নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
কাইল মেয়ার্সকে বাংলাদেশের এত সহজেই ভুলে যাওয়ার কথা নয়। এই তো গত ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষিক্ত হন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যান। সেই টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে এশিয়ার মাটিতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন মেয়ার্স- টেস্ট অভিষেকে চতুর্থ ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করে।
কিংবা ২০১৮ সালে ঢাকা টেস্টে স্পিন-সহায়ক উইকেটে ৪৪ রানে ৮ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার হয়ে টেস্ট অভিষেকে সেরা বোলিংয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন আকিল দনঞ্জয়া। পরিসংখ্যান ঘাঁটলে প্রতিপক্ষ দলে এমন আরও ক্রিকেটার মিলবে, বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেকে যাঁরা জ্বলে উঠেছেন। মজা করে তাই বলতে পারেন, রেকর্ড-গড়া অভিষেক চাই? নামিয়ে দাও বাংলাদেশের বিপক্ষে! গতকাল পুরোনো রেকর্ড ভেঙে প্রাভীণ জয়াবিক্রমাও যেমন গড়লেন নতুন রেকর্ড। আর তাতে পিষ্ট হয়ে আরেক লজ্জার হার দেখল বাংলাদেশ।
বড় হারের শঙ্কা নিয়ে পঞ্চম ও শেষ দিন শুরু করা বাংলাদেশ কিছুটা লড়াইয়ের জন্য তাকিয়ে ছিল লিটন দাসের দিকে। সাত সকালেই ফিরে যান এই কিপার-ব্যাটসম্যান। এরপর আর লড়াইয়ে ফেরা হয়নি সফরকারীদের। একপ্রান্ত আগলে কিছুটা চেষ্টা করে গেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে তার সেই লড়াই শুধু বিলম্বিতই করেছে, হার এড়ানো যায়নি। ৪৩৭ রানের প্রায় অসম্ভব রান তাড়ায় বাংলাদেশ থেমেছে ২২৭ রানে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ২০৯ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। পাল্লেকেলেতে গতকাল ৫ উইকেটে ১৭৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা সফরকারীরা দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ২২৭ রানেই। আর তাতে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজটি ১-০ তে জিতে নিয়েছে লঙ্কানরা। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়া অভিষিক্ত জয়াবিক্রমা এই ইনিংসেও নিয়েছেন ৫ উইকেট। আর তাতে অনেক রেকর্ডগড়া বর্ণিল অভিষেকের সাক্ষী বনেছেন নিজে, দিয়েছেন দেশকেও। তার সঙ্গে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৪ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন অফ স্পিনার রমেশ মেন্ডিস। বাকি উইকেট পেয়েছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা।
দুর্দান্ত বোলিংয়ে অনুমিতভাবেই ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠেছে এই স্পিন জাদুকরের হাতে। আর দলকে দক্ষ হাতে নেতৃত্ব দেওয়া আর ব্যাট হাতে একটি করে ফিফটি, সেঞ্চুরি ও ডাবল সেঞ্চুরিতে ৪২৮ রান করায় সিরিজ সেরার পুরস্কার গেছে লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নের দখলে।
টেস্ট ইতিহাসেই এত রান তাড়া করে জয়ের কোনো নজির ছিলনা। বাংলাদেশ তো কখনও ২১৫ রানের বেশি তাড়া করেও জিততে পারেনি। দেশের বাইরে চতুর্থ ইনিংসে তাদের ২৮২ রানের বেশি নেই। উইকেটে যেভাবে স্পিন ধরছিল, তাতে প্রকৃতিই কেবল উদ্ধার করতে পারতো বাংলাদেশকে। সেটি হয়নি। আর তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টেস্ট সিরিজ এবং নিউজিল্যান্ডের কাছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর এ নিয়ে টানা চতুর্থ সিরিজ হারলো বাংলাদেশ। সেই সাথে প্রতিপক্ষের মাঠে ৫০তম হারটিও এড়াতে পারলো না মুমিনুল হকের দল।
