পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালত গত রোববার ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করার অপরাধে ৯১ জনকে জরিমানা করেছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন, বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ৯১ জনকে মোট ৮ হাজার ২৩০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সর্বোচ্চ জরিমানার হার ছিল ২০০ টাকা। ডিএমপি ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বলেছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহায়তায় ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে উৎসাহিত করাই এ অভিযানের লক্ষ্য। তিনি জানিয়েছেন, যারা ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করেন, এ অভিযানে তাদেরই জরিমানা করা হয়েছে। তার দাবি, জরিমানা ও প্রচারণার কারণে মানুষ ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে সচেতন হবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবারও ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করে রাস্তা পার হয়ে গণ-উপদ্রব সৃষ্টির অভিযোগে ওই একই জায়গায় ৮১ জনকে জরিমানা করা হয়েছিল। ওই সময়ে দ- পাওয়াদের মধ্যে সরকারি কর্মচারী, পুলিশের সদস্য ও সাংবাদিকও ছিলেন বলে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময়ে এক ব্যক্তিকে পুলিশের সদস্যরা মারধর করে বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে জরিমানা দিতে অস্বীকৃতি জানানো, ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ধূমপান এবং পুলিশের সঙ্গে বাক-বিত-ার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধ, পথচারীদের যত্রতত্রভাবে চলাচল বন্ধ এবং সুবিধার জন্যই এটি একটি ভালো উদ্যোগ। রাজধানীতে যত্রতত্র পথচারী পারাপার যেন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পরিবহনগুলো যাত্রী ওঠানামা করায়। কার্যত সুনির্দিষ্ট কোনো বাস স্টপেজ এখন রাজধানীতে নেই। কোথাও কোথাও থাকলেও তার কোনো কার্যকারিতা নেই। ফলে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা এবং পথচারীদের যাতায়াতের কোনো বিকল্প থাকে না। রাজধানীতে হাসপাতাল, শপিংমলসহ নগরজীবনের প্রয়োজনীয় বিপণিবিতানগুলো কার্যত কোনো নিয়মনীতি মেনে গড়ে ওঠেনি। ফুটপাত পথচারীদের জন্য হলেও তা অনেকটাই বিভিন্ন শ্রেণীর হকারদের দখলে। মতিঝিল থেকে শুরু করে রাজধানীর যে কোনো এলাকা পর্যবেক্ষণ করলেই এ দৃশ্য চোখে পড়ে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর একশ্রেণীর সদস্যসহ প্রভাবশালীদের রাস্তার আইন অমান্যকরণ প্রবণতাও সাধারণ মানুষকে আইন ভাঙতে উৎসাহিত করছে। এহেন বাস্তবতায় পথচারীদের নির্দিষ্ট পথে যাতায়াতে অভ্যস্ত করা খানিকটা কষ্টসাধ্যই বটে। বাংলামোটর এলাকায় এযাবৎ যতবার ভ্রাম্যমাণ আদালত বসেছে, রাজধানীর অন্য কোথাও এতবার বসতে দেখা যায়নি। এর বিপরীত ঘটনাও ঘটছে। দেখা যাচ্ছে, দায়িত্বরত ট্রাফিক কর্মকর্তারা যানবাহন থামিয়ে পথচারীদের পারাপারের ব্যবস্থা করছে, অথচ মাথার ওপরেই রয়েছে ফুটওভার ব্রিজ। অন্যদিকে শহরে সর্বত্র প্রয়োজনীয় স্থানে ফুটওভার ব্রিজ নেই। এটিও অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা। সামগ্রিক বিবেচনায় বলা যায়, অনভ্যস্ততা এবং অসচেতনতার কারণেই একসময়ে যেমন জেব্রাক্রসিং ব্যবহার করানো যায়নি, এখনো সে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।
একথা অস্বীকার করা যাবে না, কেবল একটি স্থানে বা কোনো একদিন অভিযান চালিয়ে বহুদিনের বদভ্যাসের পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। ট্রফিক কর্মকর্তা সচেতনতা সৃষ্টির যে প্রসঙ্গ তুলেছেন, তাকে সামগ্রিকতার বিবেচনায় দেখতে হবে। প্রথমত, রাস্তায় চলাচলরত পরিবহণগুলোকে শৃঙ্খলায় আনতে হবে। ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ফুটপাথগুলো সাধারণ মানুষের চলাচল-উপযোগী করতে হবে। এ নিয়ে জেদাজেদি বা জোরজবরদস্তি না করে পথচারীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সড়কে কর্মরত ট্রফিক কর্মকর্তাদের যানবাহন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পথচারীদেরও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যেখানে ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে সেখানে পারাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং বাধ্য করতে হবে যাতে অভ্যাস গড়ে ওঠে। জরিমানা আদায়ের প্রবণতার পরিবর্তে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর জোর দিতে হবে। প্রয়োজনে পথচারীদের সহযোগিতার জন্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা যেতে পারে। এসব প্রক্রিয়া এক দিনে বা এক জায়গায় নয়, বরং সর্বত্রই সার্বক্ষণিক হওয়া জরুরি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।