পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আনুমানিক ৩০ বছর পশ্চিমবঙ্গ শাসন করেছে কংগ্রেস। অবশ্য কংগ্রেসের এই ৩০ বছর শাসনামলেও ২/৩ বছর ভেঙ্গে ভেঙ্গে প্রেসিডেন্টের শাসন জারি ছিলো। কংগ্রেসের পর জ্যোতিবসুর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টি তথা সিপিএম একটানা ৩৪ বছর রাজ্য শাসন করে। কংগ্রেস ছিল একটি সর্বভারতীয় দল। তার আদর্শ ছিলো মূলত ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদ। সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদে Sub Nationalism বা উপ জাতীয়তাবাদের কোনো স্থান নাই। তাই পশ্চিমবঙ্গে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের কোনো বিকাশ ঘটেনি। জ্যোতিবসু যৌবনে ছিলেন একজন কমিউনিস্ট। সেই সময় একজন কমিউনিস্টের কাছে জাতীয়তাবাদের চেয়ে আন্তর্জাতিকতাই বেশি প্রাধান্য পেতো। কংগ্রেস এবং বাম উভয় রাজত্বে সুনির্দিষ্ট কোনো আদর্শ না থাকায় পশ্চিমবঙ্গে বাইরের কর্পোরেট পুঁজি অনুপ্রবেশ করে। তার ফলে বাংলাভাষার ওপরে হিন্দিভাষা প্রাধান্য পায়। কিন্তু তাই বলে হিন্দুত্ব কোনো জায়গা পায়নি।
মমতা ব্যানার্জীর দলের নাম তৃণমূল কংগ্রেস হলেও তার রাজনীতির শেকড় কিন্তু ছিল কংগ্রেস। কংগ্রেস থেকেই তার রাজনৈতিক জীবন শুরু। এক পর্যায়ে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এলেও তিনি তার নতুন দলের নাম রাখেন তৃণমূল কংগ্রেস। অর্থাৎ কংগ্রেসের গন্ধ কিন্তু রয়েই গেলো। মমতারও কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক আদর্শ ছিলো না। তবে তিনি হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করতেন। মুসলমানরা যে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ, সেটিকে তিনি মূল্য দিতেন। বিগত ১০ বছরে তিনি সবচেয়ে বেশি করেছেন নারীদের জন্য। তিনি হিন্দুদের জন্যও কাজ করেছেন, আবার মুসলমানদের জন্যও কাজ করেছেন।
সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি যখন উগ্র হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা এবং সেই সাম্প্রদায়িকতাভিত্তিক হিন্দু জাতীয়তাবাদকে নির্বাচনের প্রধান ইস্যু বানালো তখন মমতার পক্ষেও একটি আদর্শের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না। পশ্চিমবঙ্গের ৭২ শতাংশ মানুষ হিন্দু, একথা যেমন ঠিক, তেমনি একথাও ঠিক যে, হিন্দু-মুসলমান মিলে পশ্চিমবঙ্গের ১০০ শতাংশ মানুষই বাঙ্গালী। তাই বিজেপি যখন প্রধান নির্বাচনী শ্লোগান হিসাবে আওয়াজ তুললো ‘জয় শ্রীরাম’, তখন মমতা ব্যানার্জীকেও নির্বাচনী তলোয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে হলো আরেকটি আবেগময় শ্লোগানকে। আর সেটি হলো ‘জয় বাংলা’। নির্বাচনটি হচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গে, কিন্তু বিজেপির সব কান্ডারী পশ্চিমবঙ্গের বাইরে অর্থাৎ গুজরাট ও অন্যান্য প্রদেশ থেকে এসে যখন পশ্চিমবঙ্গে জুড়ে বসেন তখন মমতা গর্জে ওঠেন, ওরা বহিরাগত। তিনি এতদূরও বলেন যে, মারাঠা বর্গীদের মত ওরা বাইরে থেকে এসে পশ্চিমবঙ্গ দখল করতে চায়। নরেন্দ্র মোদি ১৬ বার পশ্চিমবঙ্গে আসেন। অমিত শাহ্ তো নির্বাচনকালে সেখানে থেকেই যান। এমনকি বিজেপি প্রধান জে পি নাড্ডা এবং আরএসএস প্রধান মোহন ভগবতও ঘন ঘন পশ্চিমবঙ্গে আসা-যাওয়া করেন। এরা সকলেই কেন্দ্রীয় নেতা। এদের বিরুদ্ধে মমতা আওয়াজ তোলেন, বাংলা শাসন করবে বাঙ্গালীরা, গুজারাটিরা নয়। এভাবেই সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনটি কেন্দ্র বনাম প্রদেশের লড়াইয়ে রূপ নেয়।
দুই
