Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভূমিহীনদের জমি নিলো বিত্তশালীরা অর্থের বিনিময়ে বন্দোবস্ত

সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী : | প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

 সিরাজগঞ্জ সদরের সয়দাবাদ ইউনিয়নে ৪২ বিঘা খাসজমি বিত্তশালীদের মধ্যে বন্দোবস্ত দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন বঞ্চিত ব্যক্তিরা। ইউনিয়নের পঞ্চসোনা গ্রামের তিনজন ভ‚মিহীন ব্যক্তি জানিয়েছেন, উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে গ্রামের বিত্তবানদের খাসজমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। অথচ এসব জমি প্রকৃত ভূমিহীনদের মধ্যে বন্দোবস্ত দেওয়ার নিয়ম থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।
সদর ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নের বড় শিমুল, পঞ্চসোনাসহ আশপাশের মৌজায় প্রায় ৪৬ বিঘা খাসজমি ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বরাদ্দ দেয় উপজেলা খাসজমি বন্দোবস্ত কমিটি। এই জমি মোট ৯০ জন ভূমিহীনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মোট মূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা। অভিযোগকারীরা বলছেন, বন্দোবস্ত পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ জন ছাড়া বাকিরা বিত্তবান। তারাই প্রায় ৪২ বিঘা জমি পেয়েছেন। কৌশলে ভ‚মিহীন সেজে অর্থের বিনিময়ে এসব জমি বন্দোবস্ত পেয়েছেন তারা। কেউ আবার বরাদ্দ পাওয়া জমি বিক্রি করে দিয়েছেন।
পঞ্চসোনা গ্রামের ভূমিহীন কৃষক কোরবান আলী জানান, দীর্ঘদিন ধরে ৩১ শতাংশ খাসজমিতে বসবাস করে এলেও সরকারের কাছ থেকে এর বরাদ্দ মেলেনি। জমিটি স্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী হামিদুল মোল্লা ও ইকবাল হোসেন। তাদের কাছে থেকেই জমি ইজারা নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে তাকে।
সয়দাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবীদুল ইসলামও বলেন, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল এই খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়ার কাজে জড়িত। যখন বন্দোবস্ত দেওয়া হয়, তখন তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন না। উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের দাবি করা ঘুষের টাকা দিতে না পারাতেই বরাদ্দ মেলেনি বলে অভিযোগ করেন পঞ্চসোনা গ্রামের আফিয়া খাতুন ও ফুলেআরা বেগম।
ভূমিহীন ফুলেআরা বেগম জানান, যমুনা নদীতে চারবার বসতভিটা বিলীন হয়। ২০১৬ সাল থেকে খাসজমি পাওয়ার জন্য ভূমি কার্যালয়ে আবেদন করে ধরনা দেন। পরে জানতে পারেন খাসজমির বন্দোবস্ত দেওয়া শেষ হয়েছে। ফুলেআরা অভিযোগ করেন, ১০ শতক জমি বরাদ্দ দেওয়ার জন্য তার কাছে সদর ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার সেলিম হোসেন ৪০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। সেলিমকে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ৩৫ হাজার টাকা দেন। তাকে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, আবার বরাদ্দ শুরু হলে জমি দেওয়া হবে। সেলিমকে টাকা দেওয়ার দাবি করেন আফিয়া খাতুনও। তিনি বলেন, তিনি সার্ভেয়ার সেলিম হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এখনো কোনো ব্যবস্থা হয়নি। বর্তমানে সেলিমকে কামারখন্দ উপজেলায় বদলি করা হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে সেলিম হোসেন জানান, খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য উপজেলায় একটি কমিটি আছে। তারাই জমি বন্দোবস্ত দিয়ে থাকে। তিনি কোনো টাকা নেননি কারও কাছে থেকে।
বড় শিমুল গ্রামের গোলবার সেখ ও জাহাঙ্গীর আলম সরকারি খাসজমি বন্দোবস্ত পেয়েছেন। তাদের পাকা বাড়িসহ আবাদি জমি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। গোলবার সেখ ও জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তাদের নামে যে খাসজমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো তাদের পূর্বপুরুষদের জমি। যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছিল।
উপজেলা খাসজমি বন্দোবস্ত কমিটির সভাপতি ও ইউএনও আনোয়ার পারভেজ বলেন, ভূমিহীন ছাড়া অন্য কাউকে খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে, এমন তথ্য তার জানা নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভূমিহীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