পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ১৪ এপ্রিল ঘোষণা করেছেন, মে মাস থেকে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়া হবে। একই দিনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন ন্যাটোর সভায় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের প্রত্যাহারের সাথে সমন্বয় করে ন্যাটোরও সব সেনাকে সরিয়ে নেয়া হবে। তিনি আরো বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের হুমকি আফগানিস্তান থেকে অন্যত্র সরে গেছে। তাই এখন আমাদের চীন ও মহামারির মতো বিষয়গুলোর ওপর অধিক মনোনিবেশ করতে হবে। গত বছর ২৯ ফেব্রুয়ারি তালেবানের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী সব বিদেশি সেনা সরিয়ে নেয়া হচ্ছে দেশটি থেকে। বর্তমানে সেখানে প্রায় ১১ হাজার বিদেশি সেনা আছে। ইতোমধ্যেই সামরিক সরঞ্জাম ও সেনা সরে নেয়া শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন আফগান প্রেসিডেন্ট ঘানি। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ফোন করে এ কথা জানিয়েছেন। আমেরিকা ও তার মিত্রদের সব সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণাকে তালেবানের বিশাল বিজয় আর পশ্চিমাদের লজ্জাকর পরাজয় হিসাবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া, ২০ বছরব্যাপী ব্যাপক রক্তক্ষয়ী আফগান যুদ্ধে আমেরিকা ও তার মিত্রদের লাভ-ক্ষতির বিষয়টিও ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদন মতে, ‘আফগান যুদ্ধে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর খরচ হয়েছে ২.২৬ ট্রিলিয়ন ডলার। উপরন্তু এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ২.৪১ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ২,৪৪২ জন মার্কিন সেনা, প্রতিরক্ষা দফতরের ৬ জন বেসামরিক লোক, ৩,৯৩৬ জন মার্কিন ঠিকাদার এবং মিত্র জোটের ১,১৪৪ জন সেনা, ৬৬,০৬৯ জন আফগান সেনা ও পুলিশ, পাকিস্তানের সেনা ৯,৩১৪ জন। এছাড়া, ৭১ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক, যার মধ্যে ৪৭ হাজার আফগানিস্তানের ও ২৪ হাজার পাকিস্তানের। অন্যদিকে, আফগান তালেবান ৫১ হাজার এবং পাকিস্তানের তালেবান ও তালেবানপন্থি গেরিলা ৩৩ হাজার মারা গেছে। উপরন্তু ১৩৬ জন সাংবাদিক ও ৫৪৯ জন ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছে।’ অর্থাৎ এ যুদ্ধে ব্যাপক প্রাণহানী হয়েছে। দেশটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশে পরিণত হয়েছে। এডিবির তথ্য মতে, ৫৪.৪% আফগান দরিদ্র। প্রায় সব বৈশ্বিক সূচকেই দেশটির অবস্থান তলানীতে!
আফগান যুদ্ধের ফলাফল হচ্ছে, যেই লাউ সেই কদু। অর্থাৎ ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানে ভয়াবহ আক্রমণ চালিয়ে আমেরিকা ও তার মিত্ররা যে তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল, ২০ বছরব্যাপী ব্যাপক প্রাণহানী ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের পরও সেই তালেবানদেরই ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে রেখে পরাজিত হয়ে লজ্জাজনকভাবে বিদায় নিতে হচ্ছে! আগ্রাসনের পরিণতি এই-ই হয়। এর আগে সোভিয়েত ইউনিয়নেরও লজ্জাকর পরাজয় ঘটেছে আফগানিস্তানে। তারও আগে ব্রিটিশরা পরাভূত হয়েছে দেশটিতে। যে-ই আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালিয়েছে, সে-ই রক্ষা পায়নি চরম দুর্ধর্ষ আফগানদের হাত থেকে।
আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন আফগানিস্তানে লুকিয়ে আছে, এই অভিযোগে আমেরিকা ও তার মিত্ররা দেশটিতে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়। অথচ ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন সেনাদের কমান্ডো অভিযানে লাদেন নিহত হন। অর্থাৎ আফগানিস্তান আক্রমণের অজুহাত ছিল মিথ্যা। একই অবস্থা করা হয়েছিল ইরাকে। দেশটিতে ব্যাপক মারণাস্ত্র থাকার অভিযোগে সামরিক অভিযান চালিয়েছিল আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলো এবং প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুৎ করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে, আমেরিকার সেই অভিযোগ মিথ্যা। কিন্তু ইতোমধ্যে আক্রমণে দেশটি ধ্বংস হয়েছে ও চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে এখনো অনেক মার্কিন সেনা রয়েছে। এসব কি আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার চরম ব্যর্থতা, নাকি আগ্রাসন চালানোর নয়া কৌশল? এ অবস্থায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আলাভি বলেছেন, তারা পাকিস্তানে মার্কিন সেনা উপস্থিতি মেনে নেবে না এবং আফগানিস্তানে অভিযান চালানোর জন্য সেদেশের ভূমিকে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। আফগানিস্তান হতে প্রত্যাহারকৃত সেনাকে পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে স্থানান্তর করার প্রস্তাব করেছে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ম্যাকেঞ্জি। এর প্রেক্ষিতেই পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট ওই মন্তব্য করেছেন বলে খবরে প্রকাশ।
আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পর দেশটির কী হবে তা নিয়েও ব্যাপক আলোচনা চলছে সারা বিশ্বেই। বেশিরভাগ আলোচকের অভিমত হচ্ছে: বিদেশি সেনারা চলে যাওয়ার পর তালেবানরা পুরো দেশটির ক্ষমতা দখল করে নেবে। কারণ, প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, তালেবানের যোদ্ধার সংখ্যা ৪ লাখ, আর আফগান সরকারের সেনা ও পুলিশের মোট সংখ্যা ১.৫ লাখ। বিদেশি সেনা থাকা অবস্থাতেই দেশটির ৮০% এলাকা তালেবানের দখল রয়েছে। সেখানে চলছে তাদের শাসন। কিছুদিন আগে মার্কিন ক‚টনীতি সমিতি বলেছে, ২০০১ সালে আফগান যুদ্ধ শুরুর পর তালিবান এখন সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় বিদেশি সেনারা চলে গেলে কী হবে তা সহজেই অনুমেয়। অর্থাৎ তালেবানরা পুনরায় ক্ষমতা দখল করে পূর্বের ন্যায় ইসলামী শাসন চালু করবে। অন্যদিকে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ‘একটি দায়িত্বশীল ও সুশৃঙ্খল পন্থায় আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করা উচিত। আফগানিস্তানে একটি মসৃণ রূপান্তর নিশ্চিত করার পাশাপাশি কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠি যাতে বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিতে না পারে, সে জন্য এটি দরকার। আফগানিস্তানের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল ও ভয়ানক। আর সন্ত্রাসবাদের সমস্যার সমাধান তো অনেক দূরের বিষয়।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ‘আফগানিস্তানে স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য ঐ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোকে আমরা বলছি, আফগানিস্তানকে আরো সহায়তা করুন। বিশেষ করে পাকিস্তান, রাশিয়া, চীন, ভারত এবং তুরস্ককে এই আহবান জানাচ্ছি। আফগানিস্তানে স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যাপারে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে আসা একটি চমৎকার এবং ইতিবাচক ব্যাপার।’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ‘আফগানিস্তানে টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য সম্ভাব্য সব রকম সহযোগিতা করবে পাকিস্তান। গত ১৫ এপ্রিল তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে ফোনালাপের সময় তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আফগানিস্তানে বহুপক্ষীয় সমঝোতা প্রচেষ্টার এক ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে। এই সুযোগকে ব্যবহার করে আফগানিস্তানের নেতাদের সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক এবং বৃহত্তর রাজনৈতিক সমাধান বের করা উচিত।’ এর আগে পাকিস্তানের জেনারেল নাদিম রাজা ২৭ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত তুরস্ক সফর করেন। সে সময় তুরস্কের কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনাকালে রাজা বলেন, ‘পাকিস্তান চায় ন্যাটো ও আমেরিকান বাহিনী প্রত্যাহার করা হলে সেখানে যেন তুরস্কের সেনা মোতায়েন করা হয়। তারা ইতোমধ্যে তালেবানদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছে, যাতে তারা তুর্কি বাহিনী মোতায়েন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আফগানিস্তানে আরও সৈন্য পাঠানোর অনুমতি দেয়।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ আফগানিস্তান প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামাবাদের একমাত্র লক্ষ্য।’
আফগানিস্তান নিয়ে আরো কিছু আলোচিত বিষয় হচ্ছে: তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর তাদের যোদ্ধাদের নিয়ে কি ‘আফগান ইসলামিক রেভিউলিশনারী ফোর্স’ গঠন করা হবে, নাকি সব যোদ্ধাকে সেনা ও পুলিশে আত্মীকরণ করা হবে? নাকি কিছুই করা হবে না। বাইরে রাখা হবে। বাইরে রাখা হলে নতুন সংকট সৃষ্টি হতে পারে। তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় এলে দেশটির নারীর শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের কী হবে? গত ২০ বছরে দেশটির নারীদের শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন অনেক বেড়েছে, যা অব্যাহত না থাকলে দেশের কাক্সিক্ষত উন্নতি হবে না। দ্বিতীয়ত: নারীরা পুনরায় ঘরে বন্দি থাকা মেনে নেবে কি-না তা নিয়েও সন্দেহ আছে। তালেবানবিরোধীদের কী হবে? দমন-পীড়ন, নির্যাতন? এসব হলে বিশ্ববাসী মেনে নেবে না। নির্বাচনের কী হবে? নির্বাচন হলে তালেবান সরকারের অধীনেই হবে। তাতে কি বিরোধী দলগুলো অংশগ্রহণ করবে? না করলে নির্বাচন একতরফা হবে, যা দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না। আইএসসহ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠি ব্যাপক তৎপর রয়েছে। তাদেরকে নির্মূল করতে না পারলে শান্তি ও উন্নতি হবে না। মাদক চাষ ও ব্যবহার দেশটির মারাত্মক সমস্যা, তার কী হবে? এসব বিষয় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে সারা বিশ্বেই। তবে জাতিসংঘ বাহিনী মোতায়েন করা হলে এসব সংকট দূর হবে। অর্থাৎ শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে হবে এবং তা সারা বিশ্বে গ্রহণযোগ্য হবে।
তালেবান হচ্ছে, পাকিস্তানিস্থ আফগান শরণার্থী শিবিরের মাদরাসার ছাত্র। আফগানিস্তানে মুজাহিদ বাহিনীগুলোর মধ্যে প্রচন্ড যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকে মার্কিন ও সৌদি আরবের অর্থ ও অস্ত্রে এবং পাকসেনাদের প্রশিক্ষণে দুর্ধর্ষ বাহিনীতে পরিণত করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তালেবান দেশের ভেতরে ঢুকে পারস্পরিক যুদ্ধরত ক্ষমতাসীন হেকমতিয়ার ও রব্বানীর বাহিনীকে পরাস্ত করে ক্ষমতা দখল করে ১৯৯৬ সালে। তারপর ইসলামী বিধান মতে, দেশ পরিচালনা করে। সে সময় দেশের ভেতরে কিংবা বিশ্বের কোথাও তারা জঙ্গীপনা করেছে এমন নজির নেই। তবে, তাদের শাসনামলে নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তালেবান প্রধান মোল্লা ওমর তালেবানদের ক্ষমতাকালে সরকারি কোনো পদ গ্রহণ করেননি। রাজধানী কাবুলেও থাকেননি। কান্দাহারে নিজ বাড়িতে থেকেছেন। ক্ষমতার প্রতি এমন নির্মোহতা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সাধারণত বিরল। স্মরণীয় যে, সোভিয়েত সেনাদের বিদায়োত্তর বিজয়ী মুজাহিদ বাহিনীগুলোর মধ্যে যদি যুদ্ধ না হতো, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতো, তাহলে তালেবান সৃষ্টিই হতো না। যা’হোক, তালেবানের ক্ষমতাকালে আমেরিকায় ৯/১১ সৃষ্টি হয় ২০০১ সালে। যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনার জন্য আল কায়েদাকে দায়ী করে। ঐ সংগঠনটির প্রধান ওসামা বিন লাদেন আফগানিস্তানে আছে অভিযোগ তোলে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায় মিত্রদের নিয়ে। তাতে তালেবান সরকারের পতন ঘটে। