নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
একজন বা দুজন একটু ভালো খেলবেন, হয়তো সেঞ্চুরির আশা দেখাবেন, কিন্তু সব মিলিয়ে সম্মিলিত ব্যর্থতায় দিন শেষে পারফরম্যান্স যেন ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’—এই টেস্টে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স দেখে অন্তত তেমন মনে হওয়াই স্বাভাবিক।
৭ উইকেটে ৪৯৩ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা, আজ তৃতীয় দিনে সকালের সেশনে ৩.৩ ওভার খেলার পর। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে এক পর্যায়ে ৩ উইকেটে ২১৪ রান ছিল বাংলাদেশের।
তখন ফলোঅন এড়াতে আর ৮০ রান দরকার ছিল। কে ভেবেছিল, বাকিরা মিলে এই রানও করতে পারবেন না! কে ভেবেছিল, মাত্র ৩৭ রানের মধ্যেই বাকি ৭ উইকেট হারিয়ে অলআউট হয়ে যাবে দল। প্রথম ইনিংসে ২৫১ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস থেকে ২৪২ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ।
এক অভিষিক্ত, আনকোড়া বোলারের কাছেই কুপোকাত হয়েছে মুমিনুল হকের দল। প্রাভীন জয়াবিক্রমা একাই নিয়েছেন ৫ উইকেট। টেস্ট অভিষেকে ৫ উেইকেট পাওয়া শ্রীলঙ্কান ৫ম বোলার তিনি।
অবশ্য টেস্টে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়মিত দেখা থাকলে এমন ব্যাটিং দেখে ভ্রু বেশি কুঁচকে যাওয়াই বরং অস্বাভাবিক। তবে বাংলাদেশকে ফলোঅন না করিয়ে শ্রীলঙ্কাই আবার ব্যাট করতে নেমেছে। বোঝাই যাচ্ছে, দ্বিতীয় ইনিংসে আরও কিছু রান করে তাড়া করার জন্য বাংলাদেশকে পাহাড়সম লক্ষ্যই দিতে চায় স্বাগতিকেরা।
সে লক্ষ্যে রান বাড়ানোর চেষ্টায় শুরুতেই ২ উইকেট খুইয়ে বসেছে শ্রীলঙ্কাও। মাত্র ২ রানে ওপেনার লাহিরু থিরিমান্নেকে ফিরিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। পরে বল হাতে তাইজুল ইসলামের শিকার ওদিশা ফার্নান্দো। রিপোর্টটি লেখা পর্যন্ত (৫ ওভার শেষে) দ্বিতীয় ইনিংসে লঙ্কানদের সংগ্রহ ২ উইকেট হারিয়ে ১৫। যার মধ্যে একাই ১২ রান নিয়ে খেলছেন অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে।
দিনের খেলা বাকি আছে কেবল ২ ওভার।
মুশফিক-মুমিনুলের পর ফিরলেন লিটনও
বড় ধাক্কা খেয়ে তৃতীয় দিনের চা বিরতিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু ফিরে আসার পর যে আরও বড় ধাক্কা অপেক্ষা করছে, সেটা কে জানত!
প্রবীন জয়াবিক্রমার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে মুশফিকুর রহিম ফিরে যান বাংলাদেশের ইনিংসের ৬২তম ওভারের চতুর্থ বলে। এর পরই চা বিরতি ঘোষনা করা হয়। কিন্তু ফিরে আসার পর সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার বদলে আরও বড় চাপে পরে বাংলাদেশ।
৬৫ তম ওভারের পঞ্চম বলেই রমেশ মেন্ডিসের বলে এলবির শিকার মুমিনুল হকও। হাফ সেঞ্চুরি থেকে তখন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাত্র ১ রান দূরে।
পরের ওভারের তৃতীয় বলেই জয়াবিক্রমার চতুর্থ শিকারে পরিনত হন লিটন দাসও। স্লিপে থিরিমান্নের হাতে ক্যাচ দেন এই উইকেটরক্ষক বাটসম্যান। ৩ উইকেটে ২১৪ রান থেকে কিছুক্ষণের মধ্যেই ৬ উইকেটে ২২৪ হয়ে যায় বাংলাদেশ। ৭৫ ওভার শেষে ৬ উইকেটে সফরকারীদের সংগ্রহ ২৪১।
১০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে এখন ফলোঅনের শঙ্কায়ও পড়ে গেছে বাংলাদেশ। এর আগে শ্রীলঙ্কা ৪৯৩ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষনা করে। মুমিনুলের দল এখনও পিছিয়ে ২৫২ রানে।
এবার তামিমের ৮ রানের আক্ষেপ
একই প্রতিপক্ষ, একই মাঠ। তামিম ইকবালও ঠিক যেন আগের টেস্টের চেহারায়। আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত সব শটে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ওপেনার টানা চতুর্থ আর সিরিজে তৃতীয় ফিফটি পেরিয়ে ছুটছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। হয়তো হয়েও যেতো। কিন্তু আরেকবার হতাশায় মুড়িয়ে শেষ হলো তামিমের লড়াই। আগের টেস্টের দুই ইনিংসে ৯০ আর অপরাজিত ৭৪ এর পর আজ থামলেন সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৮ দূরে, ৯২ রানে!
