সুদের হার কমানো হলে খেলাপি ঋণ আদায় সুগম হবে, বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনীতিতে আরো গতি সঞ্চার হবে। সরকারের উচ্চ মহলে এই ধারণা গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতের সুদের হার সর্বোচ্চ ছয় শতাংশ এবং ঋণের সর্বোচ্চ হার নয় শতাংশ নির্ধারণ করে আদেশ জারি করেছে। তবে অ-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ আদেশের আওতা বহির্ভূত রাখা হয়। কিন্তু মোট খেলাপি ঋণের দুই-তৃতীয়াংশের অধিক অর্থ আদায় রিট পিটিশন ও আইনি জটিলতার কারণে বছরের পর বছর বিলম্বিত হচ্ছে। আইন এবং আইনি প্রক্রিয়া সংস্কার করে দ্রুত, মামলা দায়েরের অনূর্ধ্ব এক বছরের মধ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ না করা হলে আর্থিক খাতের রক্তক্ষরণ ও আমানতকারীদের অর্থের সুরক্ষা সম্ভব হবে না বলেও ক্যাব জানায়।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।