পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মো. অপু ওরফে হৃদয় (১২), মো. কাউসার (১৪) ও মো. জুয়েল (১৩)। চট্টগ্রাম নগরীর স্টেশন এলাকা থেকে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তারা। তাদের হাতে ছিল তিনটি ছোরা। পুুলিশ বলছে, ছিনতাইয়ের জন্য ওৎপেতে থাকা অবস্থায় তাদের পাকড়াও করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে পুরাতন স্টেশন এলাকায় পথচারী ও রিকশা আরোহীদের গতি রোধ করে ছিনতাই করে আসছিল তারা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ওই তিন কিশোর স্বীকার করে শৈশবকাল থেকেই ছিনতাই, ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়েছে তারা।
রোববার সন্ধ্যায় নগরীর কাজির দেউড়ি মোড়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে মোবাইল ও টাকা-পয়সা ছিনতাইয়ের ঘটনায় অর্পণ বড়ুয়া (১৫) এবং রাকিবুল ইসলাম আলিফ (১৬) নামে দুই কিশোরকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। থানার ওসি জানান, দুজনই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান এবং নগরীর একটি নামকরা স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র। একইদিন নগরীর কোতোয়ালী থানা এলাকা থেকে তিন কিশোরকে পাকড়াও করে পুলিশ। তারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে প্রতিপক্ষের উপর হামলার ঘটনায় জড়িত। অপু, কাউসার, জুয়েল, অর্পণ ও আলিফের মত কিশোররা নগরীতে হরেক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ছিনতাই, ডাকাতি, দস্যুতা, চুরিসহ খুন, ধর্ষণের মত ভয়ঙ্কর অপরাধেও ধরা পড়ছে কিশোর এবং উঠতি যুবকরা।
বস্তিতে বেড়ে উঠাদের সমান্তরালে নগরীর অভিজাত এলাকার কিশোরেরাও বিপথগামী হচ্ছে। করোনায় দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। তাদের বিরাট অংশ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে মারদাঙ্গা, খুনোখুনি, মাদকের ব্যবসা এমনকি মাদক সেবনেও জড়িয়ে পড়ছে কিশোরেরা। বেশ কয়েকটি ঘটনায় কিশোরীদেরও এমন ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। রাজনৈতিক দলের ক্যাডার, মাস্তান ও নেতাদের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কিশোরদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন কোন অপরাধ নেই যেখানে কিশোরদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে না। শুধুমাত্র পুলিশি কার্যক্রমের মাধ্যমে এ অপরাধ প্রবণতা রোধ করা সম্ভব নয় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা। সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, নৈতিক শিক্ষার অভাব, পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে পড়াসহ আকাশ সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাবে নতুন প্রজন্ম বিপথে ঘুরছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। রাজনৈতিক দলের নেতা ও ক্যাডার মাস্তানদের নেতৃত্বে গড়ে উঠা এসব গ্যাংয়ে বস্তির বাসিন্দা থেকে শুরু করে অভিজাত পরিবারের সন্তানরাও রয়েছে। নগরীতে কিশোর গ্যাংয়ের বিরোধে সংঘটিত কয়েকটি খুনের ঘটনা তদন্তে নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের সাথে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের বখে যাওয়া কিশোরদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এলাকাভিত্তিক গড়ে উঠা কিশোর গ্রুপের সদস্যরা দলবেঁধে এলাকায় আড্ডা দেয়।
ইভটিজিং থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। সাইকেল কিংবা মোটরসাইকেলে দলবেঁধে এলাকায় মহড়া এবং ভীতি ছড়ানোর মত ঘটনাও ঘটছে। বড় ভাইদের নির্দেশে প্রতিপক্ষের উপর হামলা এমনকি লুটপাটেও জড়ায় তারা। রাজনৈতিক সংঘাত, সহিংসতায়ও কিশোরদের জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। আধিপত্য বিস্তারে গ্যাং লিডারের নির্দেশে তারা মারদাঙ্গায় জড়িয়ে পড়ছে। টার্গেট কিলিংয়েও অংশ নিচ্ছে উঠতি বয়সের কিশোর-যুবকেরা। দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায়ও গ্রেফতার হচ্ছে কমবয়সী এসব কিশোরেরা।
রমজান মাসে নগরীর বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাই ও দস্যুতার ঘটনায় শতাধিক অপরাধীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের বিরাট অংশ কিশোর। মাদকসহ ধরা পড়ছে কিশোর এবং উঠতি যুবকেরা। খুন, ডাকাতির ঘটনায়ও সম্প্রতি একাধিক কিশোর গ্রেফতার হয়েছে। নগরীর অলিগলির সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোতে ধরা পড়ছে একের পর এক কিশোর গ্যাংয়ের ত্রাসের রাজত্ব। কোথাও প্রকাশ্যে মারামারি করছে, কোথাও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে অংশ নিচ্ছে হানাহানিতে। আবার কোথাও টার্গেট কিলিংয়ে ব্যবহার হচ্ছে তারা। নগরীতে এ ধরনের ১৫ থেকে ২৫টি কিশোর গ্রুপের আধিপত্য রয়েছে বলে তথ্য পুলিশের।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর ইনকিলাবকে বলেন, কিশোর অপরাধ আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। এটি এখন একটি সামাজিক সমস্যা। এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা রোধে পুলিশের পক্ষ থেকে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিশু-কিশোরদের বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষায় পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে কাজ করছে পুলিশ।
বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দিন বলেন, নতুন প্রজন্মের সামনে আশার আলো নেই, কোন আদর্শ নেই। অনিয়ম-দুর্নীতি, অনৈতিকতা, গণতন্ত্রহীনতা সমাজে চরম অস্থিরতা তৈরি করেছে। খেলাধুলা এবং সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক চর্চা নেই। কিশোর-কিশোরীরা মোবাইল ইন্টারনেটে অনলাইনে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। প্রযুক্তির নেতিবাচক দিক তাদের মনোজগতে প্রভাব ফেলছে। পারিবারিক বন্ধন শিথিল এবং অপসংস্কৃতির প্রভাবে কিশোরেরা বিপথগামী হচ্ছে। এসব কারণে কম বয়সে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে অনেকে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ, দুর্নীতিমুক্ত নৈতিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে। পরিবার থেকেই নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষা চালু করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।