Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারত-মার্কিন অক্ষশক্তি কোয়াডের মোকাবিলায় বাংলাদেশকে পাশে চান চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

মোবায়েদুর রহমান | প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০২১, ১২:০২ এএম

যেটা হতে পারতো একটি High profile visit সেটা হয়ে গেল Low profile বা Low key visit. চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গহি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে চীনা প্রশাসনের এই গুরুত্বপূর্ণ নেতা তিনটি রাষ্ট্র সফরে বেরিয়েছিলেন। রাষ্ট্র তিনটি হলো, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা। আমি ইন্টারনেটে তিনটি রাষ্ট্রেই চীনা নেতার সফরের সংক্ষিপ্ত বিবরণ পড়লাম। ঢাকা থেকে তিনি শ্রীলঙ্কা যান। সেখানে তিনি দুইদিন অবস্থান করেন। সেখানে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষ এবং প্রধানমন্ত্রী মহেন্দ্র রাজাপক্ষের সাথে বৈঠক করেন। ঢাকাতেও চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল নিয়ে আসেন। একই ডেলিগেশন শ্রীলঙ্কাতেও যায়। সেখানে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের আগে শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল কামাল গুনেরত্নে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। তাদের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সম্পর্কে ফলপ্রসু আলোচনা হয়। শ্রীলঙ্কার একটি জাতীয় দৈনিক এই সফর সম্পর্কে মন্তব্য করেছে যে, এই সফরের ফলে দুই দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক যেমন গতি সঞ্চার করবে তেমনি সামরিক সম্পর্কও জোরদার করবে। ইন্দো প্যাসিফিক ফ্রেম ওয়ার্কের অধীনে যে কোয়াড গঠন করা হয়েছে, সেটিকে একটি সামরিক জোট মনে করে চীন। এই জোটে রয়েছে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত। আমেরিকা চাচ্ছে যে, ভারত মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগর তীরবর্তী দেশগুলি যাতে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে যোগদান করে। আমেরিকা আইপিএসকে চীনের বেল্ট এ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআই-এর পাল্টা সংস্থা হিসাবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। তবে আমেরিকা বা ভারত এখনও শ্রীলঙ্কাকে কোয়াড বা এইপিএসে ভিড়াতে পারেনি। ব্যাপক ও বিস্তৃত ক্ষেত্রে আইপিএস বা কোয়াড চীন-মার্কিন বিরোধকেন্দ্রিক সংস্থায় পর্যবসিত হয়েছে। কিন্তু চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধে কোয়াড আসলে চীন-ভারত বিরোধকেন্দ্রিক সংস্থায় পরিণত হয়েছে। শ্রীলঙ্কা এই বিরোধে জড়াতে চায় না। এ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা মোটামুটি নিরপেক্ষ ভ‚মিকা পালন করলেও কিছুটা চীনের দিকে হেলে আছে।

বাংলাদেশে আসার আগে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও চীনের স্টেট কাউন্সিলর জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি তিন দিনের সফরে ভিয়েতনাম যান। চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত ভোজ সভায় ভিয়েতনামের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লে: জেনারেল ফ্যান ভ্যান সিয়াং চীনের ভ‚য়শী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহির এই সফর প্রমাণ করে যে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি, সরকার এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ভিয়েতনামকে কত গুরুত্ব দেয়। তিনি বলেন, ভিয়েতনামের বিদেশনীতিতে চীনকে দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। উত্তরে ওয়েই ফেঙ্গহি বলেন, চীন এবং ভিয়েতনামের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা দুই দেশের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ রচনা করেছে। ভিয়েতনামের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, বিগত ৭০ বছরে দুই দেশের সম্পর্কে অনেক উত্থান-পতন ঘটেছে। কিন্তু মৈত্রী এবং সহযোগিতা ছিল দুই দেশের সম্পর্কের মেইন স্ট্রিম বা কর্ণার স্টোন। উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের একত্রীকরণে চীনের ভ‚মিকা ভিয়েতনাম কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করবে।
দুই
ভিয়েতনাম সফরকালে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাথে ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট নগুয়েন জুয়াং ফু এবং ভিয়েতনামী কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারী নগুয়েন ফু ট্রং-এরও বৈঠক হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ বলছেন যে, চীন-মার্কিন বিরোধে হ্যানয় খুব সম্ভব চীনের দিকে হেলে পড়েছে।

