Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

বিধ্বস্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা

চট্টগ্রামে মেয়রের তাগাদায় অব্যাহত খালের বাঁধ-রাস্তা অপসারণ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

নালা নর্দমা ভরাট। আবর্জনার সাথে পলিথিন বর্জ্যরে জঞ্জাল। বড় বড় খালের মুখে বাঁধ। সীমানা দেয়াল তুলতে খালের ভেতরে তৈরি করা হয়েছে রাস্তা। থেমে নেই নির্বিচারে পাহাড় কর্তন। বৃষ্টি হতেই পাহাড়ের বালু-মাটি নেমে আসছে নালা নর্দমায়। এতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি অথবা জোয়ার হলেই ডুবছে বন্দরনগরী।

মহানগরীতে গড়ে উঠেনি সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। খাল, নালা হয়ে প্রতিদিন শত শত টন বর্জ্য পড়ছে কর্ণফুলীতে। কয়েক মিটার পলিথিনের স্তর জমেছে নদীতে। নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় জোয়ারের পানি ব্যাপকহারে নগরীতে আসছে। আবার জোয়ারের সময় ভারী বর্ষণ হলে নগরীতে পানিবদ্ধতা ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে।

সমুদ্র উপকূলের এই নগরী প্রাকৃতিকভাবে সাগর-নদী-খাল-ছড়ার সাথে যুক্ত। ভারী বর্ষণ হলে নগরীতে কিছু সময়ের জন্য পানি জমে যেত। কিন্তু কম সময়ে এসব পানি সরে যেত খাল, নালা ছড়া হয়ে। তবে সে স্বাভাবিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। বেপরোয়াভাবে খাল, নালা বেদখল হয়ে গেছে। নীচুভূমি, জলাশয়, পুকুর, দীঘি ভরাট করে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্বিচারে চলছে পাহাড় নিধন। নগরীর প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ বা নিষ্কাশন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। নগরীর আবর্জনায় ভরা ড্রেন, দখল হয়ে যাওয়া খাল পরিস্থিতিকে করেছে আরো শোচনীয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানিবদ্ধতার এ সঙ্কট মানবসৃষ্ট।

এদিকে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর বার বার তাগাদার পর খালের মুখ থেকে বাঁধ ও রাস্তা অপসারণ অব্যাহত রয়েছে। পানিবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ সিডিএর উদ্যোগে এসব বাঁধ অপসারণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের পরিচালক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী জানিয়েছেন, বাঁধের পাশাপাশি খালের সীমানা দেয়াল নির্মাণে তৈরি রাস্তাও অপসারণ করা হচ্ছে। তবে এ কাজে আরো কয়েকক দিন সময় লাগবে। গত রোববারের কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবে যায় নগরীর বিশাল এলাকা। তার আগে থেকে সিটি মেয়র খালের মুখে বাঁধ অপসারণের তাগিদ দিয়ে আসছিলেন।

এদিকে বড় বড় খালের মুখে বাঁধ সরিয়ে নিলেও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় এর সুফল নিয়ে সংশয় রয়েছে। চাক্তাই খাল, হিজরা খাল, মহেশ খাল, গহনার ছরাসহ নগরীর বেশিরভাগ খাল নালা এখনও আবর্জনায় ভর্তি। কোন কোন নালা রীতিমত সড়কের রূপ ধারণ করেছে। প্রতিটি খাল নালায় আবর্জনার ভাগাড়। ফলে আবারও ভারী বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন নগরবাসী। খাল নালা ভরাট হয়ে যাওয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরবাসীর অবহেলাকে দায়ী করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে অসচেতনভাবেই অনেক এলাকায় ড্রেনকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে। তবে সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে খাল নালা যথাসময়ে সংস্কার না করারও অভিযোগ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরীতে পানিবদ্ধতার এ সঙ্কট মানবসৃষ্ট। বেপরোয়া দখল আর খাল নালা ভরাটের কারণে পানিবদ্ধতা হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানও পাহাড় কাটছে। ছোট বড় ১৫টি পাহাড় কেটে বায়েজিদ বাইপাস সড়ক তৈরি করেছে সিডিএ। এখন সেখানে পাহাড় ধসের শঙ্কায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পাহাড় দখল করে মহানগরী ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতি গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে বাস করছে লাখো মানুষ। প্রতিবছর বৃষ্টি হলেই তাদের সরিয়ে নেয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। এরপর সবকিছু চলে আগের মত। নালা ও খাল দখল করে স্থাপনা তৈরী হয়েছে। নীচুভূমি ভরাট হয়ে যাওয়ায় নগরীতে পানিবদ্ধতা বাড়ছে।

বিশিষ্ট স্থপতি ও পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের নেত্রী প্রফেসর জেরিনা হোসেন বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই চট্টগ্রামে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। কিন্তু বেপরোয়া দখলে সেই ব্যবস্থা রীতিমত ভেঙ্গে পড়েছে। এজন্য সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নাগরিক সমাজেরও দায় রয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং উন্নয়ন, বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। একদিকে খাল নালা সংস্কারের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। অন্যদিকে নির্বিচারে পাহাড় কাটা চলছে। সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় নালা নর্দমায় ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। ভয়ঙ্করভাবে বেড়েছে পলিথিনের ব্যবহার। তিনি পানিবদ্ধতার সঙ্কট থেকে চট্টগ্রামকে রক্ষায় সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