বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ছাত্র সংগঠন শোকবার্তার মাধ্যমে শোক জানিয়ে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে।
কিন্তু এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পক্ষ থেকে কোন শোকবার্তা দেয়া হয়নি। অথচ যে কোন শিক্ষক, সাংবাদিক, সঙ্গিত শিল্পি, নায়ক, নাইকা, লেখক মৃত্যুতে শোক বার্তা দেয়া হয়।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিসের কর্মকর্তা আহমেদ সুমনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে বলেন, আমি উপাচার্যের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করতে পারি নাই। তাই উপাচার্যের শোক জানিয়েছেন এ কথা লিখোনা।
এদিকে ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের শোকবার্তায় জানিয়েছেন এই ঘটনার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, তদারক কমিটি ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এড়াতে পারে না। তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং নিহতের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
শোকবার্তা দেয়া সংগঠনগুলো হল ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রফ্রন্ট।
জাবি ছাত্রলীগ তাদের শোকবার্তায় সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদ তাদের শোক বার্তায় বলেন, একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিরাপত্তা বেষ্টনী না রাখার মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির অধিক মুনাফা লাভের প্রবণতা স্পষ্ট হয়েছে। নির্মাণাধীন ২২ নং হলের নির্মাণ কাজের তদারকির জন্য যে কমিটি করা হয়েছে, সেই কমিটির একজন সদস্য সংবাদপত্রে মন্তব্য করেছেন যে নির্মানাধীন ভবনের ধারেকাছেও তিনি যান না। অথচ ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে নির্মাণ কাজ, উপাদানের মান পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ হলের কাজের সাইট ভিজিট করাও যে তদারক কমিটির কাজ, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন বিবেচনায় এমন ব্যক্তিবর্গকে তদারকির দায়িত্ব দিয়েছেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। অতীতে আমরা এমন অভিযোগও সংবাদপত্র মারফত জেনেছি যে, কিছু শিক্ষককে না জানিয়েই ওই সকল কমিটিতে রাখা হয়েছে।
ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা আরও বলেন, শ্রমিকের প্রাণের মূল্যকে সস্তা জ্ঞান করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করার মধ্য দিয়ে নির্মাণ ব্যয় কমিয়ে মুনাফার পাল্লা ভারী করতে চায়। এই শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার দায় তদারক কমিটি নিযুক্তকারী প্রশাসন, খোদ তদারক কমিটি এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এড়াতে পারে না।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফন্ট তাদের বিবৃতিতে নিহতের পরিবারকে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানিয়ে বলেন, এরকম বৃহৎ নির্মাণ কাজে এমন নজিরবিহীন অবহেলার ফলেই আজকে শাহের আলী নামের এই শ্রমিককে প্রাণ দিতে হলো। এরিক অবহেলা চলতে থাকলে সামনে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। একইসাথে নির্মানাধীন ভবনের মান নিয়েও সকলের মনে গভীর সংশয় তৈরি হয়েছে। যারা নির্মাণ কাজ তদারকি কমিটির প্রধান দায়িত্বে আছেন, তারাই যদি নির্মাণ কাজ চলা এলাকায় একবার দেখেও না আসেন, তাহলে বোঝাই যাচ্ছে কিভাবে চলছে এই নির্মাণ কাজ। আমরা অবিলম্বে নিহতের পরিবারকে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি করছি, পাশাপাশি প্রশাসনের এই অবহেলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। নির্মাণ কাজে অবহেলা ও দুর্নীতির তদন্তের যে দাবিতে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, আমরা সেই দাবিও পুনর্ব্যক্ত করছি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী এই শ্রমিকের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ফেসবুকে দাবি তুলেছেন ২২ নং হলটির নাম শ্রমিকের নামেই করা হোক। অনেকে আবার তার পরিবারের যে কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেয়ারও দাবি তুলেছেন।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ২২ নং হলের ছয় তলা থেকে পড়ে শাহের আলী (২৫) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত শাহের আলীর বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার কচাকাটা থানায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।