পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিপাতে রাজধানীসহ দেশের প্রধান শহরগুলোর রাস্তায় পানিবদ্ধতায় জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসতে দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেটের পাহাড় অঞ্চলে অবৈধ বসতি স্থাপন ও পাহাড় ধসে মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে শতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। প্রথমত ভূ-প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও পরিবেশগত সুরক্ষার জন্যই পাহাড়ের অস্তিত্ব ও সবুজায়ন নিশ্চিত করা জরুরী। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়গুলোতে অবৈধ জনবসতি গড়ে উঠলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রশাসনের মধ্যে উদাসীনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এক শ্রেণীর স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় পাহাড়ের পাদদেশে,পাহাড় কেটে এবং পাহাড়ের উপরে শত শত অবৈধ বসতি গড়ে তোলা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ম্যানেজ করেই বসতি তুলে মাসে লাখ লাখ টাকা ভাড়া উঠানোর এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে কথিত একটি চক্র। বড় ধরণের পাহাড় ধসে প্রাণহানি ও মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টির পরই কেবল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নড়েচড়ে বসতে দেখা যায়। মামলা, তদন্ত কমিটি গঠনসহ কিছু গতানুগতিক তৎপরতা দৃশ্যমান হয়। তারপর কিছুদিন যেতেই সবকিছু থেমে যায়।
গত সপ্তাহে কয়েক ঘন্টার ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরীতে নজিরবিহীন পানিবদ্ধতার চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। আগামী বর্ষায় ভারী বর্ষণে পানিবদ্ধতার তীব্রতা আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত এক দশকে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে রাজনৈতিক মহল এবং মেয়র প্রার্থীদের অনেক প্রতিশ্রুতির কথা শোনা গেছে। শত শত কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেও তেমন কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। বর্ষার ভারী বর্ষণে নগরীতে পানিবদ্ধতায় নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হলেও পানিবদ্ধতার কারণে প্রাণহানির মত মানবিক বিপর্যয়ের কোনো আশঙ্কা থাকে না। পাহাড়ের ক্ষেত্রে চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। গাছপালা উজাড় করে, পাহাড় কেটে গড়ে তোলা অবৈধ ও অপরিকল্পিত জনবসতির দীর্ঘ মেয়াদি পরিবেশের ক্ষতি ও ভারসাম্য বিনষ্ট করছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব অপকর্মের সাথে স্থানীয় প্রভাবশালীদের যুক্ত থাকার বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। তাদের অপকর্মের কারণে প্রায় প্রতিবছরই বর্ষায় ভারি ও মাঝারি বৃষ্টিতে পাহাড়গুলো নাজুক হয়ে পড়ে। ফলে অনিবার্যভাবে পাহাড় ধসে পড়ে। যারা পাহাড় কেটে ও পাহাড়ের উপর জনবসতি গড়ে তুলছে তারা থাকছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তারা পাহাড় দখল করে বাড়ি-ঘর বানিয়ে ভাড়া দিয়ে লাভবান হলেও, এতে প্রকৃতির অপরিমেয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। এসব ঘর-বাড়িতে বসবাসকারিরা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে এবং তারাই পাহাড় ও ভূমিধসের শিকার হচ্ছে।
অতিবর্ষণে পাহাড়ে ভূমিধস ও মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা নতুন কোনো বিষয় নয়। ২০০৭ সালের ১১ জুন ২৪ ঘন্টায় ২৫৫ মি.মি. বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর সাতটি পাহাড়ি বসতি এলাকায় ভূমিধসে মাটিচাপা পড়ে ২২৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এরপরের বছর নগরীর মতিঝর্না এলাকায় পাহাড় ধসে ১২ জনের মৃত্যু ঘটে। এরপর গত এক দশকে আরো বেশ কয়েকটি পাহাড় ধসের ঘটনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনার পর প্রশাসন সক্রিয় হয়ে উঠলেও পরবর্তীতে আগের অবস্থায় ফিরে যায়। পাহাড় কাটা এবং সেখানে বসতি স্থাপন না করার বিষয়ে পরিবেশবিদরা বারবার বলেছেন। কে শোনে কার কথা। প্রশাসনের সামনেই এসব অপকর্ম চলছে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা এসব ঘরবাড়িতে গ্যাস, বিদ্যুত ও পানির লাইনও দেয়া হয়। এ থেকেই বোঝা যায়, পাহাড় কেটে ও পাহাড়ে অবৈধ বসতি স্থাপনের সাথে প্রভাবশালী মহল জড়িত। ইদানীং সিলেট নগরীতে ঘন ঘন মৃদু ভূমিকম্পের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেখানকার পাহাড়টিলায় এখন অবৈধভাবে বসতি গড়ে উঠেছে। এসব বসতির সংখ্যা ও বিস্তৃতি প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। ভারী বৃষ্টিপাতের সাথে সাথে মাঝারি ধরণের ভূমিকম্পে সিলেটের পাহাড়ি বসতিগুলো মৃত্যুপুরীতে পরিনত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট ও রাঙ্গামাটি-বান্দরবানে পাহাড় কেটে ও বনভূমি উজাড় করে গড়ে তোলা লাখ লাখ বসতি একদিনেই বা রাতারাতি গড়ে উঠেনি। এর সাথে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল এবং স্থানীয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হাত রয়েছে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক দায় এড়াতে পারেন না। ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয়ের অপকর্ম চললেও এর বিরুদ্ধে তারা কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, যতক্ষণ না বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের টনক নড়ে না। আমরা মনে করি, পরিবেশগত ভারসাম্য ও লাখ লাখ মানুষের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে পাহাড় কাটা বন্ধসহ অবৈধ বসতি স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করে পাহাড় ও বনভূমির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এর সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বর্ষা শুরুর আগেই পাহাড় ধস ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে তা নিরাপদ করার সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।