এবার নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ্ কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছিলেন তৃণমূলকে উৎখাত করতে। নির্বাচনের মাস দুয়েক আগে তাদের শক্তিশালী মিডিয়া উইং এমন একটি আবহ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল, যার প্রভাবে অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার দাপট, তাদের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক প্রচারণা এবং বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের অপরিণামদর্শী এবং অবিবেচক নীতির ফলে বিজেপি এবার পশ্চিমবঙ্গ দখল করবে। যদি কোনো কারণে সেটা সম্ভব না হয় তাহলে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসাবে উত্থিত হবে। প্রথমটি হয় নাই। মমতা ব্যানার্জী ২১৩ টি আসন নিয়ে তৃতীয় মেয়াদে বিপুল বিজয় অর্জন করেছেন। বিজেপি মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে কসুর করেনি। এই বিপুল পরিশ্রম পন্ডশ্রমে পরিণত হয় নাই। ২০১৬ নির্বাচনে যেখানে দলটি পেয়েছিল মাত্র ৩ টি আসন, সেখানে এবার তারা পেয়েছে ৭৭ টি আসন। পেয়ে শক্তিশালী বিরোধী দল রূপে আবিভর্‚ত হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র জনগোষ্ঠির ৭২ শতাংশ হিন্দু। ২৮ শতাংশ মুসলমান। বিজেপি ২৮ শতাংশ মুসলিম ভোট প্রত্যাশাও করেনি, বা তাদের ভোটে ভাগ বসাতে চেষ্টাও করেনি। বিষাক্ত হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার জিগির তুলে তারা ঐ ৭২ শতাংশ হিন্দু ভোটকে তাদের ভোট ব্যাংক হিসাবে ধরে নিয়েছিল। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায় ঊহ নষড়পশ বা সদলবলে বিজেপিকে ভোট দেয় নাই। দিলে মমতা ব্যানার্জী এতগুলি আসন পেতেন না।
নির্বাচনী বিশ্লেষকদের সব জল্পনা-কল্পনাকে ভন্ডুল করে দিয়ে মমতা গত বারের চেয়েও বেশি ভোট পেয়ে তৃতীয় মেয়াদে জয়ী হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে একটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে ভারত জুড়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদের জয়যাত্রা প্রচন্ড হোঁচট খেয়েছে। তামিলনাড়– এবং কেরালায় বিজেপি কোনো ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। তামিলনাড়–তে একটি আঞ্চলিক দল জিতেছে এবং কেরালায় প্রকাশ কারাত এবং সিতারাম ইয়াচুরির বামফ্রন্ট বিপুল বিজয় লাভ করেছে। আর পশ্চিমবঙ্গের কথা তো বলার অবকাশ রাখে না। নির্বাচনের অন্তত ২ মাস আগে থেকেই বিজেপির সাবেক সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্ তো পশ্চিমবঙ্গকে তার ঘর বাড়িই বানিয়ে ফেলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই করোনা কালেও নির্বাচন উপলক্ষে বারবার দিল্লী কলকাতা ছুটাছুটি করেছেন। নরেন্দ্র মোদি তো বাংলাদেশে এসেও গোপালগঞ্জ এবং সাতক্ষিরায় মোতুয়া সম্প্রদায়ের মাঝে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। বিজেপির তরফ থেকে দম্ভভরে ঘোষণা করা হয়েছিল যে, তারা নির্বাচনে শুধু জয়লাভই করবেন না, কমপক্ষে ২০০ আসনে জয়লাভ করে পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করবেন।
তিন
এই টার্গেট সামনে রেখে তারা যে নির্বাচনী কৌশল ব্যবহার করেন সেটি ছিলো চরম সাম্প্রদায়িক এবং ঘৃণার রাজনীতি। তারা উগ্র হিন্দুত্বকে উস্কে দেন এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে থাকেন। বাবু দিলীপ ঘোষ পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ বিজেপির সভাপতি। পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো উপলক্ষে তাঁর ফেসবুক এ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘সকলকে জানাই হিন্দু নববর্ষের শুভেচ্ছা। এটি ভারতবর্ষের জন্য পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনকে সৃষ্টির প্রথম দিন হিসাবে ধরা হয়। ভগবান রামের রাজ্যাভিষেক হয়েছে এই দিনে। তাই আজকের দিনটা আমাদের কাছে খুব গর্বের। একজন গর্বিত ভারতীয় হিসাবে হিন্দু নববর্ষের প্রথম দিনে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। (দৈনিক যুগান্তর: ২৪ এপ্রিল, উপসম্পাদকীয়, পৃষ্ঠা ৪)।’ সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, বিজেপি জয়লাভ করলে পহেলা বৈশাখকে হিন্দু নববর্ষ হিসাবে পালন করা হতো।
