বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সিলেটের চাঞ্চল্যকর রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র তদন্ত সংস্থা পিবিআই। প্রদত্ত অভিযোগপত্রে ৫ পুলিশ সদস্য সহ অভিযুক্ত করা হয়েছে ৬ জনকে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে মৃত্যুদন্ড হতে পারে আসামীদের। এরপরও এ অভিযোগপত্রে সন্তুষ্ট নন, নিহত রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম। করোনাকালীন অবস্থা শেষে আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর কোর্ট পুলিশ অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করবে। এরপরই অভিযোগপত্রের উপর নারাজি দিবেন বাদীপক্ষ।
রায়হানের মায়ের অভিযোগ, অভিযোগপত্রে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত আরও কয়েকজনকে দেওয়া হয়েছে বাদ। অভিযোগপত্রে রায়হানের নামে আরও কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো বানোয়াট এবং সাজানো। তবে অভিযোগপত্র আদালত থেকে উঠিয়ে পর্যালোচনার পর আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সময়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান তিনি। সালমা বেগম বলেন, ‘আমরা অভিযোগপত্রের জন্য প্রায় আট মাস অপেক্ষা করেছি। আশা করেছিলাম নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে একটি ভালো ফলাফল পাব। কিন্তু যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে সেটি আসামিদের পক্ষে চলে গেছে। রায়হানকে মাদকাসক্ত, মাদক ব্যবসায়ী কিংবা ছিনতাইকারীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যা আমাদের কাছে বানোয়াট ও সাজানো বলে মনে হয়েছে। যদি ছিনতাই কিংবা মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকত, তাহলে সেদিন আমাদের সঙ্গে রায়হানকে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি কেন ? সে সময় যদি আমাদের দেখা করার সুযোগ দেওয়া হতো তখন আমরা জিজ্ঞেস করতে পারতাম। এখন রায়হান মারা যাওয়ার পর বিভিন্ন বিষয়ে বলা হচ্ছে। যেগুলো রায়হান জীবিত না থাকায় আমারা হয়তো প্রমাণ করতে পারবো না। রায়হানের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আমাদের খবর দেওয়া হয়েছে। তবে প্রথম দিকে আমাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। যাতে আমরা ঘটনার কিছুই জানতে পারিনি।’
অভিযোগপত্রে পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করা প্রসঙ্গে সালমা বেগম বলেন, অভিযুক্তদের মধ্যে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্য (কনস্টেবল) তৌহিদ মিয়ার মুঠোফোন থেকে ফোন দিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রায়হান। কিন্তু অভিযোগপত্রে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়নি। সে সঙ্গে কুতুব আলী নামের এক পুলিশ সদস্যকেও অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত করা হয়নি। ঘটনায় অভিযোগকারী হিসেবে সাইদুল শেখ ও রনি শেখকেও অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত করা হয়নি।
পিবিআইয়ের প্রেস ব্রিফিংয়ে রায়হানের বিরুদ্ধে দুটি মামলার কথা উল্লেখ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের দুটি ভাড়া বাসা ছিল। সেখানে ভাড়া আনতে গিয়ে রায়হানকে সন্দেহজনক হিসেবে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। সে সময় পালিয়ে যায় ভাড়াটেরা। এসময় রায়হানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। যারা ভাড়া ছিল তারা সম্পৃক্ত থাকতে পারে মাদকের সঙ্গে। তবে রায়হানকে কোনো সময় মাদক সেবন করতে দেখেননি কিংবা শোনেননি বলে জানান সালমা বেগম। যা পোস্ট মর্টেমের প্রতিবেদনেও আসেনি।’
রায়হানের পরিবারের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম এ ফজল চৌধুরী বলেন, অভিযোগপত্র পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
রায়হানের খালাতো ভাই রাব্বি আহমেদ তানভির বৃহস্পতিবার (৬ মে) রাতে বলেন, বুধবার রাতে এ বিষয়ে আমাদের পারিবারিক বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে চার্জশিটের উপর নারাজি দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। উল্লেখ্য, দাখিলকৃত অভিযোগপত্রে ৬৯জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে। সেই সাথে আলোচিত এই মামলায় ১৬৪ ধারায় ১০জন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দী প্রদান করেন। ২২ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে ৬জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, টুআইসি এসআই হাসান আলী, এএসআই আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস কারাগারে থাকলেও ঘটনার পর থেকে লাপাত্তা রয়েছেন কোম্পানীগঞ্জের আব্দুল্লাহ আল নোমান নামের এক যুবক। পিবিআই তাকে পলাতক দেখিয়ে অভিযোগপত্রটি কোর্ট পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
এদিকে, গত বুধবার দুপুরে পিবিআই সিলেটের সদরদপ্তরে রায়হান হত্যার সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, পিবিআই রায়হান হত্যা মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর মহানগর পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন, সাক্ষ্য নেয়া, সাক্ষীদের জবানবন্দিসহ নানা বিষয় পর্যালোচনা করে অভিযোগপত্র প্রস্তুত করে। অভিযোগপত্রসহ মোট কেস ডকেট ১ হাজার ৯৬২ পৃষ্ঠা রয়েছে। এরমধ্যে ২২ পৃষ্ঠা হচ্ছে শুধু অভিযোগপত্র। পিবিআই তদন্ত করার সময় রায়হানের সাথে কোনো পুলিশ সদস্যদের শত্রুতা ছিলো কিনা সে বিষয়টি তদন্ত করা হয়। তবে এর সত্যতা মিলেনি। এছাড়াও পিবিআই আকবরের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ডিভাইসগুলো অ্যানালাইসিস করে প্রাপ্ত তথ্য অভিযোগপত্রে দাখিল করা হয়| এর আগে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। এরপর ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁঞাসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। ১৩ অক্টোবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে যান আকবর। ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে আকবরকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে বরখাস্ত কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুন অর রশিদ এবং প্রত্যাহার হওয়া এএসআই আশেক এলাহীকে গ্রেফতার করা হয়। ১১ অক্টোবর রায়হানের মৃত্যুর দিনই ওসমানী মেডিকেল কলেজের মর্গে প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্ত শেষে রায়হানের শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। ভিসেরা রিপোর্টেও নির্যাতনের বিষয়টি উঠে আসে।
প্রসঙ্গত, বুধবার (৫ মে) পিবিআই’র তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ সুপার খালেদ-উজ-জামান অভিযোগপত্রটি হস্তান্তর করেন কোর্ট পুলিশের কাছে। এতে বরখাস্ত ওই ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁঞাসহ ৬ জনের নাম রয়েছে। করোনাকালীন অবস্থা শেষে আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর কোর্ট পুলিশ অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।