Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গনোরিয়া : কারণ ও প্রতিকার

ডাঃ মোঃ হুমায়ুন কবীর | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০২১, ১২:০৩ এএম

গনেরিয়া বা প্রমেহ একটি যৌনবাহিত রোগ। এটি নিসেরিয়া গনোরি নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনে সৃষ্ট রোগ। এ রোগের ক্ষেত্রে রক্তের সাথে জীবানুর সংস্পর্শ তেমন থাকে না। এটি বংশানুসারে সংক্রমিত হয় না। অবাধ যৌন মিলনের ফলে নারী বা পুরুষের যৌনাঙ্গে এ রোগের জীবানু ক্ষত সৃষ্টি করে থাকে। যৌন মিলনের ফলে এক দেহ হতে অন্য দেহে স্থানান্তরিত হয়। এটি নারীর জনন নালী (জরায়ু, সারভিক্স, ফেলোপিয়ান নালীসহ) এবং নারী ও পুরুষের ইউরেথ্রোর মিউকাস ঝিল্লি, মুখ গহবর গলা, চোখ ও পায়ুপথ সহ যে কোন পথেই ছড়াতে পারে। এটি গর্ভকালীন জটিলতা সহ নারী ও পুরুষের বন্ধ্যাত্ব করতে পারে।
আবিস্কার ঃ অ্যালবার্ট নাইসার নামক এক চিকিৎসা বিজ্ঞানী ১৮৭৯ সালে এ রোগের জীবানুটি আবিস্কার করেন। ১৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এ রোগের ঝুঁকি বেশী থাকে।

সুপ্তিকাল ঃ এ রোগের সুপ্তিকাল ২ থেকে ১৪ দিন। তবে ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যেই লক্ষণসমূহ প্রকাশ পেতে শুরু করে। রোগের প্রাথমিক আক্রমণস্থান পুরষের ক্ষেত্রে মুত্র পথের সম্মুখ অংশে জীবানু সংক্রমণ শুরু করে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে তা প্রোস্টেট গ্রন্থি এমনকি মুত্রথলি বা শুক্রাশয় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সংক্রমণের উপায়ঃ এ রোগে অল্প বয়সের মেয়ে এবং শিশুরা ও আক্রান্ত হতে পারে। বাচ্চারা সংক্রমিত বিছানার চাদর, তোয়ালে থেকে রোগটি অর্জন করতে পারে। ঘনবসতি এবং অপরিচ্ছন্নতা থেকেও বাচ্চাদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর ও আক্রান্ত মাতৃদেহ হতে সংক্রমিত হতে পারে। যৌন মিলনের সময় আক্রান্ত দেহের বহিযৌনাঙ্গ, মুখ ও পায়ু থেকে সংক্রমণ ঘটে।

উপসর্গঃ
গনোরিয়া আক্রান্ত রোগীর দেহে তেমন স্পষ্ট বাহ্যিক লক্ষণ প্রকাশ পায় না বলে এটি ব্যাপক বিস্তৃত যৌনবাহিত রোগ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। নারী ও পুরুষের উপসর্গাদি লক্ষ্য করা যায়। পুরুষের ক্ষেত্রে-

০) প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া অনুভুত হয়।
০) লিঙ্গের অগ্রভাগে লালচে ভাব থাকে।
০) লিঙ্গপথে পুঁজ নিঃসৃত হয়।
০) স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিবার মুত্রত্যাগের ইচ্ছা।
০) শুক্রাশয় ও অন্ডকোষে ব্যথা অনুভব হয়।
০) এ রোগে পুরুষাঙ্গ বা গায়ে ক্ষত বা ঘা লক্ষ্য করা যায় না।
০) মুত্রনালী পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়ে প্রস্রাব বের হয়ে আসতে পারে না। ফলে কিডনীতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
০) অন্ডকোষ ফুলে আপেলের মতো বড় হতে পারে।
০) সমকামীর পায়ুপথে মিলন করলে পায়ুপথে সংক্রমন হতে পারে। ফলে পায়ুপথে তীব্র ব্যথা ও পুঁজ নিঃসৃত হতে থাকে।
০) মুখ মৈথুনে অভ্যস্তদের মুখে সংক্রমণ তথা ঘা সৃষ্টি হয় এবং গলা ব্যথা হয়।
০) দীর্ঘদিনের সংক্রমণের ফলে অস্থিসন্ধি প্রদাহ, মস্তিস্কের প্রদাহ, ত্বকে ক্ষত, সেপটিসেমিয়া এমনকি হৃৎপিন্ডের ক্ষতি হতে পারে।

