নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
টস হেরে গেলেও সকালটা বাংলাদেশের শুরু হয়েছিল দারুণ কিছুর আভাস দিয়ে। নতুন উইকেটে গতি আর ছন্দময় নিয়ন্ত্রিত বোলিং দিয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। উইকেট পাওয়ার অবস্থাও তৈরি হয়েছিল একাধিকবার। আগের ম্যাচে ভালো করা তাসকিন আহমেদই ছিলেন সবচেয়ে তেতে। হতাশায়ও পুড়েছেন তিনি।
তার বলে পড়েছে দিমুথ করুনারত্নের সহজ ক্যাচ। শেষ পর্যন্ত কাছে গিয়েও তাই শুরুতে উইকেট পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের। পরে সুযোগ দিয়েছিলেন লাহিরু থিরিমান্নেও। তবে সেটিও হারিয়েছে বাংলাদেশ। ফল, রেকর্ডময় একটি দিন পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। যেদিনে বাংলাদেশের একমাত্র সাফল্য, অভিষিক্ত শরিফুল ইসলামের উইকেট প্রাপ্তি।
যেখানে দিনটি হতে পারতো বাংলাদেশের, উল্টো দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন শেষে এগিয়ে থাকলো শ্রীলঙ্কাই। করুণারত্নে আর থিরিমান্নের সেঞ্চুরিতে পাল্লেকেলেতে খেলা ৯০ ওভারের দিনটিতে ঐ এক উইকেট খুইয়ে স্বাগতিকদের ঝুলিতে ২৯১। দ্বাদশ টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে শরিফুলের বলে করুণারত্নে (১১৮) বিদায় নিলেও কাঁটা হয়ে উইকেটে পড়ে আছেন আরেক সেঞ্চুরিয়ান থিরিমান্নেও (১৩১)। ৪০ রান নিয়ে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন ওশাদা ফার্নান্দো।
জুটি আর দলের রেকর্ড
প্রথম টেস্টে ১১৪ রানেই থেমেছিল দিমুথ করুনারত্নে ও লাহিরু থিরিমান্নের জুটি। এবার থামার নামই নেই! দুজনের জুটি পেরিয়ে গেছে ২০০ রানের মাইলফলক। তাতে ধরা দিয়েছে রেকর্ডও।
বাংলাদেশকে অস্বস্তিতে রেখে লাঞ্চে শ্রীলঙ্কা
শুরুটা হয়েছিল স্বপ্নের মতো। বদলে যাওয়া উইকেটে বল হাতে দুর্দান্ত একটা ঘন্টা পার করেছে বাংলাদেশের বোলররা। তাসকিন, রাহী, অভিষিক্ত শরিফুলদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে প্রথম ঘন্টার ঐ ১৪ ওভারে শ্রীলঙ্কা রান তুলতে পেরেছিল কেবল ২২ রান। চাপে পড়া স্বাগতিক দুই ওপেনার দিমুথ করুণারত্নে আর লাহিরু থিরিমান্নে ঐ সময়ে খেলতে পেরেছেন কেবল একটি চারের মার।
যেই না টেস্ট ক্রিকেটে নিজের ৫ হাজার রানের মােইলফলক ছুঁলেন অধিনায়ক করুণারত্নে, আমূলে বদলে গেল খেলার ধরণ। তাতে তরতরিয়ে বাড়লো দলের রান। দ্বিতীয় ঘণ্টায় ১৩ ওভারে রান হয় ৪৪, বাউন্ডারি ৮টি। সেই স্বস্তি নিয়েই লাঞ্চে গেছে শ্রীলঙ্কা, আর সুন্দর সব বোলিংয়েও কোনো উইকেট না পাওয়ার হতাশা নিয়ে বাংলাদেশ।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে দুই ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয়টিতে প্রথম ইনিংসে টস জিতে ব্যাট করছে শ্রীলঙ্কা। ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে প্রথম দিনের লাঞ্চ বিরতিতে যাবার সময় (২৭ ওভার) লঙ্কানদের সংগ্রহ কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৬। ৮৫ বলে ৩২ রান নিয়ে অপরাজিত আগের ম্যাচের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান করুনারত্নে, ৭৮ বলে ৩২ রানে থিরিমান্নেও। এই পথেই করুনারত্নে স্পর্শ করেন ৫ হাজার টেস্ট রান। এই মাইলফলকে তিনি দশম শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান।
