Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লিচু এক অনন্য ফল

| প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২১, ১২:১৪ এএম

এখন গ্রীষ্মকাল। শীতের পরে বসন্তের আমেজ না যেতেই শুরু হয় প্রখর রোদ। মানুষের গায়ে যেন কোন ভাবেই সইতে চায় না। আবার এই সময়ে কৃষকের ধান কাটা শুরু হয়। রোদে না পুড়ে উপায় নেই। এই কৃষকগন ঠিক ভাবে শ্রম না দিলে আমরা শহুরেরাও যে কষ্টে থাকতে হবে। মহান রবের কত মায়া এই সময়ে ফলে ফলে বাংলার চারিদিক ভরে যায়। আর ফলের মাস বলেই জৈষ্ঠ মাসকে মধু মাস নামই দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে এত ফল হয়, যে মানুষের রোদের পোড়ার ক্লান্তি এবং শরীরের ক্ষতি এই ফল খাওয়ার কারনে কাটিয়ে ঊঠতে কোন বেগ পেতে হয় না। এই সময়ের এক সুস্বাদু, রসালো, নজরকাড়া রঙে রাঙ্গা ফলের নাম লিচু। লিচুর রঙে আর স্বাদে মন জুড়ায় না এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুস্কর। এই রং আর স্বাদের সাথে ফলের গুনাগুন জানা থাকলে মাওলার শুকরিয়া আদায় করা আরো সহজ হয়।

লিচুর পুষ্টিগুণ:
১০০ গ্রাাম লিচুতে জলীয় অংশ ৮৪.১, ক্যালসিয়াম ১০ মি., মোট খনিজ ০.৫ মি, লৌহ ০.৭ মি., ভিটামিন বি-১০.০২, আমিষ ১.১, ভিটামিন সি ৩১ মি., শর্করা ১৩.৬, শক্তির পরিমাণ ৬৬ কিলোক্যালরি, প্রোটিন ০.৮৩ গ্রাম, চর্বি ০.৪৪ গ্রাম, আঁশ ১.৩ গ্রাম। লিচুতে ০.০২ গ্রাম ভিটামিন বি ১ এবং ০.০৬ গ্রাম বি ২ রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ০.৫ গ্রাম খনিজ লবণ পাওয়া যায় সেই সঙ্গে লিচু আরো কিছু ভিটামিন আর মিনারেলে সমৃদ্ধ।

লিচুর উপকারিতা: লিচু শরীর ঠান্ডা রাখে, তৃষ্ণা মেটায় ও শরীরের শক্তি বাড়ায়। পরিমিত লিচু খেলে শরীরের বায়ু, কফ ও পিত্ত নাশ করে। হৃদরোগী ও লিভারের রোগীদের পক্ষে লিচু উপকারী।

১. ত্বকের যত্নে: লিচু দেখতে নজরকাড়া, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তেমনি ত্বকের যত্নেও এটি অতুলনীয়। লিচু ত্বক উজ্জ্বল করতে ও বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। এই গ্রীষ্মে প্রখর রোদে পুড়ে কালচে হয়ে যাওয়া ত্বকে লিচু চটকে ভিটামিন-ই ক্যাপসুল মিশিয়ে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে, বলিরেখা থাকবে না। মৌসুমের সময় দু-বেলা চার-পাঁচটি করে লিচু খেলে বয়স বাড়লেও শরীরে লাবণ্য বজায় থাকে।

২. দাঁত ও ত্বকের রোগে: লিচুতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ যা ত্বক, দাঁত ও হাড়ের জন্য ভালো। প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ৩১ মি. গ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। নানারকম চর্মরোগ ও স্কার্ভি দূর করতে সাহায্য করে এই ভিটামিন সি।

৩. হাড় গঠনে: প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ১০ মি.গ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে। ক্যালসিয়াম দেহের হাড় গঠন করে ও হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৪. শক্তির জোগান: প্রতি ১০০ গ্রাম লিচু থেকে ৬১-৬৬ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। এটি শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। পাশাপাশি চর্বি কমাতেও উপকারী। পরিমাণে বেশি লিচু খেলে তাই যে পরিমাণ ক্যালোরি জমা হয় তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না করতে পারলে অর্থাৎ পরিশ্রম না করলে তাতে আামাদের ওজন বেশ ভালোভাবেই বেড়ে যেতে পারে।

৫. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে: লিচুতে রয়েছে খাদ্য হজমকারী আঁশ, ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। লিচু ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এতে অবস্থিত ফ্ল্যাভানয়েডস নামক উপাদান স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করে।

৬. শারিরিক সুস্থতায়: লিচুতে খাদ্য হজমকারী আঁশ, ভিটামিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা শরীরে মওজুদ থাকে ও দেহ সুস্থ রাখে।

৭. হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে: লিচুতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

৮. রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে: লিচুর পটাশিয়াম রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

৯. রক্তের লোহিত কনিকা তৈরিতে: লিচুতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, কপার, ফলেট এবং ম্যাঙ্গানিজ যা লোহিত কনিকা তৈরিতে সহায়তা করে এবং মিনারেল এর চাহিদাও পূরণ করে থাকে।

১০. শরীরের ক্লান্তি নাশে: অত্যধিক ক্লান্তিতে বা দীর্ঘ রোগভোগের পর দুর্বলতায় প্রতিদিন চার-পাঁচটি লিচু সামান্য লবণ মিশিয়ে খেলে খুব ভাল উপকার পাওয়া যায়।

১১. ভুলে যাওয়া প্রবনতা রোধে: মস্তিষ্কের দুর্বলতায় স্মৃতিবিভ্রম ঘটলে যাদের ভুলে যাওয়ার প্রবনতা হয়, তাদের দিনে আট দশটা লিচু লবণ মিশিয়ে খেলে স্মৃতিশক্তি স্বাভাবিক হয়।

১২. যকৃতের রোগে: যকৃতের রোগে ভুগলে ঠিকমতো ক্ষুধা হয় না। দাস্ত ও অপরিষ্কার হয়, খাদ্যে অরুচি ভাব থাকে। এক্ষেত্রে দিনে দুবার লিচুর শরবত খেলে বা দু-বেলা ৫-৭ টি লিচু খেলে যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়।
এছাড়াও লিচুতে থাকা উপাদান উপাদান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লুয়েঞ্জা হিসেবে কাজ করে। এ উপাদান রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে, ত্বকে ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করে এবং ওজন কমায়।

অতিরিক্ত লিচু খেলে ডায়াবেটিস রোগী, যারা ঔষধ সেবন করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেন তাদের শরীরের গ্লুকোজ মাত্রাতিরিক্ত কমে যেতে পারে। রক্ত চাপের রোগীদের রক্তের চাপ বেশি কমে যেতে পারে। এ দিকে খেয়াল রাখা জরুরী। তাই লিচু খেতে হবে পরিমিত।

মুন্সি আব্দুল কাদির
ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড, সিলেট।



 

Show all comments
  • ইলাজ উদ্দিন ৪ জুন, ২০২১, ৬:০৬ পিএম says : 0
    লেখা অনেক সুন্দর এরকম লেখা আমাদের উপকার আসে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লিচু এক অনন্য ফল

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