Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য বিভাগকে সংস্কার করার দাবি বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি ও জাতীয় পাটির সংসদ সদস্যরা বলেছেন, এ মন্ত্রণালয়ে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে। করোনা পরিস্থিতিতে জনগণ সেবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য খাতের আমুল সংস্কার প্রয়োজন। অবশ্য এ বক্তব্যের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, বাংলাদেশ করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে খুবই সফলতা দেখিয়েছে।
গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের মঞ্জুরি দাবির ওপর আনা ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে তারা এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এ আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির মো. ফখরুল ইমাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবুল হক চুন্নু ও রওশন আরা মান্নান, বিএনপির মো. হারুনুর রশীদ ও মোশাররফ হোসেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, কেনাকাটায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুর্নীতির ডিপো। কীভাবে এই মন্ত্রণালয়ের সংস্কার করবেন, তা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সুস্পষ্টভাবে জানাতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগকে সংস্কারের আওতায় আনতে হবে। বেহাল দশা থেকে রক্ষা করতে কমিটি গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, ঢাকায় এক পদে ৫০ জন চিকিৎসক, আর জেলা-উপজেলায় চিকিৎসক নেই। লাখ লাখ মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারত যাচ্ছে। লক্ষ-কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে পারলে এটা রোধ করা যাবে। তিনি আরো বলেন, কবে করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু হবে, সেটা স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। প্রয়োজনে টিকা আনা বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। কিন্তু সজাগ থাকতে হবে, যেন দুর্নীতি না হয়। ভারত কেন চুক্তির বরখেলাপ করলো? ২০ লাখ মানুষ একডোজ টিকা পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। তাদের আরেক ডোজের কী হবে, ঠিক নেই।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আপনি একজন সজ্জন ব্যক্তি। আপনার বাবা আমার সঙ্গে মন্ত্রী ছিলেন। আপনাকে আমি চিনি। অত্যন্ত ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে আপনি। কিন্তু আপনারতো কর্তৃত্ব নেই, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যা হচ্ছে। তিনি বলেন, হাসপাতালে অক্সিজেন নেই। এখন দরকার অক্সিজেন। সেটা না এনে আনা হচ্ছে এমআরআই, সিটি স্ক্যান মেশিন। পাঠানো হচ্ছে উপজেলায়। তারা সব সাজিয়ে রেখে দিয়েছে। চালাতে পারে না। লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়েও জনগণ সেবা পাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, চুরি-ডাকাতি করলে একজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা যায়। কিন্তু আইন কেন নিজের হাতে তুলে নেওয়া হলো? এটা নিয়ে জাতিসংঘ, সারা পৃথিবী কথা বললো। আমাদের মুখটা কোথায় গেল? নিজেদের দুর্বলতা নিজেদের ঢাকতে হয়।
দেশের টাকা পাচার হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, বিদেশে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি চলে যাচ্ছে। ওভার আর আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে যাচ্ছে। এর বাইরে হুন্ডির পরিমাণ ধরলে আল্লাহ মাবুদ জানেন কত টাকা বিদেশে গেছে!
