চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
বাংলাদেশের ইসলামি সংগীতাঙ্গনের বেশ পরিচিত একটি নাম হলিটিউন। ইউটিউব খুলে ইসলামি সংগীতের সবচেয়ে গোছালো কনটেন্ট যে কয়টি চ্যানেলে পাওয়া যায় তাদের মধ্যে হলিটিউন অন্যতম। চার মিলিয়ন ছুঁইছুঁই সাবস্ক্রাইবার নিয়ে কোটি কোটি সংখ্যার দর্শকদেরকে নিয়মিত ইসলামী সংগিতে মাতিয়ে রাখছে চ্যানেলটি। হলিটিউনকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সাবস্ক্রাইবার সমৃদ্ধ ইসলামি সংগীত চ্যানেল হিসেবেও গ্রহণ করা যায় কারণ এরচেয়ে বেশি সাবস্ক্রাইবসমৃদ্ধ ইসলামি সংগীতের কোন চ্যানেল বাংলাদেশে নেই। এ চ্যানেলে বিশেষভাবে কাজ করছেন দেশের জনপ্রিয় ইসলামি সংগীতের শিল্পীগোষ্ঠি কলরবের সংগিতশিল্পীরা।
চ্যানেলটির সিইও হিসেবে রয়েছেন কলরবের সিনিয়র শিল্পী ও সহকারী পরিচালক মুহাম্মাদ বদরুজ্জামান। তিনি এক আলাপে এই চ্যানেলটি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানিয়েছেন। ২০১১ সালের আইডিয়া হলেও চ্যানেলটির যাত্রা শুরু হয়েছে মূলত ২০১৬ সালে। আনুষ্ঠানিকভাবে 'চলার পথে' শিরোনামে মুহাম্মাদ বদরুজ্জামানের একক একটি সংগিতের মাধ্যমে চ্যানেলটির যাত্রা শুরু হয়। তারপর থেকে জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরব এর সাথে একটি চুক্তির মধ্যে দিয়ে এই চ্যানেলে কলরবের সকল শিল্পীরা ইসলামি সংগীত প্রকাশ করা শুরু করেন। ধিরে ধিরে জনপ্রিয় হতে থাকে চ্যানেলটি।
উন্নত ভিডিও মেকিং, মনোরম লোকেশনে দৃশ্যায়ন, শ্রুতিমধুর রেকর্ডিং ও ব্যাপক কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে চ্যানেলটি শ্রোতাদের হৃদয়মন জয় করা শুরু করে। যা এখন প্রায় চল্লিশ লাখ সাবস্ক্রাইবার সংখ্যায় পৌঁছেছে। এছাড়াও ইসলামি সংগীতের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রেও 'হলিটিউন' পথের দিশা হিসেবে কাজ করেছে। এ ক্ষেত্রে চ্যানেলটি সিইও বদরুজ্জামানের একটি মতামত রয়েছে এমন - 'ইসলামি সংগীতের বাণিজ্যিক ব্যবহার না হলে এ ইন্ডাস্ট্রি টিকবে না। সংগীত দিয়েই সংগীতের খরচ উঠানোসহ এর সাথে সংশ্লিষ্টদের জীবন-জীবিকা পরিচালিত হলেই তবে এই ইন্ডাস্ট্রি সামনে আগাবে।' হলিটিউনের ক্ষেত্রে বিষয়টি সত্য করে দেখিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে লেগে থাকা এবং সঠিক বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করার মাধ্যমে চ্যানেলটিকে তিনি সমৃদ্ধ করতে পেরেছেন। কেবল ইসলামি সংগীতের ভিডিও দিয়েই তিনি চ্যানেলটিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
শ্রোতাদের মতামত বিবেচনা করলে বুঝা যায় - হলিটিউনের ব্যবস্থাপনায় ইসলামী সংগীতের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় উপকার যেটা হয়েছে তা হলো ব্যাপকভাবে মানুষের কাছে ইসলামি সংগীত পৌছেছে। ইসলামি সংগীতের একটি বড় বাজার তৈরি হয়েছে। পাঠকের কাছে পৌছাতে হবে এ প্রতিযোগীতা অব্যহত থাকায় এটি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন ইসলামি সংগীতবোদ্ধারা। ইসলামি অনুসঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত সকল উৎসব ও বিভিন্ন ইস্যুতেই হলিটিউন আলাদা করে সংগীত প্রকাশ করে থাকে। শ্রোতারাও বিভিন্ন ইস্যু ও উৎসবে অপেক্ষমান থাকেন হলিটিউনের সংগীতের জন্য। এ ধারা অব্যহত থাকলে হলিটিউন সাংস্কৃতিক একটি বড় পরিবর্তনের আবহ অবশ্যই তৈরি করতে পারবে।
এই ফিচার লেখা পর্যন্ত ইউটিউবে হলিটিউন চ্যানেলটি অনুসন্ধান করে দেখা গেছে চ্যানেলটিতে প্রায় ৬০০ ভিডিও কনটেন্ট আপলোড হয়েছে যার মধ্যে প্রায় ৩০০ ভিডিও কনটেন্ট রয়েছে উন্নত ও ভালো বাজেটের মাধ্যমে করা ভিডিও কনটেন্ট। রয়েছে দেশের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের 'নিরাপদ সড়ক চাই' শিরোনামে করা আন্দোলনের পক্ষের সংগীতসহ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ঠেকানোর আহবানের সংগীত। হামদ, নাত, নাশিদ ও ইসলামি বিভিন্ন কনটেন্টের মধ্যে এ ধরণের সমাজমূখী গংগীতও ব্যাপকভাবে শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে এ চ্যানেলে। চ্যানেলটিতে এসব সংগীতের ভিডিওগুলো এ পর্যন্ত প্রায় সর্বমোট '৭৩ কোটি' বার ভিউ করা করা হয়েছে। প্রতিনিয়তই যা ব্যাপকহারে বাড়ছে।
চ্যানেলটির কার্যক্রম বিষয়ে মুহাম্মাদ বদরুজ্জামান বলেন - ইসলামি সংগীতের এ জগতটা অবশ্যই সহজ নয়। এখানে স্পন্সর পাওয়া যায় না। এখানে অর্থলগ্নী করা মানুষেরও খুবই অভাব বলেন তিনি। বদরুজ্জামান বলেন এসব সংকটের মধ্যেই হলিটিউন যে যাত্রা শুরু করেছিলো এবং এ পর্যন্ত সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে এজন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে শোকরিয়া আদায় করি এবং কলরবের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। সাথে সাথে তিনি হলিটিউনের সাথে সংশ্লিষ্ট দর্শক শ্রোতা ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে যেন আরও ভালো এবং দর্শকপ্রিয় সংগীত উপহার দিতে পারেন সবার কাছে এ দোয়া চান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।