সৌম্য বন্দোপধ্যায় দিল্লীর একজন সিনিয়র সাংবাদিক। তিনি ‘দৈনিক প্রথম আলোর’ দিল্লী প্রতিনিধি। ১৯ এপ্রিল দৈনিক প্রথম আলোর উপ-সম্পাদকীয় কলামে তিনি লিখেছেন, ‘বিজেপি সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করেছে। অযোধ্যায় রাম মন্দির প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। অভিন্ন দেওয়ানী বিধি প্রচলনে তিন তালাক প্রথা বাতিল করেছে। জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি) তৈরীর উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) পাশ করে অভিষ্ট পূরণে এগোচ্ছে। রাজ্যে রাজ্যে নিষিদ্ধ হচ্ছে গোহত্যা। চালু হয়েছে ধর্মান্তর রুখতে লাভ জিহাদ আইন। বিজেপি শাসিত রাজ্যে মিড ডে মিলস্ থেকে আমিষ তুলে দেওয়া হয়েছে। এমনকি রাম নবমী বা নবরাত্রির মত বিভিন্ন হিন্দু উৎসব পার্বনের সময় জবরদস্তি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে মাছ মাংসের দোকান। বিভিন্ন পৌরসভা নিয়ম করেছে, রেস্তোরাগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে জানাতে হবে, কোন মাংস তারা ব্যবহার করে। ‘হালাল’ না ‘ঝটকা’। দলের প্রতিটি ব্রেনস্টর্মিং সেশন বা চিন্তন অধিবেশনে মোদি এবং অমিত শাহ্ বলেন, বিজেপিকে হতে হবে আদর্শ প্রতিষ্ঠার বাহন।’
পশ্চিমবঙ্গ দখল করতে না পারলে সেই লক্ষ্য পূরণ অসম্ভব। সর্ব ভারতীয় উপস্থিতির জন্য পশ্চিমবঙ্গ দখল যেমন তাদের জন্য প্রয়োজনীয়, তেমনই মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে। এবারের ভোটযুদ্ধ সেই আলোতেই দেখতে হবে।
এরপর সৌম্য বন্দোপধ্যায় মন্তব্য করেছেন, ‘সংঘাতটা হয়ে উঠেছে যতটা রাজনৈতিক, ততটাই সাংস্কৃতিক। এক দিকে ‘হিন্দী, হিন্দু, হিন্দুত্ব’, অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের বহুত্ববাদী বাঙ্গালীত্ব। উত্তর ভারতীয় এক দেশদর্শী মতবাদের আগ্রাসনে এতকালের চেনা বাঙ্গালীয়ানা ভেসে যাবে কিনা, বাঙ্গালীদেরকে তা ঠিক করতে হবে। স্বকীয়তা বজায় রেখে মাথা উঁচু করে বাঁচা, নাকি হিন্দুত্ববাদী প্রভুত্বের কাছে মাথা নোয়ানো? এই ভোট সেই চ‚ড়ান্ত দিক নির্ণয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ।’ (প্রথম আলো: ১৯ এপ্রিল, উপ-সম্পাদকীয়, পৃষ্ঠা ৮)।
‘ডেইলি স্টারে’ ২১ এপ্রিলের উপ-সম্পাদকীয় নিবন্ধে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ উত্তর ২৪ পরগনার এক জনসভায় হুমকি দেন যে বিজেপি ক্ষমতায় গেলে ৫০ লক্ষ মুসলিম অনুপ্রবেশকারীকে বের করে দেওয়া হবে। তিনি আরো হুমকি দেন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যারা ভাংচুর করেছে, তাদেরকে গুলী করা হবে (They will be shot)।’
আলোচ্য কলামে (২১ এপ্রিল, পৃ: ৮) বলা হয়, ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার আছে। আসামেও বিজেপি সরকার আছে। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, ২ মের নির্বাচনী ফলাফল মোতাবেক, ১২৬ টি আসন বিশিষ্ট আসাম রাজ্য বিধান সভার নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছে ৭৬ টি আসন, কংগ্রেস ৪৮ এবং অন্যান্য ২। এখন যদি পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি ক্ষমতায় আসতো তাহলে বাংলাদেশ চারিদিকে পরিবেষ্টিত হতো উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী আদর্শের ৩টি রাজ্য দিয়ে। এর পরিণতি কোনোভাবেই বাংলাদেশের জন্য শুভ হতো না।
চার
