Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষার মান বৃদ্ধির বিকল্প নেই

প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দেশে প্রতিটি পরীক্ষার পর পাসের হার আকাশচুম্বী হলেও শিক্ষার মানের দিক থেকে সন্তুষ্ট হওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন খোদ শিক্ষাবিদরা। শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. সিরাজুল ইসলাম মনে করেন, শিক্ষার গড়পড়তা মান বাড়ছে না। কিছু ছাত্র আছে যারা পারিবারিকভাবে সামর্থ্যবান তারা কিছু শিখছে। বেশিরভাগেরই সেই সামর্থ্য নেই, তাই তারা কিছু শিখছে না। আমাদের শিক্ষকের গুণগতমান নেই। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরচালক রাশেদা কে চৌধুরী মনে করেন, গুণগত শিক্ষা অর্জনের জন্য ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি, মাল্টি মিডিয়া ক্লাসরুম অবকাঠামোসহ অনেক বিষয়ের সাথে প্রয়োজনীয় ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের দরকার রয়েছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছরই প্রশিক্ষিত শিক্ষকের সংখ্যা কমছে। এমনকি শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মনে করেন, শিক্ষার গুণগতমান যতটুকু বাড়া উচিত ছিল হয়তো ততটা বাড়েনি। গুণগতমান অর্জন করা বর্তমান সময়ে শিক্ষাক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও। এক আলোচনায় তিনি বলেছেন, আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষার মান সবচেয়ে খারাপ। শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত ও দুর্বল মাধ্যমিক শিক্ষা। এদিকে গতকাল প্রকাশিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদনেও মূলত শিক্ষামানের দুর্বলতার নানা দিক ফুটে উঠেছে। শিক্ষাবোর্ডের অবহেলা এবং শিক্ষকদের উদাসীনতার নানা চিত্র পাওয়া যায় এসব রিপোর্টে।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণে সকল বোর্ডে অসংখ্য ভুল ধরা পড়েছে। অনলাইনে খাতা পুনঃনিরীক্ষণে আড়াই হাজারেরও বেশি পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তিত হয়েছেÑ যাদের প্রত্যেকেরই ফল আগের তুলনায় ভাল হয়েছে। ফেল থেকে পাস ও জিপিএ- এ দু’টি ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তন নিয়েও নানামাত্রিক আলোচনা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এধরনের প্রতিটি ঘটনার সাথে শিক্ষাবোর্ডের অসাধু কর্মকর্তা এবং কিছু শিক্ষক জড়িত। পরীক্ষা শেষে খাতা বণ্টনের সময় অনেক ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেয়া হয়। কম যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকদের অধিক পরিমাণ খাতা দেয়া হয়। অনেক যোগ্যপরীক্ষককে নানা অজুহাতে খাতা না দিয়ে সে খাতা অযোগ্য অথবা অধিকতর নতুনদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। অথচ প্রতিবছর পরীক্ষক মূল্যায়নের যে বিবরণী তৈরি করা হয় খাতা বণ্টনে তা অনুসরণ করা গেলে খাতা দেখার মান অনেকটাই নিশ্চিত করা সম্ভব হতো। উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য সময় দেয়া হয় মাত্র দু’সপ্তাহ। এ সময়ের মধ্যে তিনশ’ খাতা ভালোভাবে দেখা সম্ভব নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে দেয়া হয় ছয়/সাতশ’ খাতা। অভিযোগ রয়েছে, সময় স্বল্পতার কারণে অনেকেই কাজে সহায়তার জন্য পরিবারের অন্যদের শরণাপন্ন হন। খাতা দেখার ক্ষেত্রে নীতির ব্যাপারটিও গুরুত্বপূর্ণ। অন্য খবরে বলা হয়েছে, কারিগরি বোর্ডের খাতা দেখেন কম্পিউটার অপারেটর। পরীক্ষার খাতা দেখা নিয়ে আগেও অভিযোগ ছিল। বর্তমান পদ্ধতি পুরনো পদ্ধতিরই চলমান অবস্থা। সেসময়ও পুনঃপরীক্ষণে ফলাফল পরিবর্তিত হতো। পার্থক্য শুধু এই, তখন ভুল হতো দু’চারটি, এখন হচ্ছে শয়ে শয়ে। এতো অধিক সংখ্যক পরীক্ষার খাতা দেখা বা পুনঃমূল্যায়নের বিষয়টি শিক্ষামানের বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। শিক্ষামন্ত্রী নিজেও স্বীকার করেছেন শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মানোন্নয়ন হচ্ছে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, শিক্ষার মানের সাথে যথাযথ শিক্ষা ব্যবস্থা অপরিহার্য। বর্তমানে শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যয় যেমন বেড়েছে, তদ্রƒপ ব্যয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে মান বাড়ছে না।
সরকারের পক্ষ থেকে যেমন জনগণের টাকা ব্যয় করা হচ্ছে তেমনি অভিভাবকদেরও সন্তানের শিক্ষার ক্ষেত্রে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। অথচ কাক্সিক্ষত মানের ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। এর দায় যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক পরিচালনা পরিষদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও আন্তরিকতার অভাবের উপর বর্তায়। অভিযোগ রয়েছে, পরিচালনা পরিষদের সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে জাল সার্টিফিকেট ব্যবহার করা হয়। এই যদি হয় পরিস্থিতি তাহলে তারা যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিবেন কীভাবে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যোগ্যতার সাথে পরিচালনাই বা করবেন কী ভাবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা এমনকি সাধারণ আলাপচারিতায়ও শিক্ষার্থীদের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজী বিভাগে মাত্র দু’জন উত্তীর্ণ হওয়া যেমনি শিক্ষার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তেমনি একথাও বলা অপ্রাসঙ্গিক নয় যে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে যারা বেরুচ্ছে তাদের শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন থাকতে পারে। শিক্ষার মান কোন রাখ-ঢাকের বিষয় নয় । এটি দৃশ্যমান। শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদ-। সেই শিক্ষারমান নিয়ে যাদি প্রশ্ন ওঠে তাহলে জাতি হিসেবে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে শিক্ষার মানোন্নয়নে আপোষহীন অবস্থান গ্রহণ করা প্রয়োজন। মনোযোগী ও তৎপর হওয়া প্রয়োজন।

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিক্ষার মান বৃদ্ধির বিকল্প নেই
আরও পড়ুন