Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফের আলোচনায় মিতু হত্যা, অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০২১, ৯:২২ এএম | আপডেট : ১২:১৫ পিএম, ১২ মে, ২০২১

স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা নিয়ে ফের নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে আলোচিত এই মামলার রহস্য উদঘাটন হয়নি এখনও।

অনেক প্রশ্নের উত্তরও এখনও অজানা।

দীর্ঘ পাঁচ বছরেও জানা যায়নি কারা কেন খুন করেছেন মিতুকে। পুলিশের তরফে এই খুনের হোতা হিসাবে সন্ত্রাসী মুসাকে চিহ্নিত করা হলেও তার কোন সন্ধান মিলেনি। মুসার স্ত্রীর দাবি পুলিশ ঘটনার কয়েকদিন পর বন্দর থানা এলাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়।
তবে স্ত্রী তামান্নার এ দাবি বরাবরই অস্বীকার করছে পুলিশ। মুসাকে ধরতে সিএমপির পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিলো। তবে মুসার খোঁজ মিলেনি।
মিতু হত্যায় গ্রেফতার দুই আসামি কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। তাও এখনও রহস্যঘেরা। মামলার বাদি বাবুল আক্তার ও তার শ্বশুরের মধ্যে দ্ব›দ্ব এবং এর জেরে বাবুল আক্তারকে সন্দেহ করা নিয়েও তৈরী হয় রহস্য। হঠাৎ করে বাবুল আক্তারকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে ১৮ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ এরপর পুলিশের চাকরি থেকে ইস্তফা এসব নিয়েও চলে নানামুখি আলোচনা।

তবে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই কর্মকর্তারা বলছেন, খুব শিগগির সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে। মামলার অভিযোগ পত্রে মিতু হত্যার পুরো রহস্য উদঘাটন করা হবে।
সর্বশেষ এই ঘটনায় সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে পিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর থেকে তিনি তাদের হেফাজতে আছেন। তার বিষয়ে আজ বুধবার পিবিআই তাদের পরবর্তি পদক্ষেপ নেবে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী এলাকায় পিবিআই মেট্রো অঞ্চলের কার্যালয়ে উপস্থিত হন বাবুল আক্তার। যিনি এক সময় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে উপকমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন।

রাত পর্যন্ত বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলেও তাকে পাহাড়তলীর পিবিআই কার্যালয় থেকে বের হতে দেখা যায়নি। গভীর রাতে পিবিআই কার্যালয়ে তালা ঝুলানো ছিল এবং বাবুল ভেতরেই রয়েছেন বলে পিবিআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা রাতে এ বিষয়ে পরে জানতে পারবেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় সড়কে খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু। পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল আক্তার। তার ঠিক আগেই চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশে ছিলেন তিনি।
হত্যাকাÐের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন বাবুল আক্তার নিজেই। মামলাটি প্রথমে পুলিশ ও পরে ডিবি পুলিশ তদন্ত করে।

এদিকে বাবুল আক্তার তার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় শ্বশুর বাড়িতে উঠেন। শুরুতে মেয়েজামাইয়ের পক্ষে বললেও কিছুদিন পর অবস্থান বদলান বাবুল আক্তারের শ্বশুর পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। তিনি অভিযোগ তোলেন, তার মেয়েকে হত্যার পেছনে তার জামাইয়ের যোগসাজশ রয়েছে বলে তার সন্দেহ।
ওই ঘটনার পর পুলিশের চাকরি ছাড়তে দৃশ্যত বাধ্য হওয়া বাবুল অবশ্য বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। হত্যাকান্ডের পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে বাবুলকে নিয়ে সন্দেহের কথা বলেন তার শ্বশুর মোশাররফ। এক পর্যায়ে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়ে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আলাদা বাসায় ওঠেন বাবুল।

এদিকে মিতু হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছার নাম বলে আসছেন পুলিশ কর্মকর্তার। তিনি চট্টগ্রামে বাবুলেরই ‘সোর্স’ ছিলেন।
হত্যাকান্ডের কয়েক দিন পর ২০১৬ সালের ২৬ জুন এই মামলায় মো. আনোয়ার ও মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মুছাকেই হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন বলে জানায় পুলিশ।

জবানবন্দিতে ওয়াসিম বলেন, নবী, কালু, মুছা ও তিনি সরাসরি হত্যাকাÐে অংশ নেন এবং নবী ও কালু মিতুকে ছুরিকাঘাত করে।
এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন ছয়জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং দুজন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
ভোলা ছাড়াও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত মোটর সাইকেলের সরবরাহকারী মুছার ভাই সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাকু ও মো. শাহজাহানকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নুরুল ইসলাম রাশেদ ও নুরুন্নবী পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। তবে জবানবন্দিতে আসা মূল পরিকল্পনাকারী মুছা এবং তার সঙ্গী কালুর খোঁজ পুলিশ চার বছরেও পায়নি পুলিশ।

এদিকে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মধ্যে পিবিআই আলোচিত এ মামলার সাক্ষী ও আসামি মিলিয়ে ১২ জনের সঙ্গে কথা বলেছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এর মধ্যে দুই আসামি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিতু হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