পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সাম্প্রতিককালে রাজধানীসহ সারাদেশে খুনের ঘটনা বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে আত্মহত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা। তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণেও খুনের ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। আত্মহত্যা যেন অতি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ধর্ষণের তো কথাই নেই। শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউ রেহাই পাচ্ছে না। খুনের ক্ষেত্রে চরম বর্বরতা ও নৃশংসতা প্রদশিত হচ্ছে। খুন করা, লাশ ঘুম করা, খন্ড-বিখন্ড করা এমন কি পুড়িয়ে মারার পৈশাচিকতাও লক্ষ করা যাচ্ছে। একসঙ্গে একাধিক খুনও হচ্ছে। কুষ্টিয়ায় গত পরশু প্রকাশ্য দিবালোক একজন পুলিশ কর্মকর্তা তার স্ত্রী, সৎ ছেলে ও অন্য এক যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে। পরিস্থিতি কতটা নাজুক হলে এমন ঘটনা ঘটে, সহজেই অনুমেয়। আইন ও জননিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ যখন এভাবে খুন করতে পারে, তখন উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত না হয়ে উপায় থাকে না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, খুনের এসব ঘটনা ঘটার কারণ কী? অন্যান্য অপরাধ বৃদ্ধিরই বা কারণ কী? একজন পুলিশ কর্মকর্তার মতে, পারিবারিক দ্ব›দ্ব ও দাম্পত্যকলহ খুন-খারাবী বাড়ার বিশেষ কারণ। মাদকাসক্তি ও একাধিক বিয়েও খুনের অন্যতম কারণ। সমাজবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অবৈধ সম্পর্কে জড়ানো, দাম্পত্যবিরোধ, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, অতিমাত্রায় ক্ষোভ ও অসহিষ্ণুতা খুনের পেছনে প্রভাবক ভূমিকা রাখছে। বৈষম্য, বেকারত্ব, মহামারিজনিত পরিস্থিতি, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির গরমিল ইত্যাদিও খুনের ঘটনা বাড়ার জন্য বিশেষভাবে দায়ী। তাদের মতে, সবচেয়ে বড় কারণ, নৈতিক, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের শোচনীয় অবক্ষয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতিও এজন্য দায়ী।
খুনের ঘটনা এমনিতেই লোমহর্ষক। তার ওপর অকল্পনীয় নৃশংসতা প্রদর্শন করা হচ্ছে। এতে প্রতীয়মান হয়, খুনীদের মধ্যে ক্রোধ ও প্রতিশোধপরায়নতা কাজ করেছে। চরম বর্বরতা সে জন্যই। কারোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারের বিধিনিষেধের মধ্যেও ঘটে চলছে চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন খুনের ঘটনা। এক মাসে খোদ রাজধানীতেই ১৮টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে মে মাসে সারাদেশে শুধু শিশুই খুন হয়েছে ২৫৫ জন। অন্যান্য খুনের ঘটনার সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের উদ্বেগকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে, সন্দেহ নেই। খুন, আত্মহত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদি অপরাধ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হতাশা-নিরাশা বাড়াও স্বাভাবিক। দেশ ও সমাজ যদি এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধের বৃত্তে আটকে পড়ে তবে এতসব উন্নয়ন কিসের জন্য? কী কাজে লাগবে উন্নয়ন, যদি সমাজই ধসে পড়ে? এ অবস্থা থেকে উত্তরণ শুধু আইন-শৃংখলার দৃষ্টিতেই জরুরি নয়, সামগ্রিক দৃষ্টিতেও অপরিহার্য। আইন-শৃংখলা বাহিনীকে সক্রিয় ও তৎপর করলে পরিস্থিতির উন্নতি কিছুটা হতে পারে, তবে পুরোটা নয়। স্বস্তিকর পরিস্থিতি-পরিবেশ তৈরি করতে হলে মূলে হাত দিতে হবে। নৈতিক, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ যদি ফিরিয়ে আনা যায় তবে আপনা-আপনিই ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হবে। কাজটি তাই শুরু করতে হবে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ থেকে। আগে আমাদের সমাজে নৈতিক মান নিয়ে প্রতিযোগিতা হতো। নৈতিক মানসম্পন্ন ব্যক্তি সমাজে আদৃত ও মান্য হতো। আর নৈতিক মানে যাদের ঘাটতি থাকতো তারা নিন্দিত ও পরিত্যাজ্য হতো। তখন শৈশব-কৈশরে নৈতিকতা শিক্ষা দেয়া হতো, ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা হতো। এখন সেই শিক্ষা ও চর্চা খুব কম পরিবারেই টিকে আছে। স্কুলপাঠ্যে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার পাঠ প্রায় উঠে গেছে। ফলে দেশে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে বটে, তবে নৈতিক মানুষের সংখ্যা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আচার-সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে না। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু রক্ষাব্যুহ ছাড়াই।
দেশে খুন, দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ইত্যাদির সয়লাব চলছে। অন্যদিকে অপরাধের অভয়ারণ্য বিস্তৃত হচ্ছে। এমতাবস্থায় নৈতিক, পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সুপ্রতিষ্ঠিত করার বিকল্প নেই। দেশে সুশাসনের ঘাটতি আছে। ন্যায়বিচার পাওয়ার সংকট আছে। যেখানে যে ক্ষমতাবান সেখানেই তার দুর্বার শাসন; অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সুশাসন নয়। আবার নানা কারণে ন্যায় বিচার যথাসময়ে পাওয়া যায় না। সঠিক বিচার ত্বরিত না পাওয়া, ক্ষেত্রবিশেষে বিচারহীনতার শামিল হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে কিছু লোক অন্যায় অপকর্ম দুর্নীতি, দুষ্কৃতি এবং সন্ত্রাস, খুন ইত্যাদি অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক বৈষম্য দিনকে দিন বাড়ছে, যাতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলে সব ধরনের অপরাধের মাত্রাই কমবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।