পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভারতের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক কতটা তা করোনার এই সময়ে এসে বিচার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের সাথে চুক্তিকৃত টিকা যথাসময়ে না দেয়া এবং রফতানি স্থগিত করার পর এখন অক্সিজেন রফতানিও বন্ধ করে দিয়েছে। এর আগে পেঁয়াজ রফতানিও দেশটি বন্ধ করে দেয়। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের যে সোনালী অধ্যায়ের কথা বলা হয়, তা কি এখন কাজ করছে? বরং এটাই প্রতিভাত হচ্ছে, বাংলাদেশের সাথে ভারত বন্ধুত্বের মানবিক সম্পর্কের বদলে শত্রæর মত আচরণ করছে। এই করোনাকালীন বাস্তবতায় প্রমাণিত হলো, নিত্যপণ্যসহ যেকোনো ক্ষেত্রে ভারত নির্ভরতা বাংলাদেশের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারতের টিকার চাহিদার কথা মনে রেখেই তারা বিভিন্ন দেশের সাথে টিকা রফতানির চুক্তি করেছিল। চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ আগাম টাকা পরিশোধের পর হঠাৎ করে রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিয়ে বড় ধরণের বিপদে ফেলে দিয়েছে। এ বিপদের মধ্যেই দেশটি বাংলাদেশে অক্সিজেন রফতানি বন্ধ করে দিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিয়েছে।
ভারতে প্রতিদিন সাড়ে তিন লক্ষাধিক মানুষ এখন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। সেখানে হাসপাতালগুলোতে তীব্র অক্সিজেন সংকট চলছে। অক্সিজেনের অভাবে অনেক রোগী মারাও গেছে। তবে সেখানে অক্সিজেন সংকট নেই বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। সেখানে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার সংকট রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, দেশটি বাংলাদেশে অক্সিজেন রফতানি বন্ধ করে দিযেছে। বাংলাদেশে এখনো অক্সিজেনের সংকট দেখা দেয়নি। তবে সংক্রমণের মাত্রা আরো বেড়ে গেলে এবং ভারত থেকে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ থাকলে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হতে পারে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, দেশের হাসপাতালগুলোতে হাই ফেন্ডা নাজাল ক্যানুলা রয়েছে মাত্র ১০৩৭টি। এখন প্রতিদিন ৫-৬ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ যদি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাহলে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হবে। এ সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুন বা তার বেশি হলে অক্সিজেনের অভাবে অনেক রোগী মারা যাবে। এমনকি একদিন অক্সিজেন সংকট দেখা দিলে অনেক রোগীর মৃত্যুর আশংকা রয়েছে। এ পরিস্থিতি বিবেচনায়, দিল্লী-মুম্বাইয়ের মত ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই আমাদেরকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মূল্যায়ণে বলা হয়েছে, যদি সংক্রমণ আর না বাড়ে তাহলে অক্সিজেনের সংকট হবে না। যদি সংক্রমণ দুই-তিন গুণ বা তারো বেশি বেড়ে যায়, তাহলে পরিস্থিতি শোচনীয় হয়ে উঠবে। এ বাস্তবতা সামনে রেখে এখন থেকেই অক্সিজেন উৎপাদন এবং মজুদের জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত অক্সিজেন আপাতত বন্ধ রাখতে হবে। তবে ওষুধ কোম্পানির অক্সিজেন সরবরাহ বজায় রাখতে হবে। অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সম্পৃক্ত করে স্থানীয় প্রযুক্তির সহায়তায় অক্সিজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। ইতোমধ্যে পাকিস্তান পর্যাপ্ত অক্সিজেন উৎপাদনে সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সম্পৃক্ত করেছে। আমাদেরও অক্সিজেন উৎপাদনে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। যাতে সংকটকালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করা যায়। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালসহ দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জরুরী উদ্যোগ নিতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও অক্সিজেনের সম্ভাব্য চাহিদা পুরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
ভারত এখন বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো ভারতের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু ভারতের টিকা সরবরাহ এবং অক্সিজেন রফতানি বন্ধের কারণে বাংলাদেশেও যে বড় ধরণের বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে, এ দিকটি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। ভারতের পাশে যেমন পশ্চিমা দেশগুলো দাঁড়াচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশের পাশেও দেশগুলোর দাঁড়ানো উচিৎ। এখনই তাদের বন্ধুত্বের পরিচয় দেয়ার সময়। বাংলাদেশেরও উচিৎ যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর কাছে টিকা পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা। পাশাপাশি টিকার জন্য চীন-রাশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ প্রস্তাব বিশেষ গুরুত্বের সাথে কাজে লাগাতে হবে। এখন অক্সিজেন আক্রান্তদের জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি। এই উপকরণটি নিশ্চিত করতে পারলে আক্রান্তদের জীবন রক্ষা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। দেশে উৎপাদন ও বর্তমান চাহিদার নিরিখে এই মুহুর্তে দেশে অক্সিজেনের ঘাটতি দৈনিক প্রায় ৫০ টন। সংক্রমণ বেড়ে গেলে চাহিদাও বাড়বে। এমন শঙ্কা মাথায় রেখে অক্সিজেন উৎপাদন ও সংরক্ষণের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। এখন থেকেই পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। তা নাহলে, টিকার মতো সংকটজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আমরা মনে করি, অক্সিজেন উৎপাদনের পাশাপাশি দেশের বাইরের সম্ভাব্য উৎস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে চীন একটি ভাল উৎস হতে পারে। দেশটি থেকে আকাশ পথে অক্সিজেন আমদানি করা যেতে পারে। সেই সাথে দেশীয় কোম্পানীগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগের কথাও ভাবতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।