২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয়, খাবার খাও কেন? চটপট করে হয়ত সে বলে বসবে ‘ক্ষুধা লাগে বলে’। কিন্তু আসলে কি তাই? না। ক্ষুধা লাগলে আমরা খাবার খাই বটে কিন্তু তার মানে এই নয় যে, খাবার শুধু ক্ষুধা মেটায়। বরং খাদ্য আমাদের দেহের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। আমাদের দেহটাকে একটি ইঞ্জিনের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। ইঞ্জিন জ্বালানি পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদন করে। সেই শক্তি দিয়েই চলে। আমাদের দেহের সব ধরনের কাজের জন্যই শক্তি দরকার হয়, আর এ শক্তি আসে আমাদের খাওয়া খাদ্যে থেকে। শরীর সুস্থ রাখার জন্য আমরা যা কিছু খাই তাই খাদ্য। সহজ করে বলা যায়, আমরা যা খাই তা যদি শরীরে কোন কাজ করে এবং ক্ষুধা নিবারণ করে ও তৃপ্তি দেয় তবে তাই খাদ্য। সুতরাং আমরা যা খাই তা যদি দেহের সঠিক বৃদ্ধি সাধন করে কর্মক্ষম রাখে এবং রোগের হাত থেকে বাঁচিয়ে সুস্থ রাখে তাহলে আমরা খাদ্য বলবো।
খাদ্য ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না। তাই খাদ্যের কোন বিকল্প নেই। ইংল্যান্ডের গ্যাস্ট্রো এন্টরোলজী বিভাগের প্রফেসর ডা. রয় পন্ডারের মতে, বিষক্রিয়া ঘটায় এমন অধিকাংশ জীবাণু প্রথমে তাপে এবং পরে খাবার পর পাকস্থলির এসিডে নষ্ট হয়। কিন্তু খাদ্যে বেশি জীবাণু থাকলে অনেক ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রে চলে যায়। এখানে এসিড কম থাকে বলে বংশবিস্তার করতে অসুবিধা হয় না। ফলে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। স্পোর সৃষ্টিতে সক্ষম এমন জীবাণু তাপ ও এসিডে নষ্ট হয় না এবং বিষ উৎপন্নকারক জীবাণুর বিষ তাপে নষ্ট হয় না। এসব ক্ষেত্রে খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
বিষক্রিয়া দেখা দিলে পায়খানা ও বমি করালে বা বেশি পরিমাণ পানি খাওয়ালে প্রায়ই রোগী ভাল হয়। এতে বমি, পায়খানা ও প্রস্রাবের সাথে জীবাণু বের হয়ে যায়। কিছু কিছু ওষুধ খেলে জীবাণু অন্ত্রে থেকে যায়। ফলে বিষক্রিয়াও থেকে যায়। পরে এই বিষক্রিয়া সারা শরীরে জড়িয়ে পড়ে। কেরোসিন, এসিড প্রভৃতি উদ্বায়ী রাসায়নিক পদার্থ খেলে এবং অজ্ঞান রোগীকে বমি করানো যাবে না। তবে বিষক্রিয়া দেখা দিলেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়াই উত্তম।
খাদ্যদ্রব্য বিষাক্ততা প্রতিরোধকরণ- * মাছি, তেলাপোকা, ইঁদুর, বিড়াল, কুকুর, হাঁস-মুরগি, কবুতর ইত্যাদি খাদ্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশন স্থান হতে দূরে রাখতে হবে এবং উক্ত স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত হতে হবে। জীবাণুমুক্ত করার জন্য বিøচিং পাউডার, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, স্যাভলন, ডেটল ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
* সবসময় খাবার তাপে ফুটিয়ে খাওয়া উচিত। ফ্রিজের হিমায়িত খাদ্য গরম করে খেয়ে আবার হিমায়িত করা ঠিক হবে না। হিমায়িত খাদ্যকে অবশ্যই স্বাভাবিক তাপে এনে গরম করতে হবে। গরম খাবারকে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রাখা উচিত। এসব না করলে স্পোর বহনকারী জীবাণু যেমন- ব্যাসিলাস, ক্লোস্ট্রডিয়াম, স্পোরসারসিনাও স্পোরো ল্যাকটোব্যাসিলাস ধ্বংস হবে না।
* যারা খাদ্য সামগ্রী তৈরি ও পরিবেশনে নিয়োজিত থাকেন তাদের হাত-পা, শরীর, কাপড়-চোপড় অবশ্যই পরিষ্কার থাকতে হবে এবং যক্ষ্মা, জন্ডিস, টাইফয়েড, কলেরা প্রভৃতি রোগমুক্ত হতে হবে। সবারই পায়খানা, প্রস্রাব করার পর টয়লেট পেপার ব্যবহার করা এবং ছাই, বালু বা মাটি দিয়ে হাত পরিষ্কার না করলে জীবাণু থেকে যায়। পায়খানা করার পর সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করলে সাবান পিচ্ছিল বলে হাতের রেখার ভিতর কখনও কখনও জীবাণু থেকে যায়। এজন্য সাবান ব্যবহার করতে সঠিক নিয়মে।
* খাদ্য পরিবেশনের তৈজসপত্র জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে।
* বাজারের খোলা খাবার খাওয়া যাবে না। ঘরেও কোন খাবার খোলা রাখা যাবে না। এতে বাতাস বহনকারী জীবাণু দ্বারা খাদ্য আক্রান্ত হতে পারে। * কাঁচাবাজার, নালা, নর্দমা, ড্রেন, বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখতে হবে। যেসব খাবার বিষাক্ত হবার সম্ভাবনা আছে সেগুলো হচ্ছে পচনশীল ভেজা খাবার, ২৪ ঘন্টার আগের তৈরি খাবার, খোলা খাবার, গন্ধযুক্ত খাবার ইত্যাদি। এসব খাবার খাওয়ার পরেও অনেক সময় সবার দেহে বিষক্রিয়া দেখা দেয় না। এর কারণ হলো যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত বেশি তাদের দেহে বিষক্রিয়া তত কম বা মোটেও দেখা দেয় না। তাই বাসি, ভেজাল, রঙ মেশানো ও কীটনাশকযুক্ত খাবার পরিহার করুন। রাতকানা বা অন্ধত প্রতিরোধে ক্যারোটিনযুক্ত খাবার গাঢ় / রঙিন শাকসবজি, ফল ও ভুট্টা নিয়মিত খাওয়ার অভ্যেস করা দরকার। পরিমিত নিয়মিত আহার, শারীরিক ব্যায়াম, বিশ্রাম, নিদ্রা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সুস্বাস্থ্যের পূর্বশর্ত।
শিক্ষক-কলামিস্ট, মোবাইল : ০১৭১৬ ২৭০১২০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।