এই পটভ‚মিকায় চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঢাকায় এসেছিলেন। ২৭ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল ১০ টা ৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাটিতে তাকে রিসিভ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহ্রিয়ার আলম। তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমদের সাথে বৈঠক করেন এবং বিকেলে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ঐ দিনই অর্থাৎ ২৭ এপ্রিল মঙ্গলবার তিনি শ্রীলঙ্কার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এপ্রিল মাসের গোড়ার দিকে ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভেন ৫ দিনের সফরে ঢাকা আসেন।

এই পটভ‚মিকায় আমি যখন ২৫ এপ্রিল রাতে একটি সংক্ষিপ্ত খবর দেখি যে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গহি সংক্ষিপ্ত এক সফরে ঢাকা আসছেন তখনই আমার মনে প্রশ্ন জাগে, এত সংক্ষিপ্ত সফরে, কোনোরূপ জানান না দিয়ে হঠাৎ চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মত চীন সরকারের একজন শীর্ষ নেতা ঢাকা আসছেন কেন? ২৭ এপ্রিল দেখলাম, তিনি সাক্ষাৎ করবেন প্রেসিডেন্টের সাথে এবং বৈঠক করবেন সেনাপ্রধান আজিজ আহমদের সাথে। একজন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বা অন্য কোনো মন্ত্রী যখন বিদেশে রাষ্ট্রীয় বা অফিসিয়াল সফরে যান তখন তিনি অবশ্যই তাঁর কাউন্টার পার্টের সাথে দেখা করেন। ভিয়েতনামে তো তিনি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সাথে এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাথেও দেখা করেছেন। একই ব্যাপার ঘটেছে শ্রীলঙ্কাতেও। বাংলাদেশে অবশ্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। দেখলাম, প্রধানমন্ত্রীর সাথে ওয়েই ফেঙ্গহির সাক্ষাতের কোনো কর্মসূচি নাই। এমনকি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সাথেও কোনো প্রোগ্রাম নাই। প্রোগ্রাম রয়েছে প্রেসিডেন্টের সাথে আর সেনাপ্রধানের সাথে। সেনাপ্রধান তো নীতি নির্ধারণী কোনো ব্যক্তি নন। প্রতিরক্ষা নীতি ও পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন করবে সরকার, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভা। এমনকি অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বা দৈব দুর্বিপাক মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর সাহায্য নিতে হয়, তাহলে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেবে সরকার এবং সেনাবাহিনী সেই নির্দেশ পালন করবে মাত্র।

আর প্রেসিডেন্ট? প্রেসিডেন্টের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে বলছি যে, পার্লামেন্টারী সরকার ব্যবস্থায় এবং বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক প্রেসিডেন্ট একটি অলঙ্কারিক পদ। প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতির নিয়োগদান ছাড়া তাঁর আর কোনো ক্ষমতা নাই। প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়ার সময়ও যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি নিয়োগ দিতে পারেন না। পার্লামেন্ট বা জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকেই প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে হয়। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার সময়ও প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশকৃত ব্যক্তিকেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতে হয়। রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণে প্রেসিডেন্টের কোনো ভ‚মিকা নাই। তারপরেও চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঢাকা এলেন। এসব দেখে শুনে আমার একটি বিষয় মনে হয়েছে। এটি নেহায়তই আমার অনুমান যে, প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কোনো বৈঠকের কর্মসূচি না রেখেও চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী যখন মাত্র কয়েক ঘন্টার সফরে ঢাকায় আসছেন তখন খুব সম্ভব তিনি ঢাকাকে কোনো বার্তা দিতে আসছেন। কি হতে পারে সেই বার্তা? এ ব্যাপারেও আমি মনে মনে কিছু একটা অনুমান করেছিলাম। তবে অপেক্ষা করছিলাম এটা দেখতে যে এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলেন কিনা। এ ব্যাপারে গত ২৯ এপ্রিল দৈনিক নিউ এজের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি খবর দেখলাম। খবরটি আমার অনুমানের সাথে মিলে গেল। খবরটির শিরোনাম, China seeks support against us-led military alliance in South Asia. অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের বিরুদ্ধে চীন সমর্থন চায়। খবরে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য আমেরিকার নেতৃত্বে যে সামরিক জোট গঠন করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রহণের ওপর জোর দিয়েছে চীন। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের সাথে বৈঠককালে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গহি এই গুরুত্ব আরোপ করেন। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে তাদের বিরুদ্ধে যারা এই অঞ্চলের বাইরে অবস্থান করে দক্ষিণ এশিয়ায় সামরিক জোট গঠন করতে চায়। চীনা মুখপাত্রের বরাত দিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া এই খবর দিয়েছে। ‘দৈনিক ইনকিলাব’র ১ মে সংখ্যার শেষ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ডাবল কলাম সংবাদের শিরোনাম, ‘চীন বাংলাদেশের সামরিক জোট গঠন করা উচিত/বাইরের শক্তি সম্পর্কে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর নিয়ে সিনহুয়ার প্রতিবেদন।’ সিনহুয়ার খবরের সত্যতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে বাংলাদেশ সরকারের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বা আইপিএস সম্পর্কে জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। আমরাও বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চীন-ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করেছি। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমরা কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিদ্ব›িদ্বতায় জড়াতে চাই না। অর্থনীতি এবং বাণিজ্য উন্নয়ণের সম্ভাবনা যেখানে আছে, সেখানে আমরা তেমন সম্পর্ক উন্নয়ণে উদ্যোগ নেবো।

