পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
স্নেহ-ভালোবাসায় ও মানবিকতায় পূর্ণ আমাদের সমাজ কি বদলে যাচ্ছে? এ প্রশ্ন উঠেছে গতকাল প্রকাশিত কয়েকটি অমানবিক ঘটনার প্রেক্ষিতে। প্রকাশিত খবরাদিতে বলা হয়েছে, ৭০ হাজার টাকার জন্য নৃশংস খুনের শিকার হয়েছেন এক যুবক। ঈদুল আজহার আগের রাতে পাওনা টাকা দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ফরিদপুরে ১৭ বছর বয়সী পুত্র ফরিদুল হুদা তার নতুন মোটরসাইকেলের চাহিদা মেটাতে না পারায় আগুন দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে মা-বাবাকে। গত শনিবার চট্টগ্রামে ছেলের হাতে খুন হয়েছে মা। রাজশাহীতে সাত বছরের সন্তানকে কুপিয়ে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে মা। রংপুরে ২২ মাস বয়সী শিশুকন্যা হত্যার অভিযোগ উঠেছে বাবার বিরুদ্ধে। মাদারীপুরের কালকিনিতে এক স্কুলছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কারণেই স্কুলে যাওয়ার পথে ঘাতক ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে তাকে।
প্রকাশিত প্রতিটি ঘটনাই অমানবিক এবং শিউরে ওঠার মতো। আমাদের সমাজের চিরায়ত ঐতিহ্য-কৃষ্টির সাথে এসব ঘটনার কোনো মিল নেই। এসব ঘটনায় এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে, আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধে চরম অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। এর কি ধরনের ব্যাখ্যা রয়েছে, সেটি এখন সকলকেই ভাবিয়ে তুলছে। অতি সামান্য ঘটনা নিয়ে পিতা-মাতাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা যেমন অবিশ্বাস্য তেমনি যে ক’টি ঘটনা সম্প্রতি ঘটেছে তা কোনো সুস্থ মানুষের কাজ নয়। কিছুদিন আগে এক হত্যাকারী স্বীকারোক্তি দিয়েছিল হিন্দি ছবি দেখে হত্যা করতে শিখেছে। এর সত্যতা-অসত্যতা যা-ই হোক একথা অস্বীকার করা যাবে না, অপসংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদের সমাজকাঠামো বদলে দিচ্ছে। সমাজ-সংস্কৃতিতে বিপজ্জনক উপাদান প্রবেশ করছে। ছবির ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হলেও যেসব দৃশ্য দেখানো হয় সেগুলো সকলেই বোঝে। আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন এখন সুদূর গ্রাম-গঞ্জেও পৌঁছে গেছে। অন্যদিকে সমাজে সামাজিক নিয়ন্ত্রক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমাদের শিক্ষায় যেমনি মূল্যবোধ উপেক্ষিত তেমনি সমাজেও মূল্যবোধের চর্চা দিন দিন লোপ পাচ্ছে। উপরন্তু কেউ মূল্যবোধের কথা বললে তাকে নানাভাবে উপহাস করা হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে সমাজে যে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চলছে তার নেতিবাচক প্রভাবে এ ধরনের ঘটনার বিকাশ ঘটছে। সমাজবিজ্ঞানীরা এসব ঘটনার নানা ধরনের ব্যাখ্যা করছেন। তারা তাদের উদ্বেগের কথাও তুলে ধরছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, সমাজের বিভিন্ন স্তরে যেভাবে মাদক ব্যভিচার প্রবেশ করেছে তাতে সামাজিক মূল্যবোধে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সমাজকে মাদকমুক্ত করতে যে ধরনের উদ্যোগ প্রয়োজন, কার্যত তা অনুপস্থিত। একটি সমাজকে সুসংহত রাখতে শিক্ষার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার নামে অপশিক্ষার আগ্রাসন বেশি চলছে। তা না হলে একটি মোটরসাইকেলের জন্য পিতা-মাতাকে কেন হত্যার চেষ্টা হবে? মা কর্তৃক শিশু হত্যা, পিতার হাতে শিশু হত্যা হবে কেন? মূল্যবোধের অবক্ষয় ছাড়া এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই ঘটতে পারে না।
সমাজে ¯েœহ-ভালোবাসা, ভক্তি-শ্রদ্ধার আবহমান গভীর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা না গেলে আমাদের সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয় ঠেকানো যাবে না। কেবল যান্ত্রিকতা বা পাশ্চাত্য চেতনাবোধ দিয়ে এ সমাজ টিকে থাকতে পারে না। মূলত একটি সমাজকে সুসংগঠিত রাখতে রাজনীতিবিদদের ভূমিকাই প্রধান। এখন সময় এসেছে সার্বিকভাবে মূল্যায়নের। সমাজ ভিত্তি যেভাবে ভেঙে যাচ্ছে তা থেকে যদি সমাজের নেতৃত্বদানকারীরা সোচ্চার না হন তবে পারিবারিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে খুব বেশি সময় লাগবে না। সকলে সচেতন এবং বিবেকবান হলেই এসব ঘটনার প্রতিবিধান সম্ভব। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।