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়কের মতে পাল্লেকেলে টেস্টের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে টসই। এটা জিততে না পারাই তার ভাষায় ‘কাল’ বাংলাদেশ দলের, ‘আমি মনে করি টেস্ট ক্রিকেটে টস হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ ব্যাপার। এই টেস্টের প্রথম দুই দিন বোলারদের জন্য তেমন কিছু ছিল না। পঞ্চাশ শতাংশ টেস্ট ম্যাচেরই ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় টস।’
তবে মুমিনুলের কণ্ঠে কিছুটা আত্মসমালোচনাও ছিল, ‘শ্রীলঙ্কার কন্ডিশন বাংলাদেশের মতোই। তবে আর্দ্রতাটা একটু বেশি। এটাই আমাদের কিছুটা ভুগিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চাপ থাকবে, প্রতিক‚লতা থাকবে, আপনাকে এটা মেনে নিয়েই পারফরম করতে হবে। আমরা প্রথম ইনিংসেই টেস্টটা হেরে গেছি। প্রথম ইনিংসে আমাদের আরও ভালো ব্যাটিং করা উচিত ছিল।’
এদিকে, অনেকদিন ধরেই রানখরায় ভুগছিলেন দিমুথ করুণারত্নে। তবে এই সিরিজটি যেন দু’হাত ভরেই দিয়েছে লঙ্কান অধিনায়ককে। ব্যাট হাতে দারুণ সময় কাটানেরা পাশাপাশি দলকে দিয়েছেন দক্ষ হাতে নেতৃত্ব। দলের এমন সাফল্যের সঙ্গে নিজেকে খুঁজে পেয়েও খুশি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, ‘এই সিরিজের আগে আমি একটু রানখরায় ভুগছিলাম। সেখান থেকে নিজেকে বের কররে আনতে পেরে খুশি। বাকি ব্যাটসম্যানরাও ভালো করেছে। সিরিজের শুরু থেকেই যেন সবকিছু ভালো গেছে। টসে জেতা, আগে ব্যাটিং পাওয়া। সবকিছুই।’
তবে আলাদা করে প্রসংশায় ভাসালেন তরুণ স্পিনার জয়াবিক্রমাকে, ‘স্পিনাররা খুবই ভালো করেছেন। বিশেষকরে প্রভীন, রমেশও। আমি মনে করি তাদের খুব বেশি বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। তাতে করে এই আত্মবিশ্বাসটা বজায় থাকবে। আমরা যদি সেই সুযোগটা তাদের দিতে পারি তবে আমি নিশ্চিত তারা দিলরুয়ান (পেরেরা) ও হেরাথের (রঙ্গণা) জায়গা নিতে সময় নেবে না।’
নতুন কেউ এসেই বাংলাদেশের বিপক্ষে জ্বলে উঠেন। গত ফেব্রুয়ারিতে উইন্ডিজ কাইল মেয়ার্সের পর এবার যেমনটা হয়েছেন জয়াবিক্রমা। কেন এমনটা হয়? বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক স্বীকার করে নেন নতুনদের ব্যাপারে জানার ঘাটতিই ভোগায় বাংলাদেশকে, ‘ভিডিও অ্যানালিস্ট তো অবশ্যই সব ব্যাপারে সহায়তা করে। যারা নতুন আসে তাদের একটা বাড়তি সুবিধা থাকে। সেটা আমার ক্ষেত্রেও ছিল। নতুন যারা আসে তাদের ব্যাপারে জানার ঘাটতি থাকে। আমার মনে হয়, নতুন যেই আসুক তার জন্য ভালো বল, ভালো বলই, খারাপ বল খারাপই।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা : ৪৯৩/৭ (ডিক্লে.)। ও দ্বিতীয় ইনিংস : ৪২.২ ওভারে ১৯৪/৯ (ডিক্লে)। বাংলাদেশ : ২৫১ ও দ্বিতীয় ইনিংস : ৭১ ওভারে ২২৭/১০ (লক্ষ্য ৪৩৭) (তামিম ২৪, সাইফ ৩৪, শান্ত ২৬, মুমিনুল ৩২, মুশফিক ৪০, লিটন ১৭, মিরাজ ৩৯, তাইজুল ২, তাসকিন ৭, শরিফুল ০, জায়েদ ০; লাকমাল ০/১৪, রমেশ ৪/১০৩, জয়াবিক্রমা ৫/৮৫, ধনঞ্জয়া ১/১৯)। ফল : বাংলাদেশ ২০৯ রানে পরাজিত। ম্যাচ সেরা : প্রাভীন জয়াবিক্রমা। সিরিজ : ২ ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ১-০ ব্যবধানে জয়ী। সিরিজ সেরা : দিমুথ করুণারত্নে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।