Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুই সেতু বদলে দিল চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা

প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফিরোজ খান লোহানী, ইসলামপুর (জামালপুর) থেকে

জামালপুরের ইসলামপুরে দুই সেতুই পাল্টে দিল চরাঞ্চলবাসীর জীবন যাত্রার মান। চরাঞ্চল এখন আর চরাঞ্চল নয় পূর্বাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এ উপজেলাটি ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ব্রহ্মপুত্র নদ ও যমুনানদী দ্বারা বেস্টিত। যমুনার নদীর ওপারে কুলকান্দি, সাপধরী, বেলগাছা, চিনাডুলী চারটি ইউনিয়নের জনসাধারণের বসবাস। সারা বছর এ অঞ্চলের মানুষের একমাত্র যাতায়াত ব্যবস্থা নৌকা। যাতায়ার ব্যবস্থা ভাল না থাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি বললে ভুল হবে না। উপজেলাটি তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল। একটি যমুনার পশ্চিমাঞ্চল, ইসলামপুর সদর এবং পূর্বাঞ্চলের গাইবান্ধা, গোয়ালেরচর, চর গোয়ালীনি ও চর পুটিমারী। পূর্বাঞ্চলের মানুষগুলো খানাখন্দ রাস্তায় যাতায়াত ও নদীপথ পাড়ি দিয়ে শহরে আসতে দিনের অর্ধেক সময় লেগে যেত। সেতুটি দুইপাড়ের মানুষের স্বপ্নের সেতু। ফকিরপাড়া পাইলিং ঘাট নব নির্মিত সেতু যার দৈর্ঘ্য ৫৬০ মিটার। একই প্রকল্পভুক্ত ইসলামপুরের ব্রহ্মপুত্র নদের ডেফলা ঘাটে ৫৬০ মিটার দীর্ঘ আরেকটি স্বপ্নের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতু দুটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। দুটি সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২০৪ কোটি টাকা। সেতুর সাথে যুক্ত ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি পাকা সড়কও হচ্ছে। সেতু দুটির কারণে তৃখ- উপজেলা দ্বিখ-ে পরিণত হয়েছে। ইতিমধ্যে পূর্বাঞ্চল বাসির প্রাণের দাবি দুটি সেতুর মাধ্যমে শহর এবং পূর্বাঞ্চল বাসীর মাঝে মিলন মেলা সৃষ্টি হয়েছে। শিগগির সেতু দুটি উদ্বোধন করে জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য খুলে দেয়া হবে। সেতু ও দুই পাড়ের সড়ক যোগাযাগ স্থাপিত হওয়ায় ইসলামপুর, বকশীগঞ্জ, শেরপুর, শ্রীবরদী ও মেলান্দহ উপজেলার দশ লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘব হতে যাচ্ছে। সেতুতে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের অনেকেই স্মরণ করলেন ইসলামপুর উপজেলা আ.লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ফরিদুল হক খান দুলালের কথা। সংসদ সদস্যের উদ্যোগের কারণে উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা গাইবান্ধা, গোয়ালেরচর, চরগোয়ালিনী ও চরপুটিমারী ইউনিয়নের মানুষদের স্বপ্নপূরণ দুপারের সেতুবন্ধন হয়েছে। অন্যদিকে এই সেতুর কারণেই ইসলামপুর উপজেলার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হলো পাশের বকশীগঞ্জ, শেরপুর, শ্রীবরদী ও শ্যামপুর ইউনিয়ন মেলান্দহ উপজেলাও। বিগতদিনে যেমন চরাঞ্চলবাসী বিভিন্ন ফসল আবাদ করে যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল না থাকায় বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হতো। কিন্তু এখন আর সেই যন্ত্রণা পোহাতে হয় না ট্রাক, পিকাপ, সিএনজি সহ যান্ত্রিক চালিত গাড়ি ফসলের মাঠে পৌঁছতে কোন সমস্য না থাকায় কৃষককুল আবাদী ফসল আরামনে শহরে নিয়ে উচ্চ দামে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করতে পাচ্ছে। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের ডেফলা ঘাট ও ফকিরপাড়া পাইলিং ঘাট সেতুতে বিকেল গড়ালেই দর্শনার্থীদের ভিড় জমে যায়। এখানে অনেক মানুষ আসে, নদী আছে, সুন্দর পরিবেশ সুন্দর লাগে। সেতুটি যেন বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বিকাল হলেই হাজার জনতা ভিড় জমায় একটু আনন্দ উপভোগ করার জন্য। বিকালের বাতাসে উন্মাদ হযে যায় এখানে আসা মানুষগুলো। দূরদূরান্ত থেকে হাজারো জনতার কথা শুনলে মনে হয় এমন মনোরম পরিবেশ আর কোথাও নেই। শত শত বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ শিশু এমনকি বয়স্ক নারী-পুরুষও দেখা গেল সেতুতে বেড়াতে এসেছেন। একদিকে যেমন মনোরম পরিবেশ অন্যদিকে এই সেতু থেকে নদী, নৌকা, দূরের সবুজ গাছগাছালি দেখা, হিমেল বাতাস এমনকি সন্ধ্যায় সূর্যডোবা আকৃষ্ট করে যে কাউকেই। সন্ধ্যায় সূর্য যখন লাল রক্তিম থালার মতো আস্তে আস্তে দূরের গ্রামের গাছাপালায় তলিয়ে যায় মুগ্ধ হওয়ার মতই দৃশ্য। জানা যায়, সেতুতে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের আনাগোনা আরও বেড়েছে। শুধু ইসলামপুর নয় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এই সেতুতে বেড়াতে আসেন অনেকেই। শুধু মানুষের মিলনমেলাই নয়। এই সুযোগে সেতু দুটিতে গড়ে উঠেছে ভাসমান বিভিন্ন খাবারের দোকান। আইসক্রিম, বাদাম, চানাচুর, চটপটিওয়ালা, মাটির তৈরি খেলনা থেকে শুরু করে নানা রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে স্থানীয় নিম্নআয়ের মানুষেরা। সেতুটি চরাঞ্চলবাসীর জীবনযাত্রার মান ও দুইপারের মিলন মেলায় পরিণত হওয়ায় গাইবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান ও ঠিকাদার মাকছুদুর রহমান আনসারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, এখন আর আগের মত চরাঞ্চলবাসীকে পায়ে হাঁটতে হয় না, নৌকায় আর পার হতে হয় না। রাস্তাঘাটগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে চলাচলের মধ্যে দিয়ে চরাঞ্চলবাসীর উন্নত জীবনে পরিণত হচ্ছে। উপজেলা শহরে আসতে এখন আর ধরনা ধরে বসে থাকতে হয় না নদীর পাড়ে। উপজেলা শহর হতে বিভিন্ন যানবাহনে হরহামেশাই চরাঞ্চলে যেতে বিন্দুমাত্রও বিলম্ব হয় না। রাস্তাগুলো নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে পূর্বাঞ্চল মানুষের জীবন উন্নত জীবনে পরিণত হবে বলে আমি আশা রাখি। এ ব্যাপারে স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব ফরিদুল হক খান দুলালের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামপুরবাসীর যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘবে সাড়া দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর দুটি সেতু নির্মাণের জন্য তিনি ইসলামপুরবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে সেতু দুটির নির্মাণ কাজ শেষের পথে আমরা আশা করছি খুব শীগ্রই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েই সেতু দুটি উদ্বোধন করবেন এবং তাকে এখানে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ইসলামপুরের জনসাধারণের জন্য নিজ হাতেই উন্মুক্ত করে দিয়ে যাবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুই সেতু বদলে দিল চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