Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুরান ঢাকায় বেপরোয়া উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীরা

ডাকাত শহীদের সহযোগীরা তৎপর : ঘটছে প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা

প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : পুরান ঢাকায় কুখ্যাত সন্ত্রাসী ডাকাত শহীদের সহযোগীরা আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এক সময় যারা সরাসরি ডাকাত শহীদের সহযোগী ছিল তারাই উঠতি বয়সী একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ গঠন করে মাঠে নামিয়েছে। এই উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীরাই চাঁদাবাজি ও প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে। গত রোববার বিকালে বংশালের সুরিটোলা এলাকায় চাঁদপুরের এক ব্যবসায়ীকে গুলী করে ৮০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। শত শত মানুষের সামনে এই ঘটনা ঘটলেও কেউ এগিয়ে আসার সাহস করেনি। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন দোকানদার বলেন, ছিনতাইকারীরা অস্ত্র উঁচিয়ে এমনভাবে চলে গেছে যে, কারো সাহস হয়নি তাদের পিছু নেয়ার। সশস্ত্র ছিনতাইকারীরা বয়সে তরুণ বলে তারা জানান। জানতে চাইলে বংশাল থানার ওসি বলেন, এখনও বেশি কিছু জানতে পারিনি, তদন্ত চলছে। সূত্র জানায়, ডাকাত শহীদের সহযোগীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পুলিশের তালিকাভুক্ত। কিন্তু তারা কেউই ধরা পড়ে না। এদের মধ্যে অনিল বাবুসহ কয়েকজন আবার প্রতিনিয়ত ভারতে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকে। ডাকাত শহীদ ছাড়াও কমিশনার সহিদের সহযোগীরাও ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। উল্লেখ্য, র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ডাকাত শহীদ নিহত হলেও তার সহযোগীরা আগের মতোই ডাকাত শহীদের নাম ভেঙে চলে।
সূত্র জানায়, ডাকাত শহীদ গ্রুপের সন্ত্রাসীদের ছিনতাইয়ের ধরন দেখে বোঝা যায় এরা শহীদ গ্রুপের। এরা যা করার প্রকাশ্যে করবে। শত শত মানুষের সামনে করবে। এ জন্য এরা দলে বিভক্ত হয়ে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে। দিনের প্রথমভাগে এরা ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটায়। বিশেষ করে সাত সকালে মানুষ যখন অফিস বা দূরের কোনো যাত্রাপথে রওনা করে তখন এরা ওইসব যাত্রীর পথরোধ করে অস্ত্রের মুখে ছিনতাই করে। পুরান ঢাকার পাইকারী মার্কেটে কেনাকাটা করার জন্য ব্যবসায়ীরা সাধারণত সকালের দিকেই আসেন। তাদের কাছে মোটা অংকের নগদ টাকা থাকে। কিছুদিন আগেও ওয়ারী এলাকায় ভোর সাড়ে ৬টার দিকে অস্ত্রের মুখে এক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে থেকে তার ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। গত মাসেও টিকাটুলির রাজধানী মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার হওয়ার খবর খুব একটা পাওয়া যায় না। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, পুলিশ তদন্তের কথা বলে কালক্ষেপণ করে। একপর্যায়ে বাদী নিজেই ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে পুলিশের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
সূত্র জানায়, কুখ্যাত সন্ত্রাসী ডাকাত শহীদের এক সময়ের সহযোগীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রতিনিয়ত ভারত আসা-যাওয়া করেন। চোরাচালানীর সাথে জড়িত এসব আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের মধ্যে অনিল বাবুর নাম অনেকেরই জানা। এক সময় তিনি ডাকাত শহীদের হয়ে সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করতেন। জানা গেছে, ডাকাত শহীদের ঘনিষ্ঠ সহচর পুরান ঢাকার অনিল বাবু এক যুগ আগেও ধোপার কাজ করতো। ভারতে আসা-যাওয়া করতে করতে সেখানে পালিয়ে থাকা ডাকাত শহীদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। ডাকাত শহীদের বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে সে চাঁদাবাজিতে নামে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী জানান, ডাকাত শহীদ গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর পরই অনিল বাবুর ভাগ্য ফিরে যায়। ধোপা থেকে সে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যায়। ভারতে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করে। একই সাথে ঢাকায়ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বনে যায়। ব্যবসায়ীরা জানান, চাঁদা না পেয়ে ডাকাত শহীদের নির্দেশে অনিল বাবু বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। এর মধ্যে পুরান ঢাকার কাগজ ব্যবসায়ী হুমায়ুন হত্যার ঘটনাটি অন্যতম। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা জানান, কুখ্যাত ডাকাত শহীদের সহযোগীদের অনেকেই এখন প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করে। এরা এলাকায় চাঁদাবাজি ছাড়াও দুর্ধর্ষ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
ডাকাত শহীদ ছাড়াও পুরান ঢাকার আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সহিদ কমিশনারের শতাধিক ক্যাডার আবার তৎপর হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে গে-ারিয়ার বিল্লাল, জাহাঙ্গীর, আমীর ও সোহেল, নবাবপুর রোডের মুকুল, কোতোয়ালীর আক্তার, ল্যাংরা লিটন, গরদা বাবু ও ফয়সাল। এদের ভয়ে অনেকেই আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুরান ঢাকায় বেপরোয়া উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীরা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