নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বড় হারের শঙ্কা নিয়ে পঞ্চম ও শেষ দিন শুরু করা বাংলাদেশ কিছুটা লড়াইয়ের জন্য তাকিয়ে ছিল লিটন দাসের দিকে। সাত সকালেই ফিরে যান এই কিপার-ব্যাটসম্যান। এরপর আর লড়াইয়ে ফেরা হয়নি সফরকারীদের। একপ্রান্ত আগলে কিছুটা চেষ্টা করে গেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে তার সেই লড়াই শুধু বিলম্বিতই করেছে, হার এড়ানো যায়নি। ৪৩৭ রানের প্রায় অসম্ভব রান তাড়ায় বাংলাদেশ থেমেছে ২২৭ রানে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ২০৯ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। পাল্লেকেলেতে সোমবার ৫ উইকেটে ১৭৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা সফরকারীরা দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ২২৭ রানেই। আর তাতে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজটি ১-০ তে জিতে নিয়েছে লঙ্কানরা।
প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়া অভিষিক্ত প্রাভীন জয়াবিক্রমা এই ইনিংসেও নিয়েছেন ৫ উইকেট। বাংলাদেশকে গুটিয়ে দিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৪ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন অফ স্পিনার রমেশ মেন্ডিস। বাকি উইকেট পেয়েছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা।
সাতসকালেই শেষ বাংলাদেশ
উইকেটে স্পিনারদের জন্য প্রবল সুবিধা। পাল্লেকেলে টেস্টের পঞ্চম দিন স্থায়ী হলো এক ঘণ্টার একটু বেশি সময়। চতুর্থ দিনের সংগ্রহের সঙ্গে ৫০ রান যোগ করেই বাংলাদেশ হারিয়েছে শেষ ৫ উইকেট। শেষ ৩ উইকেট গেছে ৯ বলের ব্যবধানে ঠিক ২২৭ রানে! যার দুটিই জয়াবিক্রমার।
দ্বিতীয় টেস্টে জয়ের জন্য শেষ দিনে সফরকারীদের প্রয়োজন ছিল ২৬০ রান। তামিম ইকবাল, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম—সবাই আউট। প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে শেষ দিন শুরু করা দলের জন্য এই স্পিন স্বর্গে টিকে থাকাও ছিল কঠিন।
দিনের তৃতীয় ওভারেই বাংলাদেশ খায় ধাক্কা। বাঁহাতি স্পিনার প্রাভিন জয়াবিক্রমার বলে প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও কাবু লিটন। এবার তার সোজা পা সামনে নিয়ে ডিফেন্স করতে গিয়েছিলেন। লাইন মিস করে বল লাগে প্যাডে। জোরালো আবেদনে আউট হওয়ার পর রিভিউ নিয়েও টিকতে পারেননি। কিপার-ব্যাটসম্যান ফেরেন ৪৬ বলে ১৭ রান করে।
তাইজুল টুকটাক ব্যাটিং জানেন। তিনি টিকলেন ৩০ বল। কিছুটা সময় দৃঢ়তা দেখানোর পর ধনঞ্জয়া ডি সিলভার অনেক বাইরের বল তাড়া করে ২ রান করা এই ‘নাইটওয়াচম্যান’ সাতসকালে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। আর ৩৩ বলে টিকে ৭ রান করা তাসকিনকে তুলে নেন রমেশ মেন্ডিস।
এদিন সকালে যা রান আসছিল সবই মিরাজের ব্যাট থেকে। সুইপ করে রান বের করছিলেন। সেই সুইপই কাল হয় তার। জয়াবিক্রমার বলে তাকে সুইপের চেষ্টায় দেখে দারুণ বুদ্ধিতে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ থেকে লেগ স্লিপের দিকে আগেভাগে ছুটে যান পাথুম নিশাকা। নেন দারুণ ক্যাচ। ৮৬ বল খেলে এই অলরাউন্ডারকে থামতে হয় ৩৯ রানে।
অভিষেকেই বাজিমাত
আবু জায়েদ রাহিকে তুলে ইনিংস মুড়ে দিতে জয়াবিক্রমার লেগেছে আর ৩ বল। সঙ্গে গড়েন অভিষেকে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। সেই ১৯৫০ সালে ম্যানচেস্টারে ২০৪ রানে ১১ উইকেট নিয়ে এত দিন রেকর্ডটা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের অ্যালফ ভ্যালেন্টাইনের অধিকারে।
টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকে ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়া ১৬তম বোলার জয়াবিক্রমা। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসেই প্রথম এই স্পিনার!
