চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
২৯ মে, শনিবার। একদিকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তাপদাহে জ্বলছিল সিলেট অপরদিকে নজিরবিহীন ভূ-কম্পনে কাঁপলো সিলেট। একবার দুবার নয় জাতীয় সংবাদপত্র সূত্র বলছে ৪ বার। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ৮ বার পর্যন্ত ভূমিকম্পের খবর পাওয়া গেছে। যাই হোক, এই ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়ত বলছে-যখন কোন কিছুর সংখ্যা নিয়ে মতানৈক্য দেখা দেয়, ‘নিম্ন সংখ্যাটাই বিশ্বাসযোগ্য। তার মানে ৩/৪ বার তো কেঁপে উঠেছে। মনে হয় অতীতে একদিনে তাও আবার একঘন্টার ভেতরে।
কেন? কারণ কী? ভূ তথা জমিন কেন কেঁপে উঠে? বক্ষমান ছোট্র এই নিবন্ধে এ বিষয়েই লিখবো। আল্লাহ তায়ালা তাওফিকের মালিক। মাঝে মধ্যেই ভূমিকম্পের ধাক্কায় পৃথিবী কেঁপে ওঠে। তছনছ হয়ে যায় শহর, নগর, বন্দর ও জনপদ। চোখের পলকে মাটির সঙ্গে মিশে যায় স্বপ্ন, সাধনা ও শ্রমে গড়ে তোলা ভুবন। মাঝে মধ্যেই ভূমিকম্পের ধাক্কায় পৃথিবী কেঁপে ওঠে। তছনছ হয়ে যায় শহর, নগর, বন্দর ও জনপদ। চোখের পলকে মাটির সঙ্গে মিশে যায় স্বপ্ন, সাধনা ও শ্রমে গড়ে তোলা ভুবন।
পবিত্র কোরআনে ভূমিকম্প বিষয়ে ‘যিলযাল’ এবং ‘দাক্কা’ শব্দ দুটি ব্যবহৃত হয়েছে। ‘যিলযাল’-এর অর্থ একটি বস্তুর নড়াচড়ায় আরেকটি বস্তু নড়ে ওঠা। ‘দাক্কা’ এর অর্থ প্রচন্ড কোনো শব্দ বা আওয়াজের কারণে কোনো কিছু নড়ে ওঠা বা ঝাঁকুনি খাওয়া। পৃথিবীতে বর্তমানে যেসব ভূমিকম্প ঘটছে, তা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে কঠিন শিলাত্বকে চ্যুতি বা স্থানান্তরের কারণে। কেয়ামতের দিন ফেরেশতা হজরত ইসরাফিল (আ.)-এর সিঙ্গায় ফুৎকারের কারণে চূড়ান্ত ভূমিকম্পে পৃথিবী টুকরো টুকরো হয়ে ধূলিকণায় পরিণত হবে এবং তা হবে ‘দাক্কা’।
যা হবে এক প্রচন্ড আওয়াজ। পৃথিবীতে মাঝে মাঝে কঠিন শিলাত্বকের স্থানান্তরের কারণে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প আমাদের এ কথা স্মরণ করে দেয় যে, একদিন ওই ‘দাক্কা’ সংঘটিত হবে, যার নাম কেয়ামত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে কিন্তু তার খেয়ানত করা হবে, জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে কিন্তু মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে, বন্ধুকে কাছে টেনে নিয়ে পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে, মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল হবে, জাতির সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসকরূপে আবির্ভূত হবে, সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হবে নেতা, একজন মানুষ যে খারাপ কাজ করে খ্যাতি অর্জন করবে, তাকে তার খারাপ কাজের ভয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হবে, বাদ্যযন্ত্র এবং নারী শিল্পীর ব্যাপক প্রচলন হবে, মদ পান করা হবে, লোকজন তাদের পূর্ববর্তী মানুষগুলোকে অভিশাপ দেবে, এমন সময় তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে এবং এমন একটি ভূমিকম্প হবে যা সেই ভূমিকে তলিয়ে দেবে [তিরমিজি, হাদিস নং-১৪৪৭]।
আল্লাহ অধিকাংশ জাতিকে ভূমিকম্পের গজব দিয়ে ধ্বংস করেছেন। ভূমিকম্প এমনই একটা দুর্যোগ, যা নিবারণ, প্রতিকার বা প্রতিরোধ করা বা পূর্বাভাষ পাওয়ার মতো কোনো প্রযুক্তি মানুষ অদ্যাবধি আবিষ্কার করতে পারেনি। সুতরাং এর ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও আশ্রয় প্রার্থনা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমাদের নাফরমানী বা অবাধ্যতার কারণে যদি অন্যান্য নবীদের অনুসারীদের মতো আমাদেরকে শাস্তি দেয়া হতো, তাহলে আমরা স্বীয় মন্দ কৃতকর্মের জন্য অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে যেতাম।
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতদরেকে এরকম গযব দিয়ে শাস্তি না দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন। প্রিয় নবীর দোয়ার উসিলায় আমরা এখনো ধ্বংস হইনি। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় উম্মতের জন্য ৩টি দোয়া করেছেন।
(১) হে আল্লাহ! আমার উম্মতকে অন্যান্য উম্মতের ন্যয় কোনো জন্তুতে (পশু) পরিণত করো না। আল্লাহ তাআলা এ দোয়া কবুল করেছেন। (২) হে আল্লাহ! অন্যান্য উম্মতের ন্যয় আমার উম্মতকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করো না। আল্লাহ তাআলা এ দোয়াও কবুল করেছেন। (৩) হে আল্লাহ! আমার উম্মতের মধ্যে যেন খুন-খারাবি না হয়, আল্লাহ তাআলা এ দোয়া কবুল করেননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।