Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দূরপাল্লার পরিবহন চালাতে চান মালিকরা, বিক্ষোভের হুঁশিয়ারি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০২১, ১২:৪১ পিএম

স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারাদেশে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচলের অনুমতিসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। দাবি বাস্তবায়ন না হলে ঈদের নামাজ শেষে সারাদেশের মালিক ও শ্রমিকরা নিজ নিজ এলাকায় বাস ও ট্রাক টার্মিনালে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। এছাড়া ঈদের পরে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (৮ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট তিনটি সংগঠনের যৌথ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

তিন সংগঠনের দাবিগুলো হলো, স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার পরিবহনসহ সব গণপরিবহন এবং স্বাভাবিক মালামাল নিয়ে পণ্য পরিবহন চলাচলের সুযোগ দিতে হবে; লকডাউনের কারণে কর্মহীন সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের আসন্ন ঈদের পূর্বে আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে হবে ও লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মালিকদের (শ্রেণিমতো) যানবাহন মেরামত, কর্মচারী ও শ্রমিকের বেতন, ভাতা ও ঈদ বোনাস ইত্যাদি দেওয়ার জন্য নাম মাত্র সুদে ও সহজ শর্তে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিতে হবে।

সারাদেশে বাস ও ট্রাক টার্মিনালগুলোতে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য আসন্ন ঈদের পূর্বে ও পরে ১০ টাকায় ওএমএস’র চাল বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে; করোনার কারণে গণপরিবহণ ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগের বিপরীতে সমস্ত ব্যাংক ঋণ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদ মওকুফসহ কিস্তি আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করতে হবে এবং ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে ক্লাসিফাইড ঋণগুলো আনক্লাসিফাইড করতে হবে এবং লকডাউনে বন্ধ থাকার সময় গাড়ির ট্যাক্স টোকেন, রুট পারমিট ফি আয় কর, ড্রাইভিং লাইসেন্স ফিসহ সব ধরনের ফি, কর ও জরিমানা মওকুফ করে এবছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাগজপত্র হালনাগাদ করার সুযোগ দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঈদের আগেই দূরপাল্লার পরিবহন চলাচলের অনুমতি দিন। কারণ যার বাড়ি যাওয়ার সে যাচ্ছেই। ভুলবশত যদি করোনা আক্রান্ত কেউ একটি গাড়িতে বাড়ি যায়, তবে পথে সে এক বা দুজনকে সংক্রমিত করতে পারে। কিন্তু এখন যে সে পাঁচটি গাড়ি বদল করে ১০ জনকে সংক্রমিত করছে সেটি বোধ হয় বিশেষজ্ঞরা বোঝেন না।

লিখিত বক্তব্যে নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিকরা লকডাউনের বিরোধী নই। আমরাও চাই মানুষের জীবন রক্ষার্থে কঠোরভাবে লকডাউন পালিত হোক। লকডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকার কথা। তারপরও মিছিল মিটিং সমাবেশ হচ্ছে; গার্মেন্টস কারখানা চলছে, শপিং মল, কাঁচা বাজার চলছে, দোকান পাট, হাট বাজার খোলা, অফিস আদালত আংশিক খোলা। গণপরিবহন বাস-কোচ, মিনিবাস বন্ধ থাকলেও রিকশা-ভ্যান, নসিমন, করিমন, মোটরসাইকেল, বেবী টেক্সি, ইজি বাইক, কার, মাইক্রোবাস, হিউম্যান হলার, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াও বহু ছোট ছোট ট্রাক ও পিকআপে গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করছে। তারা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এতে সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে শতভাগ। সবকিছু খোলা রেখে শুধু দূরপাল্লার বাস-কোচ বন্ধ রেখে কতটা সংক্রমণ রোধ করা যাবে আমাদের বিবেচনায় তা আসে না।’

এতে বলা হয়, সরকার ৬ মে থেকে মহানগর ও জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালুর সিদ্ধান্ত দিয়েছে। শুধু দূরপাল্লার যানবাহন চলবে না। এই সিদ্ধান্তটি কতটা বাস্তবমুখী তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ দূরপাল্লাগামী যাত্রীরা কষ্ট করে, টাকা বেশি খরচ করে, হয়রানির শিকার হয়ে, শরীরের ওপর চাপ নিয়ে, করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে এবং যাবে। এটাই স্বাভাবিক। এখনই দেখা যাচ্ছে মাওয়া ফেরিতে গাড়ি নাই। যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় নিয়ে ফেরি পার হচ্ছে। লঞ্চ বন্ধ থাকায় স্পিডবোটে অধিক যাত্রী পার হতে গিয়ে সম্প্রতি ২৬ জনের সলিল সমাধি ঘটেছে। সুতরাং লোকাল গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রেখে দূরপাল্লার গাড়ি বন্ধ করে উদ্দেশ্য সফল হবে না বলে আমরা মনে করি।

পরিবহনে চাঁদাবাজির কথা তুলে নেতৃবৃন্দ বলেন, এক মাসের বেশি সময় লকডাউন চলছে। লকডাউনে সবকিছু প্রায় স্বাভাবিক। শুধু গণপরিবহন অর্থাৎ বাস-কোচ ও মিনিবাস বন্ধ রয়েছে। পণ্য পরিবহনও স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। গুটি কয়েক পণ্য পরিবহন যা চলছে, তা আবার চাঁদাবাজ ও পুলিশের হাতে হয়রানির শিকার হচ্ছে। ভোলার চরফ্যাশনসহ দেশের কয়েকটি পৌরসভায় টোলের নামে ব্যাপক চাঁদাবাজির কারণে পণ্য পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকদের নাভিশ্বাস উঠেছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি মো. আবু রায়হান, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হুঁশিয়ারি

১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