ম্যাচে সব মিলিয়ে ১৭৮ রানে নেন ১১ শিকার- ক্রিকেট ইতিহাসে অভিষেক ম্যাচে তার চেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন কেবল চার জন। ২০০৮ সালের পর এমন ঘটনা এই প্রথম দেখলো বিশ্বই। এখানেই শেষ নয়। ১৯৮০ সালের পর জয়াবিক্রমাই টেস্ট অভিষেকে কমপক্ষে ১০ উইকেট পাওয়া চতুর্থ বোলার!
জয়াবিক্রমা আরও একটি জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন ৯৮ বছর আগের স্মৃতিতে। ১৯২৩ সালে কেপটাউনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে ১১২ রানে ১১ উইকেট নিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক বাঁহাতি পেসার আলফ্রেড হল। তারপর এই ৯৮ বছরে বাঁহাতি বোলারদের মধ্যে টেস্ট অভিষেকে জয়াবিক্রমাই সবচেয়ে কম রান দিয়ে ন্যূনতম ১০ উইকেট নিলেন।
টেস্ট ক্রিকেটে ১৪৪ বছরের ইতিহাসে জয়াবিক্রমার এই বোলিং ফিগার শীর্ষ দশে থাকবেন। তালিকায় তিনি দশম। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ইনিংসেই ন্যূনতম ৫টি করে উইকেট নিয়েছেন জয়াবিক্রমা। টেস্ট অভিষেকে সর্বশেষ এমন নজির দেখা গেছে ১৯৮৮ সালে। ভারতের সাবেক স্পিনার নরেন্দ্র হিরওয়ানি চেন্নাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেকে সর্বশেষ দুই ইনিংসেই ন্যূনতম ৫টি করে উইকেট নিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেকে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডও এখন জয়াবিক্রমার। আগের সেরা ছিল শ্রীলঙ্কারই আকিলা দনাঞ্জয়ার। ২০১৮ সালে ঢাকা টেস্টে ৪৪ রানে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন এই অফ স্পিনার।
দুর্দান্ত বোলিংয়ে অনুমিতভাবেই ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠেছে এই স্পিন জাদুকরের হাতে। এমন দিনেও মাটিতেই পা রাখছেন ২৩ এই পা দেয়া এই স্পিন বিস্ময়। পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চে জানালেন, ‘অভিষেক ম্যাচ সবার জন্যই একটি বাড়তি প্রেসারের। তবে নিজের মতো খেলার স্বাধীনতা দিয়ে অধিনায়ক আর সিনিয়র সতীর্থরা মিলে সেই চাপ থেকে মুক্ত রেখেছিলেন আমাকে।‘
রেকর্ড-গড়া অভিষেক চাই?
কাইল মেয়ার্সকে বাংলাদেশের এত সহজেই ভুলে যাওয়ার কথা নয়। এই তো গত ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষিক্ত হন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যান। সেই টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে এশিয়ার মাটিতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন মেয়ার্স—টেস্ট অভিষেকে চতুর্থ ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করে।
কিংবা ২০১৮ সালে ঢাকা টেস্টে স্পিন–সহায়ক উইকেটে ৪৪ রানে ৮ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার হয়ে টেস্ট অভিষেকে সেরা বোলিংয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন আকিল দনঞ্জয়া। পরিসংখ্যান ঘাঁটলে প্রতিপক্ষ দলে এমন আরও ক্রিকেটার মিলবে, বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেকে যাঁরা জ্বলে উঠেছেন। মজা করে তাই বলতে পারেন, রেকর্ড-গড়া অভিষেক চাই? নামিয়ে দাও বাংলাদেশের বিপক্ষে!
