মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
১৯৭০ সালে সিরিয়ার ক্ষমতায় আসে আসাদ পরিবার। সে সময় তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ফিলিস্তিন, লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়া নিয়ে একসময়ে যে বৃহত্তর সিরিয়া ছিল, তা পুনরুদ্ধার করার। আরব বাথ বা রেনেসাঁয় নেতৃত্ব দেয়ারও আশ্বাসও দিয়েছিল তারা। গত ২৬ মে কথিত নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থ মেয়াদে আরও সাত বছরের জন্য ক্ষমতায় বসতে চলেছেন বাশার আল-আসাদ। কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে সিরিয়ার যে বিশাল অঞ্চলের শাসনভার পেয়েছিলেন তিনি, ইতোমধ্যে তার অনেকটাই হাতছাড়া হয়ে গেছে এ নেতার। এ কারণেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে সিরিয়া এখন নিয়ন্ত্রণ করছে কে?
১৯৩৬ সালে ফ্রান্সের সঙ্গে স্বাধীনতা চুক্তি সইয়ের পরপরই ভূমি হারাতে শুরু করে সিরিয়া। ১৯৩৯ সালে অ্যালেক্সান্ড্রেটার বাসিন্দারা তুরস্কের সঙ্গে যোগ দেয়ার পক্ষে ভোট দেন। ১৯৬৭ সালে গোলান মালভূমির প্রায় পুরোটাই দখল করে নেয় ইসরাইল। তবে ২০১১ সালে সিরীয় বিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করলে এসব ক্ষতি আসলে কিছুই নয়। সেসময় দামাস্কাসের প্রাণকেন্দ্রে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে সিরিয়ার বেশিরভাগ এলাকা থেকে সরকারি বাহিনী সরিয়ে নেয়া হয়। এর ফলে খুব সহজেই ওইসব অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হাতে। ২০১৪ সালে ফোরাত উপত্যকাসহ ইরাক সীমান্তবর্তী তেলক্ষেত্রগুলো দখল করে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। বলা হয়, সবচেয়ে দুরবস্থা চলাকালীন ওই সময়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল গোটা দেশের মাত্র ৩০ শতাংশ এলাকা।
আজকের সিরিয়া মূলত চারটি বড় ছিটমহলে পরিণত হয়েছে, যার প্রত্যেকটিতে নিজস্ব আধিপত্যবাদী জাতি বা গোষ্ঠী, সশস্ত্র বাহিনী এবং মুদ্রা রয়েছে। আসাদের সম্প্রদায় আলাওরা এখনো সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে। তারা আলেপ্পো থেকে দারার মতো বাণিজ্যিক শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে, কিন্তু সেগুলো ধ্বংস করার মাধ্যমে। সব মিলিয়ে বলা হচ্ছে, আসাদ সমর্থকরা এখন সিরিয়ার প্রায় ৬০ শতাংশ শাসন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন একটি জোট আইএস’কে পরাস্ত করে এবং তারা যেসব তেলক্ষেত্র ও উত্তর-পূর্বের এলাকার দখল নিয়েছিল সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ কুর্দিদের হাতে তুলে দিয়েছে। তবে সিরিয়া সরকারের পাল্টা আক্রমণে পালিয়ে যাওয়া সুন্নি যোদ্ধাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলেছে তুরস্ক। এটি ইদলিবসহ উত্তর-পশ্চিমে বহুদূর এগিয়েছে, যেখানে হায়াত তাহরীর আল-শাম নামে একটি বিদোহী গোষ্ঠীর শাসন চলছে। জর্ডানের সমর্থনপুষ্ট সিরীয় বিদ্রোহীরা দক্ষিণের কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। আর পূর্বের কিছু এলাকায় এখনো আইএসের প্রভাব রয়েছে।
বাশার আল আসাদ বলেছেন, তিনি সিরিয়ার প্রতি ইঞ্চি জায়গার দখল ফিরে পেতে চান। তবে তিনি সম্ভবত সামর্থ্যের শেষসীমায় পৌঁছে গেছেন। সিরিয়ার প্রত্যেকটি বিভক্ত অঞ্চলের অন্তত একটি করে বিদেশি রক্ষাকর্তা রয়েছে। আসাদ পরিবারকে ডিঙিয়ে রুশ, মার্কিনি, তুর্কি এবং ইরানিরা সিরিয়ার স্থিতিশীলতা সংক্রান্ত একাধিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। অবশ্য এর ফলে পাঁচ বছর আগে যেখানে দৈনিক ২০০ হামলা হতো, তা এখন মাসে ৪০টিতে দাঁড়িয়েছে।
তবে এর মধ্যেও কঠিন চাপের মুখে রয়েছেন আসাদ। তার দেশ এতটাই দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে যে, দক্ষিণে ড্রুজ উপজাতি এবং পূর্বে আরবরা নিজেরাই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সিরীয় রাজধানীর বাইরে রুশ বাহিনীর পদযাত্রা অচিহ্নিতই থেকে যাচ্ছে। ইরান এবং এর ছায়া যোদ্ধারা লেবাননের পূর্বভাগ এবং ইরাকের পশ্চিমে সীমান্ত অঞ্চলগুলোর বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। আর ইসরাইল তো নির্বিচারে বোমা মেরে চলেছে। অর্থাৎ সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আসাদ পরিবার, সেক্ষেত্রে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।