৫৩ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৮৫। দলের অস্থা হয়ে এখনও টিকে আছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক, খেলছেন ৬২ বলে ৩৬ রান নিয়ে। তাকে সঙ্গ দিতে ক্রিজে এসেই জমে যাওয়া আরেক অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের ঝুলিতে ৪১ বলে ২৪ রান।
পাল্লেকেলে টেস্টে চলছে তৃতীয় দিন দ্বিতীয় সেশনের শেষ সময়ের খেলা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে ৩০৬ রানে।
তামিমকে খুশি থাকতে হলো ৩১তম ফিফটি নিয়েই। পারলেন না শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরির খরা কাটাতে। আজও চোখজুড়ানো ব্যাট করেছেন তামিম। ৫৭ বলে যখন ফিফটি তুলে নেন বাংলাদেশের স্কোর ছিল বিনা উইকেটে ৬১। সেখান থেকে এক ঝাটকায় জোড়া আঘাতে বিপর্যস্ত দলের স্কোর কার্ড। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছিলেন অধিনায়ক মুমিনুলের সঙ্গে ৫২ রানের ছন্দময় এক জুটিতে।
সেই ছন্দ ধরে রেখে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সিরিজে প্রথম সেঞ্চুরির দিকে। তবে অভিষিক্ত প্রভিন জয়াবিক্রমার ভাবনার চাইতে কম বাঁক খাওয়া একটি সাদামাটা বলে ধোঁকা খেয়েই উইকেট খুইয়েছেন দেশসেরা এই ওপেনার। খোঁচা মারতে গিয়ে ঠিকমতো হয়নি ব্যাটে-বলে স্লিপে থাকা লাহিরু থিরিমান্নের কোনো অসুবিধাই হয়নি ক্যাচটি তালুবন্দী করতে। ১৫০ বলে ১২ চারে সাজানো তাঁর এই ইনিংসের সমাপ্তি ঘটল আক্ষেপে।
তবে সুরঙ্গা লাকমলকে ইনিংসের তৃতীয় বলে মিড অন দিয়ে মারা চারে তামিম বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আজও রাজত্ব করতে চান বোলারদের ওপর। ঘটেছেও ঠিক তাই—প্রথম সেশন শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ২টি উইকেট পড়লেও তামিম নিজের প্রান্তে খেলেছেন নিজের মতো করে।
উইকেটে আজ বল ভালো বাঁক নেওয়ার সঙ্গে ওঠা–নামা করলেও ব্যক্তিগত ৯১ রানের আগ পর্যন্ত তামিম কোনো বড় ভুল করেননি। ৯২ রানে থাকতে প্রবীন জয়াবিক্রমার বলে শর্ট লেগে একটু জোরের ওপর ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু কঠিন সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেনি শ্রীলঙ্কা।
তামিমের ১৫০ বলে খেলা ৯২ রানের ইনিংস গড়া ১২ চারে। এই ইনিংসে অনাকাঙ্ক্ষিত একটি জায়গায় নাসির হোসেনের পাশে লেখা হয়ে গেল তার নাম। বাংলাদেশের হয়ে পরপর দুই টেস্টে নব্বইয়ে আউট হয়েছেন কেবল এই দুই জনই। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে ৯৬ ও খুলনা টেস্টে ৯৪ রানে থামেন নাসির।
ক্রিকেটের নিয়মে এসব রেকর্ড বইয়ের অংশ, বাস্তবতায় কেবলই আক্ষেপের। সাকিব-তামিম-নাসিরদের হাহাকার, বাংলাদেশ ক্রিকেটেরও।
সেঞ্চুরির সুযোগ তামিম কতবার নষ্ট করেছেন, সেটি অবশ্য তার নব্বুইয়ের ঘরের ইনিংস দিয়ে পুরোপুরি বোঝা যাবে না। ৮০ রান থেকে ৯৯ রান পর্যন্ত হিসেব করলে এই রানসংখ্যার মধ্যে এ পর্যন্ত ৮বার আউট হয়েছেন দেশসেরা এই ব্যাটসমান!