রুমিন ফারহানা বলেন, ২০১৯ সালে সরকারি হিসাব মতে মন্দ ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২০ সালে সেটা কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। ২০২১ সালে এসে শুনলাম ৮৮ হাজার কোটি টাকা মাত্র। আসলে ব্যাংকে মন্দ ঋণের পরিমাণ কত? তিনি বলেন, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই শেয়ারবাজার শুয়ে পড়ে। এটা যে কি একটা অদ্ভুত সম্পর্ক এটা এখনও বুঝতে পারিনি।
বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী (আবুল মাল আবদুল মুহিত) স্পষ্ট কথা বলতেন, দলের বিরুদ্ধে গেলেও বলতেন। তিনি বলেছিলেন, ব্যাংক দেয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। একটা দেশে যখন রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক দেয়া হয় তখন সেই দেশের অর্থনীতির কাজ সম্পর্কে বলতে নিশ্চয়ই চিন্তা করতে হয়। যারা ব্যাংকের টাকা লুট করে তাদেরকে সুবিধা দেয়ার জন্য একটার পর একটা নতুন আইন হয়। ব্যাংক কোম্পানিতে আইন পরিবর্তন করে এক একটা ব্যাংক এক একটা পরিবারের হাতে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন এক পরিবার থেকে তিনজন সদস্য থাকতে পারবেন ব্যাংকের পরিচালক পদে, একাধিকক্রমে তিন মেয়াদে থাকতে পারবেন তারা। এসব পরিবর্তনের কারণে এক একটা পরিবার একটা ব্যাংকের মালিক হয়ে যাচ্ছে। জনগণের টাকার হরিলুট হচ্ছে।
রুমিন ফারহানা বলেন, একবার সংসদে ঋণ খেলাপির তালিকা প্রকাশ করা হলো। তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেটা এখনও জানতে পারলাম না। ব্যাংকে যে টাকা থাকে সেটা আমাদের মত আমজনতার টাকা। সেই টাকা এক ব্যাংকের পরিচালকের সঙ্গে আরেক ব্যাংকের পরিচালকদের ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে ঋণ নেয়। ঋণ নেওয়ার সময় তারা জানে এই ঋণ তারা আর পরিশোধ করবে না। এই টাকা চলে যায় বিদেশে।
পাচারের অভিযোগ করে তিনি বলেন, গ্লোবাল ফাইন্যান্স ইন্টিগ্রিটির তথ্যানুযায়ী প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রায় ১ লাখ কোটি বিদেশে চলে যাচ্ছে। গত ১০ বছরে প্রায় সাড়ে ৮ থেকে ৯ লাখ কোটি টাকা বিদেশে চলে গেছে।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, স্বাস্থ্য খাতে অবহেলার মাশুল দিতে হচ্ছে। জিডিপির অন্তত পাঁচ শতাংশ এই খাতে বরাদ্দ দেওয়া উচিত ছিল। দক্ষিণ এশিয়ার সবদেশে বরাদ্দ বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। করোনাকালে ভারত স্বাস্থ্য খাতে আগের বছরের তুলনায় ১৩৭ শতাংশ বেশি বরাদ্দ দিয়েছে। বাংলাদেশে বেড়েছে মাত্র ১২ শতাংশ। আবার যেটুকু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাও ব্যবহার হয়নি। তিনি বলেন, ১০ মাসে স্বাস্থ্য খাতে এডিপির মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। এখন নতুন বরাদ্দ চাইছে। কেন ৭৫ শতাংশ অব্যবহৃত রয়েছে, তার জবাব দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, দেড় বছরে মাত্র ৫টি জেলায় নতুন আইসিইউ স্থাপন হয়েছে। এখনও ৪৫টি জেলায় আইসিইউ নেই। আগে এমপি, মন্ত্রী, ব্যবসায়ীরা শর্দি-কাশি হলেও বিদেশে চিকিৎসা নিতেন। কিন্তু করোনা দেখিয়েছে দেশের চিকিৎসা ছাড়া উপায় নেই।
সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্যসেবা একটি ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। দেড় বছর যাবত করোনা চলছে। তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে খুবই সফলতা দেখিয়েছে। যে কারণে জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক আছে।
করোনা মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওষুধের কোন ঘাটতি হয়নি। অক্সিজেনের অভাব কখনোই হয়নি। আমেরিকায় যে চিকিৎসা এখানেও একই চিকিৎসা হয়েছে। ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান আছে। এসব কারণে মৃত্যুর হার দেড় শতাংশ। পৃথিবীতে এই হার আড়াই শতাংশ। তিনি বলেন, ভারতে করোনা বেড়ে যাওয়ায় সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা সরবরাহ করতে পারছে না। চীন, রাশিয়া ও আমেরিকা থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে চুক্তিও হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আরো অনেক ভ্যাকসিন ক্রয় করতে হবে। প্রতিটা ব্যক্তির ক্ষেত্রে টিকার জন্য প্রায় ৩ হাজার টাকা করে লাগবে। করোনার সময়ও প্রতিটি ব্যক্তির জন্য সাধারণ শয্যায় চিকিৎসা নিতে ১৫ হাজার ও আইসিইউতে ৫০ হাজার টাকা করে ব্যয় হয়েছে। এটা সরকার বহন করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