Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যোগী রাজ্যে মসজিদ ভেঙে ফের মুসলিমদের বিরুদ্ধেই মামলা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

ভারতের একটি আদালতে দায়ের করা মামলায় উত্তরপ্রদেশের একটি স্থানীয় সরকার প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে যে, তাদের মসজিদ ধ্বংস করার বিরোধিতাকারী ৮ মুসলিম নেতার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছিল।

বড়বাঙ্কি জেলার স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে গত মাসে মসজিদ গরিব নওয়াজ আল মারুফ ধ্বংসের ফলে হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল এবং বহু স্থানীয় মুসলিম আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছিল।

এ ধ্বংসকাণ্ডের পর বড়বাঙ্কি প্রশাসন ৮ জন স্থানীয় মুসলিম নেতার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে যারা মসজিদটি ধ্বংসের বিরোধিতা করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, নথিপত্র জাল করে তারা সরকারি জমিতে মসজিদটির অবৈধভাবে নিবন্ধিত করান।
মঙ্গলবার প্রকাশিত এলাহাবাদ হাইকোর্টে দায়ের করা একটি আবেদনে মসজিদ প্রশাসনের প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন যে, মুসলিম নেতাদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ পুলিশ রিপোর্ট করা হয়েছে। বিচারকরা দেখতে পান যে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে নথি জাল করার অভিযোগ করা হলেও রাজ্য সরকার আদালতে কোনও প্রমাণ সরবরাহ করেনি। এসময় আদালত সরকারকে প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য আরো তিন সপ্তাহ দিয়েছে। মামলায় সম্মানিত মুসলিমদের গ্রেফতারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।

সরকারি জমিতে অনুপ্রবেশকারী একটি ‘অবৈধ কাঠামো’ বলে অভিহিত করে স্থানীয় প্রশাসন ১৭ মে মসজিদটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল। এ ধ্বংসকাণ্ডকে ১৯৯২ সালে ডানপন্থী হিন্দু জনতার ভেঙে ফেলা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সাথে তুলনা করা হচ্ছে।
উত্তর প্রদেশ সরকার হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত, যারা কেন্দ্র সরকারকেও নিয়ন্ত্রণ করে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ পার্টির অন্যতম কট্টরপন্থী নেতা, তিনি মুসলিম বিদ্বেষের জন্য পরিচিত।

মসজিদ ভাঙার পর, মসজিদ গরিব নওয়াজ আল মারুফ কমিটি এবং রাজ্যের সব মসজিদ পরিচালনার তদারকিকারী উত্তরপ্রদেশ ওয়াক্ফ বোর্ডের কর্মকর্তারা মসজিদ ধ্বংসকে ‘স্পষ্টত অবৈধ’ বলে চ্যালেঞ্জ জানান এবং পুনর্নির্মাণের দাবি জানান।

বড়বাঙ্কি প্রশাসন তখন থেকেই সেখানে কোন মসজিদ থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে এবং ভবনটিকে একটি ‘অবৈধ নির্মাণ’ হিসাবে আখ্যায়িত করে। দ্য গার্ডিয়ান যেসব নথি দেখেছে তাতে দেখা যায় যে, ভবনটি প্রথমে একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থায় মসজিদ হিসাবে নিবন্ধিত হয় ১৯৬৮ সালে। ৬৫ বছর বয়সী চৌধুরী হাসিনও নিশ্চিত করেছেন যে, স্থানীয় প্রশাসন তার পিতা আনোয়ার হুসেনকে ১৯৫৬ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে নিযুক্ত করেছিল। তিনি বলেন যে, এটি ‘ব্রিটিশ আমল থেকেই’ ছিল।

মসজিদ কমিটি এবং সেখানে নামাজ আদায়কারী মুসলমানদের বিরুদ্ধে বড়বাঙ্কি প্রশাসনের কয়েক সপ্তাহ হয়রানির পর এটি ধ্বংস করা হয়। কমিটিকে একটি নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছিল, যাতে অভিযোগ করা হয় যে, কাঠামোটি একটি ‘অবৈধ নির্মাণ’ এবং মসজিদে মুসলিমদের নামাজ পড়তে বাধা দেয়ায় পুলিশের সাথে মুসল্লিদের সংঘর্ষের পরে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং কয়েক ডজন গ্রেফতার হন।

মসজিদ ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্তটিকে ২৪ এপ্রিল গৃহীত একটি উচ্চ আদালতের আদেশেরও লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করা হয়েছে, যেখানে উত্তরপ্রদেশের সব ধ্বংসকাণ্ড এবং উচ্ছেদ ৩১ মে পর্যন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
বড়বাঙ্কি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদর্শ সিং বলেছেন যে, প্রশাসন আইনটি ‘সম্পূর্ণ মেনে’ কাজ করেছে। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