তামিমের আগের কয়েকটি ইনিংসেই বড় রানের ইঙ্গিতটা পরিষ্কার ছিল। কিন্তু নিজ ভুলে এই সময়টা বাংলাদেশ ওপেনার নিজেই বের করতে পারেননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সর্বশেষ টেস্টে তাঁর ৪৬ বলে ৫০ রানের ইনিংস থেকে শ্রীলঙ্কার মাটিতে শেষ টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরির সুযোগটা তাঁর ছিল।
কিংবা আরেকটু পিছিয়ে যাওয়া যায়—হ্যামিল্টনে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে টেস্ট ক্যারিয়ারে এর আগে সর্বশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম।
এরপর তাঁর ১৩টি ইনিংসের স্কোর দেখুন—৭৪,৭৪,৪,৩,৩৪,৪১,৯,০,৪৪,৫০,৯০,৭৪* ও আজ ৯২। অন্তত পাঁচটি ইনিংসে সেঞ্চুরির সুবাস ছড়িয়ে আউট হওয়ায় টেস্ট ক্যারিয়ারে তাঁর সেঞ্চুরিসংখ্যা ৯–এ আটকে থাকল, যেটা তাঁর সামর্থ্যের সঙ্গে বেমানান।
বাংলাদেশের হয়ে তার বেশি নব্বইয়ে আটকা পড়েছেন কেবল সাকিব আল হাসান, চারবার। আর তিনবার এই হতাশায় পুড়েছেন মুশফিক।
শ্রীলঙ্কায় পাঁচ টেস্টে এই নিয়ে ছয়বার ফিফটি পেলেন তামিম। সর্বোচ্চ এবারের ৯২। লঙ্কানদের বিপক্ষে দেশের মাঠেও টেস্ট সেঞ্চুরি নেই তার। অথচ এই সিরিজেই হতে পারতো তিনটি!
আউট হওয়ার পর ড্রেসিং রুমে বসে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন তামিম। ঝাপসা হয়ে আসা চোখ দুটোই বলে দিচ্ছিল, ১২ চারে সাজানো ১৫০ বলের ইনিংসটির অপমৃত্যুর জন্য আসলে দায়ী কে!
জোড়া ধাক্কা কাটিয়ে তামিমের সেঞ্চুরির সুবাস
তাসকিনের চার উইকেট, শ্রীলঙ্কার ইনিংস ঘোষণা
৭ উইকেটে ৪৯৩ রান করে পাল্লেকেলে টেস্টের প্রথম ইনিংস ছাড়ল লঙ্কানরা। তৃতীয় দিন সকালে মিনিট ১৫ ব্যাট করার পরই আসে এই ঘোষণা।
আলোকস্বল্পতায় আগের দিন খেলা শেষ হয় ২৪.১ ওভার আগেই। সেই ঘাটতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে শনিবার খেলা শুরু হয় ১৫ মিনিট আগে। শুরু থেকেই রান বাড়ানোর তাড়া দেখা যায় নিরোশান ডিকভেলা ও রমেশ মেন্ডিসের ব্যাটে। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজকে পরপর দুই বলে ছক্কা ও চার মারেন ডিকভেলা।
পরের ওভারে তাসকিনের শর্ট বলে পুল করে আউট হন মেন্ডিস। স্কয়ার লেগ সীমানায় দারুণ ক্যাচ নেন মুশফিকুর রহিম।
৩৩ রানে মেন্ডিসের বিদায়ের সঙ্গেই দলের ইনিংসের ইতি টানেন লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে।
ডিকভেলা তখন অপরাজিত ৭২ বলে ৭৭ রান করে। তার টেস্ট সেঞ্চুরির অপেক্ষা শেষ হলো না এবারও।
৪৫ টেস্টে তার রান এখন ২ হাজার ৪১৯। কোনো সেঞ্চুরি ছাড়া সবচেয়ে বেশি টেস্ট ফিফটির রেকর্ডও তার, ১৮টি।
১২৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে শেষ করেন তাসকিন, তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। আগের টেস্টে পাওয়া ৩ উইকেট ছিল আগের সেরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ১৫৯.২ ওভারে ৪৯৩/৭ (ডি.) (আগের দিন ৪৬৯/৬) (ডিকভেলা ৭৭*, মেন্ডিস ৩৩, আবু জায়েদ ২২-৪-৬৯-০, তাসকিন ৩৪.২-৭-১২৭-৪, মিরাজ ৩৬-৭-১১৮-১, শরিফুল ২৯-৬-৯১-১, তাইজুল ৩৮-৭-৮৩-১)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।