আজ পুরোনো রেকর্ড ভেঙে জয়াবিক্রমাও যেমন গড়লেন নতুন রেকর্ড।
নিজেকে খুঁজে পাওয়া করুণারত্নে
আর দলকে দক্ষ হাতে নেতৃত্ব দেওয়া আর ব্যাট হাতে একটি করে ফিফটি, সেঞ্চুরি ও ডাবল সেঞ্চুরিতে ৪২৮ রান করায় সিরিজ সেরার পুরস্কার গেছে লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নের দখলে। এই সিরিজে নিজেকে খুঁজে পেয়েই খুশি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, ‘এই সিরিজের আগে আমি একটু রানখরায় ভুগছিলাম। সেখান থেকে নিজেকে বের কররে আনতে পেরে খুশি। বাকি ব্যাটসম্যানরাও ভালো করেছে। সিরিজের শুরু থেকেই যেন সবকিছু ভালো গেছে। টসে জেতা, আগে ব্যাটিং পাওয়া। সবকিছুই।’
তবে আলাদা করে প্রসংশায় ভাসালেন তরুণ স্পিনার জয়াবিক্রমাকে, ‘স্পিনাররা খুবই ভালো করেছেন। বিশেষকরে প্রভীন, রমেশও। আমি মনে করি তাদের খুব বেশি বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। তাতে করে এই আত্মবিশ্বাসটা বজায় থাকবে। আমরা যদি সেই সুযোগটা তাদের দিতে পারি তবে আমি নিশ্চিত তারা দিলরুয়ান (পেরেরা) ও হেরাথের (রঙ্গণা) জায়গা নিতে সময় নেবে না।’
জিততে গড়তে হতো রেকর্ড
টেস্ট ইতিহাসেই এত রান তাড়া করে জয়ের কোনো নজির ছিলনা। বাংলাদেশ তো কখনও ২১৫ রানের বেশি তাড়া করেও জিততে পারেনি। দেশের বাইরে চতুর্থ ইনিংসে তাদের ২৮২ রানের বেশি নেই।
উইকেটে যেভাবে স্পিন ধরছিল, তাতে প্রকৃতিই কেবল উদ্ধার করতে পারতো বাংলাদেশকে। সেটি হয়নি। আর তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টেস্ট সিরিজ এবং নিউজিল্যান্ডের কাছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর এ নিয়ে টানা চতুর্থ সিরিজ হারলো বাংলাদেশ। সেই সাথে প্রতিপক্ষের মাঠে ৫০তম হারটিও এড়াতে পারলো না মুমিনুল হকের দল।
মুমিনুলের আত্মসমালোচনা
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়কের মতে পাল্লেকেলে টেস্টের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে টসই। এটা জিততে না পারাই তাঁর ভাষায় ‘কাল’ বাংলাদেশ দলের, ‘আমি মনে করি টেস্ট ক্রিকেটে টস হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এই টেস্টের প্রথম দুই দিন বোলারদের জন্য তেমন কিছু ছিল না। পঞ্চাশ শতাংশ টেস্ট ম্যাচেরই ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় টস।’
তবে মুমিনুলের কণ্ঠে কিছুটা আত্মসমালোচনাও ছিল, ‘শ্রীলঙ্কার কন্ডিশন বাংলাদেশের মতোই। তবে আর্দ্রতাটা একটু বেশি। এটাই আমাদের কিছুটা ভুগিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চাপ থাকবে, প্রতিকূলতা থাকবে, আপনাকে এটা মেনে নিয়েই পারফরম করতে হবে। আমরা প্রথম ইনিংসেই টেস্টটা হেরে গেছি। প্রথম ইনিংসে আমাদের আরও ভালো ব্যাটিং করা উচিত ছিল।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস : ৪৯৩/৭ (ইনিংস ঘোষণা)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ২৫১ (অলআউট)।
শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস : ৪২.২ ওভারে ১৯৪/৯ (ইনিংস ঘোষণা)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ৭১ ওভারে ২২৭/১০ (লক্ষ্য ৪৩৭) (তামিম ২৪, সাইফ ৩৪, শান্ত ২৬, মুমিনুল ৩২, মুশফিক ৪০, লিটন ১৭, মিরাজ ৩৯, তাইজুল ২, তাসকিন ৭, শরিফুল ০, জায়েদ ০; লাকমাল ০/১৪, রমেশ ৪/১০৩, জয়াবিক্রমা ৫/৮৫, ধনঞ্জয়া ১/১৯)।
ফল : বাংলাদেশ ২০৯ রানে পরাজিত।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : প্রাভীন জয়াবিক্রমা।
সিরিজ : ২ ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ১-০ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : দিমুথ করুণারত্নে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।