আউট হতে পারতেন দুই ব্যাটসম্যানই। ২৮ রানে তাসকিনের বলে মিড অফে ক্যাচের মতো দেন করুনারত্নে। কিন্তু শুরুতে বুঝে উঠতে একটু দেরি করায় বলের কাছে সময়মতো যেতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনলি হক। দুই বল পরই স্লিপে তুলনামূলক সহজ ক্যাচ হাতে জমাতে ব্যর্থ হন নাজমুল হোসেন শান্ত। একটু পর সুযোগ দেন থিরিমান্নে। তাসকিনের বলেই গালি দিয়ে বল বেরিয়ে যায় বাউন্ডারিতে। মেহেদী হাসান মিরাজ ঝাঁপিয়েও পারেননি। এটা যদিও ছিল অনেক কঠিন।
সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাচ ছাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ দলের ফিল্ডারদের মধ্যে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ থেকে নিউজিল্যান্ড সফর এবং শ্রীলঙ্কায় প্রথম টেস্টেও ক্যাচ ছেড়েছেন ফিল্ডাররা।
তবে আশার কথা, আগের টেস্টে দারুণ বোলিংয়ের ধারাবাহিকতা এই ম্যাচেও বয়ে আনেন তাসকিন। গতির পাশাপাশি মুভমেন্টও কিছু আদায় করেন তিনি। কিন্তু পাশে পাননি সতীর্থদের। যার খেসারত হিসেবে প্রথম ঘণ্টায় কট বিহাইন্ডের রিভিউ নিয়ে একটি রিভিউও হারায় বাংলাদেশ।
শুরু থেকেই লঙ্কানদের চেপে ধরেছে বাংলাদেশ
ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই এলবিডব্লিউর দুটি আবেদন। তাসকিন আহমেদ বেশ অস্বস্তিতে ফেললেন দিমুথ করুনারত্নেকে। প্রথম ঘণ্টাজুড়েই সেই দৃশ্য দেখা গেল নিয়মিত। তাসকিন, আবু জায়েদ চৌধুরি, শরিফুল ইসলামরা বেশ কবারই বিপাকে ফেললেন দুই লঙ্কান ওপেনারকে। তবে ধরা দিল না কাঙ্ক্ষিত প্রথম ব্রেক থ্রু। কিন্তু রানের চাকায় লাগাম ধরা হয়েছে ঠিকই, বাউন্ডারি হয়েছে কেবল একটি।
বৃহস্পতিবার পাল্লেকেলেতে দ্বিতীয় টেস্টের ২৬ ওভার শেষে প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার রান কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৬। ৭৯ বলে ৩২ রান নিয়ে অপরাজিত দিমুথ করুনারত্নে, ৭৮ বলে ৩২ রানে লাহিরু থিরিমান্নেও। এই পথেই করুনারত্নে স্পর্শ করেন ৫ হাজার টেস্ট রান। এই মাইলফলকে তিনি দশম শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান।
বল হাতে দুর্দান্ত শুরু
প্রথম টেস্টে থাকলেও এই ম্যাচের উইকেটে নেই ঘাস। ম্যাচের শুরুতে তাই উইকেট আরও বেশি ব্যাটিং সহায়ক। টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত জানাতে খুব দেরি হয়নি করুনারত্নের।
বাংলাদেশের পেসাররা দারুণ বল করেন শুরু থেকেই। আগের টেস্টের ধারাবাহিকতা এখানেও বয়ে আনেন তাসকিন। গতির পাশাপাশি খানিকটা সুইংও পান তিনি। আবু জায়েদ বজায় রাখেন লাইন-লেংথ। দুজনের বোলিং বিশ্লেষণ একটা সময় ছিল হুবুহু এক, ৪-১-৫-০।
অভিষিক্ত ১৯ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার শরিফুলও বেশ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। শ্রীলঙ্কার দুই বাঁহাতি ওপেনারকে বাড়তি ভাবনা দিতে ইনিংসের চার ওভারের পরই মেহেদী হাসান মিরাজের অফ স্পিন খানিকটা বাজিয়ে দেখেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল। প্রথম ঘণ্টার একমাত্র বাউন্ডারি এসেছে তার বলেই।
