পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কিছুদিন আগের এলিফ্যান্ট রোডের ঘটনায় আমাদের সমাজের অবক্ষয়ের বাস্তব চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। আল্লাহ অনেকটা রক্ষা করেছেন এই মারমুখি আচরণ, অশ্লীল বাকবিতন্ডা ইংরেজিতে হয়নি। ডা. সাহিদা শওকত, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব ও পুলিশ অফিসার সবাই উচ্চশিক্ষিত। এই বাকবিতন্ডা ইংরেজি ভাষায় হলে এই ভাইরাল হওয়া বিষয়টি সারা বিশ্বের মানুষ দেখে বুঝতো যে আমরা কতটা সভ্য জাতি। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক সম্মানিত করেছেন। যারা বাংলার স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন তাদের সন্তান হয়ে কেউ এরকম কটাক্ষমূলক কথা বলুক, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এসব বিষয় থেকে অবশ্যই আমাদের শিক্ষা নেওয়ার দরকার। মনে রাখা উচিৎ, সবচাইতে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরাই চিকিৎসা, প্রকৌশল এবং প্রশাসন ইত্যাদি পেশায় আসে। মেধাবী না হলে এসব পেশায় আসা সম্ভব নয়।
সুন্দর সমাজ গড়তে শিষ্টাচার ও নৈতিকতা অত্যাবশ্যক। এর অভাবে সমাজে দ্ব›দ্ব-সংঘাত-বিশৃঙ্খলা অনিবার্য। সমাজবদ্ধ জীব হিসাবে মানুষের মধ্যে কিছু জ্ঞান থাকা দরকার। বর্তমানে মানুষের মধ্যে এ সকল অত্যাবশ্যক গুণাবলী ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী হচ্ছে। সমাজে মিথ্যা, অসত্য, উগ্রতা, অস্থিরতা আমাদের মননে মগজে মিশে গেছে। কে কাকে কীভাবে কোনঠাসা করবে, কে কাকে মাড়িয়ে উপরে উঠবে, ন্যায়-অন্যায় না মেনে কত সম্পদের পাহাড় গড়া যায় সেই প্রতিযোগিতা চলছে দুর্বার গতিতে। সৃষ্টির জন্য নয়, ধ্বংস আর বিনাশের দিকেই নজর অধিকাংশ মানুষের। মূল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রথম ধাপ হিসাবে নৈতিকতা ও শিষ্টাচার বহির্ভ’ত আচরনকে চিহ্নিত করা যায়। সততা, ন্যায়পরায়নতা, নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলাবোধের সমন্বিত গুণাবলি হচ্ছে নৈতিকতা, একে ধরাছোঁয়া বা পরিমাপ করা যায় না, শুধু অনুধাবন করা সম্ভব। বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত প্রতিটি মানুষেরই সততা ও নিষ্ঠার সাথে নিজ দায়িত্ব পালনই নৈতিকতা। উন্নত বিশ্বে একে অন্যকে প্রয়োজন মতো সাহায্য করাকে নৈতিক দায়িত্ব মনে করা হয়। দায়িত্ববোধ ও মমত্ববোধ থেকে সৃষ্ট এ মানবিক গুণ ছাড়া সভ্যতার বিকাশ সম্ভব নয়। যে ব্যবসায়ী মানুষের প্রয়োজনকে গৌণ মনে করে বাণিজ্য করেন অর্থাৎ আর্থিক সুবিধা আদায় করেন, তিনি নৈতিকতা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছেন। দেশের আইন মেনে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করা উচিৎ। একজন মানুষের আচার-ব্যবহার, কথাবার্তা চালচলন ও কাজকর্মে যে শিষ্টতা নম্রতা ও মার্জিত রুচির পরিচয় প্রকাশ পায় সেটাই আদব-কায়দা বা শিষ্টাচার। শিষ্টাচারের আরেকটি দিক হচ্ছে আমি যে ধরনের আচরণ অন্যের কাছে আশা করি, আমারও উচিৎ অন্যের সাথে সেই ধরনের আচরণ করা। বিদ্যাবুদ্ধি যেমন চেষ্টা ও সাধনা দ্বারা অর্জন করতে হয়, তেমনি শিষ্টাচার বা আদব কায়দা ও চেষ্টা ও সাধনা দ্বারা বিশেষ শিক্ষার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়।