এবার বিধান সভার নির্বাচন হয়েছে চারটি প্রদেশে এবং একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে। প্রদেশ চারটি হলো আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, তামিল নাড়–, কেরালা এবং কেন্দ্রশাসিত পদুচারী। এরমধ্যে তিনটি রাজ্যে বিজেপি হেরেছে, দুইটি রাজ্যে জিতেছে। একটু আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে আসাম বিধান সভায় রয়েছে ১২৬ টি আসন। এরমধ্যে বিজেপি এবং তার মিত্র পেয়েছে ৭৬ টি, কংগ্রেস ৪৮ টি এবং অন্যেরা ২টি। আসামেও বিজেপি উগ্র হিন্দু সাম্প্রদায়িক জিগির তুলেছিল এবং তীব্র মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়েছিল। আসামে প্রতিদ্ব›দ্বীতাকারী অন্যতম দল ছিল অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইউডিএফ)। বিজেপি নির্বাচনী প্রচারণায় বলে যে আপনারা যদি এআইউডিএফকে ভোট দেন তাহলে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হবেন একজন মুসলমান। তারা প্রশ্ন করেন, আপনারা কি মুসলামন বদরুদ্দীন আজমলকে মুখ্যমন্ত্রী করবেন? পদুচেরী বিধান সভার আসন সংখ্যা হলো ৩০ টি। এখানে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ পেয়েছে ১৬ টি আসন, ইউপিএ পেয়েছে ৯ টি আসন এবং অন্যেরা ৫ টি আসন। কেরালার বিধান সভার আসন সংখ্যা ১৪০ টি। ক্ষমতাসীন বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট পেয়েছে ৯৯ টি, সংযুক্ত ডেমোক্রাটিক ফ্রন্ট পেয়েছে ৪১ টি। এখানে বিজেপি কোনো নাক গলাতে পারেনি। তামিল নাড়– বিধান সভার আসন সংখ্যা ২৩৪ টি। ডিএমকে নামক দলটি পেয়েছে ১৫৩ টি এবং এডিএমকে নামক দলটি পেয়েছে ৮০ টি আসন। এখানে কংগ্রেস বা বিজেপি সহ কোনো সর্বভারতীয় দল কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে আগামীতে ভারতের জাতীয় নির্বাচন অর্থাৎ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে শক্তভাবে মোকাবেলা করার মত কোনো দল বা মোর্চা এখনো দৃশ্যমান নয়।
পশ্চিমবঙ্গে এখন অবিসংবাদিত নেতা হলেন মমতা ব্যানার্জী। ২০১১ সালের নির্বাচনে তার দল তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ১৮৪ টি আসন। ২০১৬ সালে পায় ২১১ টি আসন। এবার পেয়েছে ২১৩ টি আসন। বলা বাহুল্য, মমতার বিজয় তথা তৃণমূলের বিজয় একটি ভ‚মিধ্বস বিজয়। তবে একথাও ঠিক বিজেপিও পশ্চিমবঙ্গে শক্তভাবেই ঘাটি গেড়েছে। ২০১১ সালে তাদের একজনও বিধানসভার সদস্য ছিলো না। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তারা পায় ৩ টি আসন। কিন্তু এবার ৩ টি আসন থেকে এক লাফে অর্জন করেছে ৭৭ টি আসনে বিজয়। যে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস প্রায় ৩০ বছর রাজত্ব করেছে, কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিএম রাজত্ব করেছে একটানা ৩৪ বছর, সেখানে এ দুটি দল একটিও আসন পায়নি। আব্বাস উদ্দিনের দল পেয়েছে ১ টি আসন এবং স্বতন্ত্র একটি আসন। একচেটিয়াভাবে হিন্দু ভোট লাভের জন্য বিজেপি সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়েছে। মমতা ব্যানার্জকে বলেছে ‘মমতা বেগম’। মমতার জয় বাংলা শ্লোগানকে বলেছে আরেকটি ‘পশ্চিম বাংলাদেশ’ গঠনের মতলব। জয়বাংলা শ্লোগানের পাল্টা দলীয় শ্লোগান দিয়েছে ‘জয় শ্রীরাম’। আমি ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’, ‘দি হিন্দু’ এবং ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ ভালভাবে পড়ে দেখলাম যে, মোট ভোটের ৪৮ শতাংশ পেয়েছেন মমতা ব্যানার্জী। যেখানে মোট ভোটারের ৭২ শতাংশই হিন্দু সেখানে এই ভ‚মিধ্বস বিজয় লাভ করতে গেলে হিন্দু ভোটারদেরও সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট লাভ করতে হয়েছে মমতা তথা তৃণমূলকে। ঐসব পত্রিকার মতে, মুসলিম ভোটারদের অন্তত ৯৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন মমতা তথা তৃণমূল। জয় বাংলা শ্লোগানের কাছে জয় শ্রীরাম পরাজিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা এবং তামিল নাড়–তে হিন্দু জাতীয়তাবাদের অগ্রযাত্রা থেমে গেছে।
E-mail: [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।