অভিষিক্ত শরিফুলকে নিয়ে বোলিংয়ে বাংলাদেশ
আগের টেস্টে টস জিতলেও এবার মুদ্রা নিক্ষেপে ভাগ্যকে পাশে পেলেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। পাল্লেকেলেতে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় টেস্টে টস জিতে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে বেছে নিলেন ব্যাটিং। মুমিনুল জানালেন, টস জিতলে তিনিও নিতে ব্যাটিং।
বাংলাদেশ দলে আগের টেস্ট থেকে পরিবর্তন আছে একটি। বাদ পড়েছেন ডানহাতি পেসার ইবাদত হোসেন চৌধুরি। তার জায়গায় দলে এসেছেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। বাংলাদেশের ৯৭তম টেস্ট ক্রিকেটার ১৯ বছর বয়সী এই বাঁহাতি পেসার।
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড সফরে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পেয়েছেন শরিফুল। এবার টেস্ট অভিষেকও হয়ে গেল ৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেই।
বাংলাদেশ একাদশ : তামিম ইকবাল, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, আবু জায়েদ চৌধুরি, শরিফুল ইসলাম।
লঙ্কান দলে জোড়া পরিবর্তন
শ্রীলঙ্কা দলে আগের ম্যাচ থেকে পরিবর্তন দুটি। তাদের মধ্যে একজন অভিষিক্ত। চোট পাওয়া পেসার লাহিরু কুমারার জায়গায় একাদশে এসেছেন প্রাভিন জয়াবিক্রমা। ১০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে টেস্ট ক্যাপ পেলেন ২২ বছর বয়সী এই বাঁহাতি স্পিনার।
লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার ভানিন্দু হাসারাঙ্গার বদলে সুযোগ পেয়েছেন অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার রমেশ মেন্ডিস। গত জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গলে নিজের একমাত্র টেস্টটি খেলেন মেন্ডিস।
শ্রীলঙ্কা একাদশ : দিমুথ করুনারত্নে (অধিনায়ক), লাহিরু থিরিমান্নে, ওশাদা ফার্নান্দো, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, পাথুম নিসানকা, নিরোশান ডিকভেলা, রমেশ মেন্ডিস, সুরাঙ্গা লাকমল, বিশ্ব ফার্নান্দো, প্রাভিন জয়াবিক্রমা।
ডিমিরিট পাওয়া উইকেটেও বদল
রানবন্যায় শুরু সিরিজের প্রথম টেস্ট ড্র হয়েছিল। পাঁচদিনে দুদল মিলিয়ে তুলেছিল ১২৮৯ রান। উইকেট পড়েছিল কেবল ১৭টি। পরে ওই ম্যাচের উইকেটকে আইসিসি ‘গড়পড়তা মানের নিচে’ রেটিং দিয়ে একটি ডিমেরিট পয়েন্ট দেয় ক্যান্ডির এই মাঠকে।
অনুমিতভাবেই আগের টেস্ট থেকে এই ম্যাচের উইকেটে আছে কিছুটা পরিবর্তন। উইকেটে নেই ততটা ঘাসের ছোঁয়া। টস জয়ের পর করুনারত্নে বললেন, “উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো মনে হচ্ছে। অন্তত শুরুর দিনগুলি খুব ভালো ব্যাটিং উইকেট হবে। পরের দিকে স্পিনারদের সহায়তা থাকতে পারে।”
বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুলেরও একই ধারণা উইকেট নিয়ে, “ আগের ম্যাচের চেয়ে উইকেট এবার আলাদা। শুরুতে ব্যাটসম্যানরা সহায়তা পেলেও তৃতীয় বা চতুর্থ-পঞ্চম দিনে টার্ন করতে পারে।”
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।