স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রেঃ
১. তলপেটে ব্যথা অনুভূত হয়।
২. দুই রজ:চক্রের মধ্যবর্তী সময়ে প্রচুর যোনিস্রাবসহ রক্তপাত হয়।
৩. অনিয়মিত রজঃচক্র।
৪. জ্বর ও গায়ে ফুসকুঁড়ি।
৫. কষ্টদায়ক যৌন মিলন।
৬. কষ্টকর মুত্রত্যাগ।
৭. যৌনাঙ্গ ফুলে যাওয়া ও যোনির ওষ্টে লালসহ দগদগে ঘা হয়।
৮. যৌনিপথে অস্বাভাবিক রস (সাদা, সবুজ বা হলুদ) নিঃসরণ হয়।
৯. বার্থোলিন গ্রন্থির প্রদাহ হয়।
১০. ডিম্বাবাহী নালীতে প্রদাহ হয়।
১১. পায়ুপথে সংগম থেকে বা নিজের সংক্রমিত যৌনি থেকে মলদ্বারে সংক্রমন হতে পারে।

গনোরিয়ায় আক্রান্ত নারী ও পুরুষের উভয়ের দেহে মলাশয় থেকে স্রাব, মলদ্বারে চুলকানী, ক্ষত, রক্তপাত, মলত্যাগ প্রচন্ড ব্যথা প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। তাছাড়াও গলবিল সংক্রমিত হলে গলাভাঙ্গার উদ্ভব ঘটে।

জটিলতাঃ
গনোরিয়ার জীবানু মহিলার জননতন্ত্রের মধ্যে বিচরণ করে ডিম্বাবাহী নালীতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারে এবং আক্রান্ত মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব ঘটতে পারে। গর্ভাবস্থায় আক্রান্ত হলে মহিলার যোনি হতে বাচ্চার চোখ আক্রান্ত হতে পারে। বাচ্চার উপযুক্ত চিকিৎসা না করালে চোখে প্রদাহ এমনকি অন্ধত্বও হতে পারে। শুক্রনালী বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং অন্ডকোষ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে যৌনরসে শুক্রানু না থাকাতে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব ঘটতে পারে।

প্রতিকার ও চিকিৎসাঃ
সামান্য সতর্কতা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্বন্ধে জ্ঞান রাখলে গনোরিয়ার মত মারাত্মক যৌনবাহিত রোগ থেকে নিজেকে ও ভবিষ্যত বংশধরকে নিরাপত্তা দেওয়া খুব সহজ। এ জন্য অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে দ্রæত চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে হবে।
১) যৌনসংগী নির্বাচনে অবশ্যই সতর্ক ও নিশ্চিত থাকতে হবে।
২) রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত যৌন মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩) হোমিওপ্যাথি মতে উপসর্গ অনুসারে গ্রহন করলে রোগ প্রতিরোধ করা যায়। পুনরায় আর ফিরে আসে না, তাই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট চিকিৎসা গ্রহন করলে রোগটি হতে উপশম পাওয়া সম্ভব।
পরামর্শ ঃ ঔষধ গ্রহনের ২ সপ্তাহ পরে ভিডিআরএল পরীক্ষা করতে হবে। আবার ৪ সপ্তাহ পরে উক্ত পরীক্ষা করে আরোগ্যর ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।

ডিজিটাল হোমিওপ্যাথিক ট্রিটমেন্ট নেটওয়ার্ক,
৮২/৮ উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪।
রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার
৮৯, সিটি করপোরেশন মার্কেট, নিমতলী, ঢাকা-১০০০।
মোবাইলঃ ০১৭১৭৪৬১৪৫০।



 

Show all comments
  • kajolmoy das ২৬ জুলাই, ২০২১, ২:১৭ পিএম says : 0
    i have been suffering from this for about 20 years
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ সুমন আহমেদ ৭ অক্টোবর, ২০২১, ১০:১১ পিএম says : 0
    আমার পুরুষাঙ্গ দিয়ে পুঁজ বের হয় আর প্রসাব করার সময় জালা পোড়া করে।আমার করনীয় কী?
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ রাসেল মির্জা ১৩ মার্চ, ২০২২, ৩:৩৭ পিএম says : 0
    অনেক কিছু শিখা হল এবং জানা হল.......ধন্যবাদ ভাই।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ ফারুক ২৮ মার্চ, ২০২২, ১২:২৬ পিএম says : 0
    সার,আমার লিংগ জ্বালাপোড়া করে এবং লিংগ দিয়ে পুজ বের দুই দিন ধরে এরকম। আমি এই রোগটি থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে পারি,দয়া করে জানাবেন খুব কষ্টে আছি
    Total Reply(0) Reply
  • Mainoddin Oddin ১০ জুন, ২০২২, ১১:২০ পিএম says : 0
    লিংগেদিয়ে পুচ বেরহয় আমি এখন কি করব আমি মালদিপ প্রভাসি মালদিপ থাকি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গনোরিয়া
আরও পড়ুন