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় মার্কিন সমর্থিত সরকার। সেখানে কয়েক হাজার বিদেশি সেনাও অবস্থান করে। এক পর্যায়ে সেখানে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি দাঁড়ায় লক্ষাধিক। তবুও তালেবানের ভয়াবহ আক্রমণ অব্যাহত থাকে। তাতে সরকার ও বিদেশি সেনারা ব্যাপকহারে নিহত ও আহত হয়। সর্বাধিক সেনা নিহত-আহত হয় যুক্তরাষ্ট্রের। ব্যয়ও হয় বিপুল। তাই গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাধ্য হয়ে তালেবানের সাথে শান্তি চুক্তি করেন। এই চুক্তির প্রতি নীরব সমর্থন রয়েছে ইউরোপের। এছাড়া, আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চীন, রাশিয়া, ইরান, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশও তালেবানের সাথে আলোচনা করেছে। গত ২৪ জুলাই ইস্তাম্বুলে তালেবান ও সরকারের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল জাতিসংঘ ও তুরস্কের উদ্যোগে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছিল। কিন্তু তালেবান সে বৈঠকে যোগদান করেনি। তবে এ শান্তি আলোচনায় তালেবান যোগ দেবে এবং সহিংসতা হ্রাস ও যুদ্ধবিরতির বিষয়েও সম্মত হবে বলে গত ২৭ এপ্রিল জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রতিনিধি সাদেক খান।
স¤প্রতি বিবিসির সচিত্র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবান অধ্যুষিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মেয়েরা স্কুলে লেখা-পড়া করছে। তবে, হিজাব পরিধান করে। তালেবানের অধিকাংশ নেতা-কর্মী এখন পর্দা নীতি অনুসরণ করে মেয়েদের শিক্ষা কর্ম পালনে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। তবে, তালেবানের কিছু অংশ এখনো নারীর শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের প্রচন্ড বিরোধী রয়েছে। অপরদিকে, ইউনিসেফ আফগানিস্তানের তালেবান নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে কয়েক হাজার অনানুষ্ঠানিক স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য তালেবানের সঙ্গে চুক্তি করেছে গত ডিসেম্বরে। ইউনিসেফের কর্মকর্তা স্যাম মর্ট বলেছেন, এই কর্মসূচির আওতায় পড়বে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার আফগান ছেলে-মেয়ে। সেখানে ৩৭ লক্ষ ছেলেমেয়ে স্কুলে যাওয়া থেকে বঞ্চিত। তালেবানের মুখপাত্র মুহাম্মদ নাইম ওয়ারডাক সম্প্রতি সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বাহ্যিক শক্তির অনুপস্থিতিতে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে আফগানিস্তান। নতুনভাবে সবকিছু শুরু করবে তালেবান। ভারতসহ প্রতিবেশী সব রাষ্ট্র ও বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপন হবে আমাদের মূল লক্ষ্য। আমাদের আফগানিস্তানের বাইরে কোনো কার্যক্রম নেই। তালেবানের লক্ষ্য শুধু আফগানিদের একত্র করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। সেখানে চলবে ইসলামিক আইন। বাহ্যিক কোনো শক্তিকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।’ যা’হোক, তালেবানের এ বিজয়ের ঢেউ পার্শ্ববর্তী ৫টি মধ্য এশিয়ার দেশে লাগতে পারে এবং বিশ্বের সব দেশের ইসলামপন্থীদের অনুপ্রাণিত করতে পারে। কারণ, আধুনিক বিশ্বেও ঈমানী শক্তি আর দৃঢ় মনোবল থাকলে পরাশক্তিকেও পরাজয় করা যায়, তার নজির স্থাপন করেছে তালেবান।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।