১ মে ‘দৈনিক প্রথম আলো’র প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত দ্বিতীয় প্রধান সংবাদের শিরোনাম, ‘যুক্তরাষ্ট্র-ভারত জোটের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে সঙ্গে চায় চীন’। খবরের ইনট্রোতে বলা হয়, চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে কোয়াড নিয়ে বেইজিংয়ের অস্বস্তির কথা জানান। বেইজিংয়ের প্রস্তাবে মত দেয়নি ঢাকা। খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ভারত সহ ৪টি দেশের কৌশলগত অনানুষ্ঠানিক নিরাপত্তা সংলাপ বা কোয়াড নিয়ে চীন তার উদ্বেগের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ উন্নয়ণ অব্যাহত রাখার স্বার্থে বাইরের শক্তির এমন সামরিক জোটের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে পাশে পেতে চায় চীন। তবে চীনের প্রস্তাবে বাংলাদেশ কোনো সাড়া দেয়নি। উক্ত খবরে আরো প্রকাশ, প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাতের সময় চীনামন্ত্রী কোয়াড নিয়ে চীনের অস্বস্তির কথা জানান। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, চীন তার অবস্থানের কথা বলেছে। তিনি যা বলেছেন, সেটি বাংলাদেশ সমর্থন করে এমনটি নয়। তিনি যা বলেছেন বাংলাদেশ তা শুনেছে। রিপোর্টে আরো বলা হয় যে এই আলোচনায় চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি লাদাখ সীমান্ত সংঘর্ষের প্রসঙ্গটি তোলেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উদ্যোগে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কোয়াড ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনের প্রসঙ্গটিও চীনা মন্ত্রী উত্থাপন করেন। কোয়াড একটি চীন বিরোধী সামরিক জোট বলেও চীন উল্লেখ করেন।
তিন
আসলেই এটি হয়েছে একটি সামরিক জোট। প্রখ্যাত সাময়িকী ‘নিউ ইস্টার্ন আউটলুকের’ ১৯ মার্চ সংখ্যায় ভ্লাদিমির তেরেহব একটি তথ্যবহুল নিবন্ধ লিখেছেন। মি. ভ্লাদিমির এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ওপর একজন বিশেষজ্ঞ হিসাবে গণ্য। তার নিবন্ধটির নাম The first summit of the Quad, আগেই বলা হয়েছে যে, ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির আওতাধীন কোয়াড একটি চার দলীয় জোট। এর সদস্যরা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত। কোয়াডের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১২ মার্চ। অবশ্য সশরীরে নয়। এই চার দেশের সরকার প্রধানরা শীর্ষ সম্মেলন করেছেন ভার্চুয়াল পর্যায়ে। আমেরিকা কোয়াডকে দেখতে চায় স্নায়ু যুদ্ধকালে ন্যাটো (North Atlantic Treaty Organization) ইউরোপে যে ভূমিকা পালন করেছিল, কোয়াড সেই ভূমিকা এশিয়াতে পালন করুক। তখন পৃথিবীতে দুটি পরাশক্তি ছিলো। একটি আমেরিকা অপরটি সোভিয়েট ইউনিয়ন। আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ছিলো ন্যাটো সামরিক জোট। সোভিয়েট ইউনিয়নের নেতৃত্বে (Warsaw Pact) ওয়ারশেসা চুক্তি। আমেরিকা এবং সোভিয়েট ইউনিয়ন ছিলো প্রবল প্রতিদ্ব›দ্বী। তেমনি মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো এবং সোভিয়েট নেতৃত্বাধীন ওয়ারসো ছিলো পরস্পর পরস্পরের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী।। সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর তার স্থলাভিসিক্ত হয় রাশিয়া। কিন্তু অর্থনীতি এবং সামরিকভাবে রাশিয়া অনেক দুর্বল হয়ে যায় এবং পরাশক্তির মর্যাদা হারায়।

এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হলো চীন। আমেরিকা এখন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে চীনকে। ওয়ারশো প্যাক্ট ভেঙ্গে গেছে। ন্যাটোও অকার্যকর। বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু স্থানান্তরিত হয়েছে ইউরোপ থেকে এশিয়ায়। চীনকে চারদিক দিয়ে ঘিরে রাখার জন্য গঠন করা হয়েছে আইপিএস। আর চীনকে অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে মোকাবেলা করার পেছনে আমেরিকার পরেই যার স্বার্থ রয়েছে, সেটি হলো ভারত। চীন ভারত সীমান্ত সংঘর্ষ বা সীমিত যুদ্ধে কোয়াডকে পাশে পেতে চায় ভারত। আর চীনকে মোকাবেলা করার জন্য ভারত পাশে চায় বাংলাদেশকে। আর ভারতকে মোকাবেলা করার জন্য চীনও পাল্টা পাশে পেতে চায় বাংলাদেশকে। শীল-পাটার ঘষা ঘষির মাঝখানে পড়েছে বাংলাদেশ। তাই বলছি, চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গহির বাংলাদেশ সফরকে বাংলাদেশের মিডিয়া যতই আন্ডার প্লে করুক না কেন, এটি ছিলো আসলে একটি অসাধারণ গুরুত্ববাহী হাই প্রোফাইল ভিজিট।
Email: [email protected]



 

