Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যাত্রাবাড়ী তখন যাত্রাবাড়ী এখন

আর কে চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

১৯৫০ সালে যাত্রাবাড়ী ছিল একটি নিভৃত পল্লী। যাত্রাবাড়ীসহ বিরাট একটি এলাকা ব্রা²ণচিরণ নামে পরিচিত ছিল। ব্রা²ণচিরণ এলাকার একটি বাড়ীতে যাত্রামন্ডপ ছিল। প্রায়ই সেখানে যাত্রাপালা হতো। একমাত্র যাত্রাই ছিল চিত্তবিনোদনের উৎস। তাই যাত্রার প্রতি লোকজনের আগ্রহ ছিল বেশি। যে বাড়ীটিতে যাত্রামন্ডপটি অবস্থিত সেটিকে লোকজন তখন যাত্রাবাড়ী নামে ডাকতো। সেই থেকেই এলাকাটির নাম যাত্রাবাড়ী হিসাবে পরিচিত হয়। ঢাকা শহরের একেবারে পাশেই অবস্থিত ছিল যাত্রাবাড়ী। সেখানে গ্রামের মতো পরিবেশ ছিল। ফুলকপি, বাঁধাকপি, আখসহ প্রচুর তরকারি ফলতো সেই এলাকায়। যাত্রাবাড়ীর বর্তমান চিত্র সম্পূর্ণই অন্যরকম।

যাত্রাবাড়ী অনেকগুলো কারণে ঐতিহাসিক। ১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছিলেন যাত্রাবাড়ী থেকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেদিন বলেছিলেন ‘আমি যাত্রাবাড়ী থেকে যাত্রা শুরু করলাম’। আমি তখন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনী আসনের সমন্বয়কের দ
ায়িত্বে ছিলাম। আমার যাত্রাবাড়ীর বাড়ির সামনে (যাত্রাবাড়ী মোড়ে) এ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
বঙ্গবন্ধু যখন চট্টগ্রাম, কুমিল্লা বা নারায়ণগঞ্জের দিকে রওনা দিতেন আমরা সব সময়ই তাকে যাত্রাবাড়ী মোড়ে অর্ভ্যথনা জানাতাম। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই যাত্রাবাড়ীতে লাগে উন্নয়নের ছোঁয়া। যাত্রাবাড়ীর উন্নয়নে তিনি আমাদের অনেক বরাদ্দ দিয়েছেন। তিনি একাধিকবার আমার যাত্রাবাড়ীর বাড়িতে অতিথি হয়ে এসেছেন। সে স্মৃতি কখনো ভোলার নয়। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও আমার যাত্রাবাড়ীর বাড়িতে এসেছেন। যাত্রাবাড়ী মোড়ে একাধিক জনসভা করেছেন। আমার মতো একজন কর্মীকে মূল্যায়ন করে মঞ্চে তার পাশে বসিয়েছেন। তার সামনে জনগণের উদ্দেশ্যে কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন। যাত্রাবাড়ীর উন্নয়নে কোনো দাবি নিয়ে গেলে তা বাস্তবায়ন করে দিয়েছেন।

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে বাংলাদেশের একমাত্র জাতীয় এক্সপ্রেসওয়ে, যেটি যাত্রাবাড়ী মোড় শুরু হয়েছে। এটি এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক এএইচ১-এর একটি অংশ। এই ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়েতে দুটি সার্ভিস লেন, ৫টি ফ্লাইওভার, ১৯টি আন্ডারপাস, ২টি ইন্টারচেঞ্জ, চারটি রেলওয়ে ওভার ব্রিজ, ৪টি বড় সেতু, ২৫টি ছোট সেতু এবং ৫৪টি কালভার্ট রয়েছে। যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের পর আমার একটি বিষয় মনে পড়ছে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ এর নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, আমি যাত্রাবাড়ী থেকে যাত্রা শুরু করলাম, আর তার সুযোগ্য কন্যা ২০২০ সালে এসে সেই যাত্রাবাড়ী থেকেই বাংলাদেশের প্রথম দৃষ্টিনন্দন যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের যাত্রা শুরু করালেন। যোগ্য বাবার যোগ্য কন্যা।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কনিষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ রাসেলের নামে একটি পার্ক উদ্বোধন করা হয়েছে। ৯ জুন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস শহীদ শেখ রাসেল পার্কটি উদ্বোধন করেন। পার্কটি এ অঞ্চলের মানুষের নিশ্বাস নেওয়ার একটি জায়গাতে পরিণত হয়েছে।

সম্প্রতি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর আর কে চৌধুরী সড়কের পাইপ নর্দমা নির্মাণ ও ফুটপাতসহ রাস্তার উন্নয়ন কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। আর কে চৌধুরী সড়কটি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। সড়কটি যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে উত্তর দিক দিয়ে ধলপুর হয়ে গোলাপবাগে গিয়ে শেষ হয়েছে। সড়কটিতে রয়েছে একাধিক হাই স্কুল, মাদরাসা, মসজিদসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে যাত্রাবাড়ী অঞ্চল ছিলো অনুন্নত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমে আমি বঙ্গবন্ধু কর্তৃক মনোনীত চেয়ারম্যান ও পরে এ অঞ্চল থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর নিজস্ব তহবিল, সিটি করপোরেশন থেকে বরাদ্দ ও এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তাঘাট তৈরি করি। আর কে চৌধুরী সড়কটিসহ এর সঙ্গে সংযুক্ত প্রতিটি লেন তৈরি ও এর উন্নয়ন আমার হাত ধরেই হয়েছে। যাত্রাবাড়ীবাসী ভালোবেসে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি আমার নামে নামকরণ করায় আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। সেই সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস, ৪৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী আবুল কালাম অনু, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমা বেগমের কাছে ধন্যবাদ জানাচ্ছি রাস্তাটির উন্নয়ন কাজে বরাদ্দ দেওয়ায়।

পরিশেষে বলছি, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক, অনুকরণীয় অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশে রেকর্ড পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে। খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, মূল্যবোধ, কৃষি, অর্থনীতি, রেমিটেন্স, বিদ্যুৎ, বৈদেশিক সম্পর্কের উন্নয়নসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেশবাসীকে যুগান্তকারী সাফল্য এনে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।

শুধু দেশেই নয় আন্তজার্তিক অঙ্গনেও নেত্রীর কাজের স্বীকৃতি মিলেছে। বাংলাদেশের সফলতা ও নেতৃত্বগুণের জন্য তিনি বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন ও নানাবিধ সম্মানে ভূষিত হয়ে বাংলাদেশের নাম বিশ্বব্যাপী উজ্জ্বল করেছেন। বিশ্বের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ এখন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। বিশ্ব গণমাধ্যমে শেখ হাসিনা এখন বহুল আলোচিত ও প্রশংসিত নেতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর শেখ হাসিনা ছাড়া এমন গুণাবলি সম্পন্ন আর কোনো নেতা বাংলাদেশের মানুষ পায়নি। এ কারণে তাঁর সাথে অন্য কোনো নেতার তুলনা চলে না, শেখ হাসিনা নিজেই নিজের তুলনা।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও নগরবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সদস্য এফবিসিসিআই এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিভৃত পল্লী
আরও পড়ুন