অহেতুক কারো সাথে বিতর্কে না জড়িয়ে সুন্দর সাবলীল পরিবেশে যেকোন সঠিক সিদ্ধান্তে আসা জ্ঞানী লোকের পরিচয়। ত্রুটিপূর্ণ তথ্য পরিবেশন সুদূরপ্রসারী ক্ষতির কারণ হতে পারে। অধীনস্থ কর্মচারীদের সাথে সহানুভূতির সঙ্গে কথা বললে তাদের কাজের মান ও পরিমাণ দুইই বৃদ্ধি পায়। পরনিন্দা অবশ্যই পরিতাজ্য। পরনিন্দা মানুষকে ছোট করে ও শত্রুতা বাড়ায়। নিন্দা করে সমস্যার সমাধান হয় না, বরং জটিলতা বৃদ্ধি পায়। এটি একটি শিষ্টাচারবিরোধী কাজ। সর্বোপরি এটি একটি কবিরা গুনাহ। একজন মানুষের মার্জিত ও রুচিসম্মত পোশাক পরিধান করা ঐতিহ্য। সুন্দর, রুচিসম্মত পোশাক-পরিচ্ছদ একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব অনেকগুণে বাড়িয়ে দেয়। নিজেকে জাহির করা থেকে বিরত উচিৎ, কারণ এটি অহংকারেরই নামান্তর, যা যেকোন ধর্মে পরিত্যাজ্য। জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান বিষয় মানুষের চরিত্র গঠন।
কল্যাণধর্মী সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য স্কুল, কলেজ, অফিস-আদালত, বাস, ট্রেন, সভা, সমিতি ও সামাজিক অনুষ্ঠানে শিষ্টাচার বা আদব-কায়দার প্রয়োজন অধিক। শিষ্টাচার মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায় এবং বন্ধুত্ব লাভ হয়। সমাজে অনেক সমস্যা আছে যেগুলো শুধু আইনানুগ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে শিষ্টাচার ও সহমর্মিতার গুণাবলী সাহায্য করে থাকে। শিশুকাল থেকে শিষ্টাচার অনুশীলন করতে হয় এবং সারাজীবন ধরে এর অর্জন চলতে থাকে। শিষ্টাচার বা আদব কায়দা অভ্যাসে পরিণত করতে না পারলে সময়মত প্রয়োগ করা যায় না। শিষ্টাচার মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান বিষয়। জীবন গঠনে শিষ্টাচারের প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিষ্টাচারের প্রতি যে যত বেশি যত্নবান, তিনি তত বেশি সুনাম ও সাফল্য অর্জন করতে পারেন। শিষ্টাচার সম্পর্কে যে উদাসীন, মানুষের নিকট তার গ্রহণযোগ্যতা তত কম।
নৈতিকতা গঠনে প্রতিটি মানুষের সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করা, বিশেষ ব্যক্তিদের সংগে পরামর্শ করা, ন্যায়পরায়ণ হওয়া, গুণীদের সহচার্য লাভ করা, গঠনমূলক আলোচনার প্রতি আগ্রহী হওয়া ও অস্থিরতা পরিহার করা অত্যাবশ্যক। সমাজে ছোট-বড়, গরীব-ধনী, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের লোকের বসবাস। পরস্পরের দেখা সাক্ষাতে কুশল বিনিময় ও যুক্তিপূর্ণ আচরণ, সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সম্মান ও ভালবাসার মাধ্যমে সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায় এবং নিজ নিজ অবস্থান সুদৃঢ হয়। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রতি বিনয়ী আচরণ শিষ্টাচারের পরিচায়ক। গরীব-দুঃখীর প্রতি মমত্ববোধ, প্রতিবেশীর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ থাকা অপরিহার্য। এর ব্যাত্যয় ঘটলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। সমাজে, সংসারে যারা গুরুজন, তাদেরকে শ্রদ্ধা করতে হবে, ছোটদেরকে স্নেহ করতে হবে। একজন বিনয়ী, সুন্দর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ সবথেকে সম্মানিত। তাই আমাদের উচিত উন্নত চরিত্রের অধিকারী হওয়ার সাধনা করা, যা ইহকালে সবার কাছে যেমন গ্রহণীয় হবে তেমনি জান্নাত লাভের পথ সুগম হবে।
জীবন গঠনে শিষ্টাচারের প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিষ্টাচারের প্রতি যে যত বেশি যত্নবান, তিনি তত বেশি সুনাম ও সাফল্য অর্জন করতে পারেন। শিষ্টাচার সম্পর্কে যে উদাসীন, মানুষের নিকট তার গ্রহণযোগ্যতা তত কম। কাজেই, শিষ্টাচারের বীজ পরিবার থেকেই বপন করতে হবে এবং প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পরিচর্যার মাধ্যমে উন্নয়ন ঘটাতে হবে, যা পরবর্তীতে সমাজ সভ্যতার বিকাশ ঘটাবে।
লেখক: সাংবাদিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।