Show all comments
  • Md. Mofazzal Hossain ৪ মে, ২০২১, ১:২১ এএম says : 0
    China is one and only friend near Bangladesh. Our country always received unconditional help from China unlike from India (except in 1971).
    Total Reply(1) Reply
    • আবু বকর সিদ্দিক ৪ মে, ২০২১, ১১:৪১ পিএম says : 0
      যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো সামান্য ইস্যু তৈরি করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে, যেমন ইরাক সিটিয়া আফগান। চীনের মতো পরাশক্তির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যুদ্ধে জড়ালে এই যুদ্ধে অস্ত্র বিক্রির সার্থে যুদ্ধ দীর্ঘ হবে এটাই সাভাবিক। ব্ঙ্গবসাগরে যুক্তরাষ্ট্র সপ্ত নৌবহর প্রতিষ্ঠার নামে বাংলাদেশের কাচে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি দেখিয়ে বিশাল টাকার অংশ নেওয়া ছাড়াও এদেশের সার্বভৌমত্বের উপর নজরদারি করবে, তাই নিজ সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখতে সামরিক শক্তির আধুনিকায়নের বিকল্প নেই। এছাড়াও চীন ভারত সীমান্তে চীন কে মোকাবেলায় ভারত যে কোন সময় এটি ব্যবহার করার চেষ্টা করবে। আপাতত কোন পক্ষে না থাকাই শ্রেয়। পরিস্থিতি বাধ্য করলে চীন জোটকে সমর্থন করা যেতে পারে।।।
  • কুদ্দুস তালুকদার ৪ মে, ২০২১, ১:২২ এএম says : 0
    আপনার লেখাটি পরে চীন সম্পর্কে আরও কিছু জানতে পারলাম।আমি চীনের রাজধানী বেইজিং এ পড়াশোনা করি।তাই বলছি ,চীন আসলেই বদলে গেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • তোফাজ্জল হোসেন ৪ মে, ২০২১, ১:২৩ এএম says : 0
    বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী নতুন কিছু নয়; এ সম্পর্ক প্রাচীন। দুই হাজার বছর কিংবা তারও বেশি আগের সম্পর্ক। বাংলাদেশকে চীনের সঙ্গে যুক্ত করেছিল যে পথ, তার নাম রেশম পথ, যা সিল্ক রোড নামে ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। ছিল পশ্চিমা সিল্ক রোড, যার সূচনা হয়েছিল রাজধানী সিয়ান (তৎকালীন ছাংআন) থেকে। সেই পথ সিনজিয়াং হয়ে আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে ভারত হয়ে পৌঁছেছিল বাংলাদেশে (মংচিয়ালা)।
    Total Reply(0) Reply
  • তৌহিদুজ জামান ৪ মে, ২০২১, ১:২৪ এএম says : 0
    বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক, ভূকৌশলগত ও ভূ-অর্থনৈতিক অবস্থান এমন যে, তা আঞ্চলিক কৌশলগত ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে। এমনকি বৈশ্বিক কৌশলগত ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের স্থান বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগ-সেতু হিসেবে বিবেচিত। এশিয়ার দুই বৃহৎ দেশের মধ্যখানে বাংলাদেশের অবস্থান, যার একটি উদীয়মান ভারত। অন্যটি চীন, যা ইতিমধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • দেওয়ান মাহদী ৪ মে, ২০২১, ১:২৪ এএম says : 0
    চীন একটি বিনম্র শক্তি; দেশটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী এবং শান্তির পথই অনুসরণ করে। তবে চীন তার সমুদ্রসীমার নিরাপত্তার ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ এবং সে অনুসারেই নিজের নৌশক্তি গড়ে তুলেছে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে।চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্রতিরক্ষা।
    Total Reply(0) Reply
  • Kamrul Sharif ৪ মে, ২০২১, ১:২৮ এএম says : 0
    বাংলাদেশ-চীনের নতুন মাত্রার এই সম্পর্ক শুধু বাংলাদেশের জন্যই গড়ে উঠেনি বরং নানা কারণে চীনেরও স্বার্থ রয়েছে বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। বাংলাদেশ সফরকালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে চীন এবং এটিই বাংলাদেশকে ঘিরে চীনের আগ্রহের মূল কারণ।
    Total Reply(0) Reply
  • Habibur Rahman ৪ মে, ২০২১, ১:২৮ এএম says : 0
    ব্যাপারটা হচ্ছে কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান, ভারতের সঙ্গে তার ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক নৈকট্য, সস্তা শ্রমের প্রাপ্যতা এবং বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি অবস্থান এসব কিছুই চীনের আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
    Total Reply(0) Reply
  • Habibullah Rahmany ৪ মে, ২০২১, ১:২৯ এএম says : 0
    দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের বিশাল কর্মযজ্ঞ ও ভারতের সঙ্গে চীনের প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের জন্য অসাধারণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তাই, আমারা আমাদের এই ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগাতে পারি। বাংলাদেশকে এখন সূক্ষ্ম ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে চীনের চেকবুক কূটনীতি থেকে লাভবান হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Akhter Hossain Akhter ৪ মে, ২০২১, ৯:৩৯ এএম says : 0
    বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি " সকলের সাথে বন্ধুত্ব কাহারো সাথে শত্রুতা নয় " এই নীতির প্রতি স্থির থাকতে হবে। পরাশক্তিদের যে কোন জোটে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Momin Chowdhury ৪ মে, ২০২১, ৯:৪১ এএম says : 0
    বর্তমান সময়ের যে চীনের জোটে থাকবে সেই নিরাপদে থাকবে কারণ এশিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেরকে যুক্তরাষ্ট্র রক্ষা করতে পারবে না অতীতেও পারেনি
    Total Reply(0) Reply
  • Torekul islam Tonoy ৪ মে, ২০২১, ১১:১৬ এএম says : 0
    আঞ্চলিক পরাশক্তি হওয়ার একটা সুবর্ণ সুযোগ হতে পারে এই প্রস্তাব
    Total Reply(0) Reply
  • Rafiq ৪ মে, ২০২১, ১১:১৮ এএম says : 0
    রোহিঙ্গা ইস্যুতে মায়ানমারকে সমর্থন করেছে চীন, অন্য দিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা বৈঠকে ভারতের নিরবতা প্রমাণ করে পার্শ্ববর্তী কোন রাষ্ট্রই বাংলাদেশের ভালো চায় না, আমি বলি কি বাংলাদেশ নামক পায়ের তলা মাটিকে শক্ত করে ফেলুন, যেকোন রাষ্ট্রকে পাশে পাবেন, এটাই দুনিয়ার নিয়ম
    Total Reply(0) Reply
  • Amir Hossan ৪ মে, ২০২১, ১১:১৯ এএম says : 0
    ভারতের চাইতে চিনের সাথে থাকাই ভালো
    Total Reply(0) Reply
  • Ziaul Shohag ৪ মে, ২০২১, ১১:১৯ এএম says : 0
    আর রক্ষা নাই বাম দিকে পা দিলে বিপদ, ডান দিকে পা দিলে ও বিপদ। রক্ষা করো খোদা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন