পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কুমিল্লা জেলার উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালীরা ড্রেজার মেশিন দিয়ে ফসলী জমি ও ভূগর্ভস্থ মাটি কেটে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। ভূগর্ভস্থ কোটি কোটি ঘনফুট মাটি তুলে নেয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৫০-৬০ ফুট গভীর কৃত্রিম নর্দমা সৃষ্টি হওয়া ছাড়াও ব্যাপক ভূমিধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে একদিকে যেমন কৃষিজমি বিলুপ্ত হচ্ছে, অন্যদিকে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত সরজমিন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কুমিল্লার উত্তরাঞ্চলে অবাধে ভূগর্ভস্থ মাটি উত্তোলনের ফলে বহুমাত্রিক বিপর্যয়ের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। দুর্বৃত্ত শ্রেণী ড্রেজার মেশিন দিয়ে বিপুল পরিমাণ মাটি লুটে নিচ্ছে। জেলার ব্রাহ্মণপাড়া, দেবীদ্বার, বাঙ্গরা বাজার, হোমনা, তিতাস, দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলায় এ মাটি লুটপাট হচ্ছে। মাটি বিক্রি করে প্রভাবশালীরা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ভুক্তভোগীরা স্থানীয় প্রশাসন ও দায়িত্বশীলদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। ভূগর্ভস্থ মাটি উত্তোলনের ফলে গভীর জলাশয় যেমন সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি আশপাশের ফসলি জমিও ধসে পড়ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিজমির মালিকরা। ভূগর্ভস্থ মাটি তোলা ও বিক্রি রোধে প্রত্যক্ষ আইন না থাকায় এ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না।
বহু বছর ধরেই দেশে ফসলি জমির পরিমাণ কমছে। বাড়িঘর নির্মাণ, নগরায়ণ এবং শিল্পায়নের কারণে প্রতি বছর এক শতাংশ করে ফসলি জমি কমছে। এছাড়া নদীভাঙন ও উপকূলে লবণাক্ততা বৃদ্ধিতেও ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। এ নিয়ে পরিবেশবিদ ও ভূতাত্তিকগণ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ফসলি জমি রক্ষা এবং অনাবাদী জমি আবাদযোগ্য করে তোলার তাকিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এক ইঞ্চি জায়গাও যেন অনাবাদী না থাকে। দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর এ আহবানকে উপেক্ষা করে একটি শ্রেণী ড্রেজিং ও অন্যান্য কারণে ফসলি জমি বিনষ্ট করে চলেছে। কুমিল্লায় ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে যেভাবে ভূগর্ভস্থ মাটি তোলা হচ্ছে তা অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালেই হচ্ছে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে মাটি লুট করে ইটভাটা, বসতবাড়ির ভিটা বা অন্য জমি ভরাট করা হচ্ছে। এই অপকর্ম যে শুধু কুমিল্লায় হচ্ছে তা নয়, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, সারাদেশেই সর্বনাশা এ কাজ চলছে। সাধারণত জমির টপসয়েল থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার করা হয়। এই টপসয়েল তুলে ফেলায় জমি আর আবাদযোগ্য থাকে না। দেশের ইটভাটাগুলোর বেশিরভাগই টপসয়েল ব্যবহার করে ইট তৈরি করছে। এ নিয়ে পরিবেশবিদরা বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ ও আন্দোলন করলেও তেমন কোনো কাজ হয়নি। প্রশাসনও নির্বিকার রয়েছে। ফলে দিন দিন ফসলি জমি ইটভাটার অগ্নিগর্ভে বিলীন হচ্ছে। শুধু ইটভাটা নয়, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলেও ফসলী জমি কমছে। ফসলী জমি রক্ষা এবং এর থেকে মাটি কাটার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় যে যেভাবে পারছে তা ধ্বংস করে চলেছে। ড্রেজিংয়ের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ বিধানে এ সংক্রান্ত কিছু বিধি উল্লেখ রয়েছে। এর ৫ নম্বর বিধানের (১ ধারা) বলা হয়েছে, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, ড্রেজিং কার্যক্রমে বাল্কহেড বা প্রচলিত বলগেট ড্রেজার ব্যবহার করা যাবে না। এই বিধান সাধারণত নদ-নদীর ড্রেজিংয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে ফসলি জমি ড্রেজিং করে পুকুর বা গভীর করে ফেলা নিয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। এ কথাও বলা দরকার, বসতবাড়ি, নগরায়ন, শিল্পায়নের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তবে এক্ষেত্রে ফসলি জমি রক্ষা করে কিভাবে করা যায় তা বিবেচনায় রাখতে হবে। ফসলি জমি কিনে তাতে যা খুশি তা করা উচিৎ নয়। এক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে একটি নীতিমালা প্রয়োজন, যাতে ফসলি জমি ক্ষতি করে এমন কিছু করা উচিৎ নয় যাতে পরিবেশ ও অন্য জমির উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যেমন খুশি তেমন মাটি খনন-উত্তোলন কিংব অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে ভূমিক্ষয় ও ভূমিধসের সৃষ্টি হয়। এতে মাটির ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। গত কয়েক দিনে সিলেটে একাধিকবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক যেমন কারণ রয়েছে, তেমনি মনুষ্যসৃষ্ট কারণও রয়েছে। সিলেট পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় তা কেটে অসংখ্য স্থাপনা ও ঘরবাড়ি নির্মিত হয়েছে। এতে মাটির স্তর ও পরিবেশের ভারসাম্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এই ভারসাম্যহীনতাও ভূমিকম্প সৃষ্টিতে সহায়ক হয়ে উঠেছে বলে ভূতাত্তিকগণ মনে করেন। বিশেষ করে মাটির গভীরের স্তর থেকে মাটি উত্তোলনের ফলে তা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি ফাঁপা জায়গা সৃষ্টি হয়ে ভূমি ধসের সৃষ্টি হয়।
ফসলী জমি ও ভূমি দেশের অমূল্য সম্পদ। এর যেমন খুশি তেমন ব্যবহারে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। ইতোমধ্যে এর নজির দেখা গেছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। আমরা মনে করি, ফসলি জমি রক্ষা এবং ভূগর্ভস্থ মাটি উত্তোলনের ক্ষেত্রে সুনর্দিষ্ট ও কার্যকর নীতিমালা থাকা অপরিহার্য। কুমিল্লাসহ দেশের যেসব অঞ্চলে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে মাটি উত্তোলন করে ভূমি ও পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে, তা বন্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এমন নীতি করতে হবে যাতে যে কেউ চাইলেই ইচ্ছামতো ভূগর্ভস্থ মাটি উত্তোলন করতে না পারে। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসকদের সংশ্লিষ্ট এলাকায় এ ব্যাপারে নজরদারি করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।