চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
যুগ-যুগান্তের শত সহস্র নজরানা সবই মুনিবের জন্য। হৃদ্বয় উজাড় করা আবেগ-অনুভুতি নিয়ে অসংখ্য দুরুদ ও সালাম জানাই নবীকুল শিরোমনি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর আসহাব ও আহলে বাইত গণের প্রতি। পবিত্র কুরআনে যে মাসের প্রশংসা করেছেন খোদ-খোদা তায়ালা, রাসুলে আরাবী (সাঃ) হাদিসে বয়ান করেছেন যে মাসের মালা, অক্ষম হস্তে নরাধম লেখক কিভাবে ফুটিয়ে তুলব সে মাসের হাকিকতকে ? তবুও মুনিবের গাইবী খাজানা হতে কিছু পাওয়ার আশায় ও মদিনা ওয়ালার নেক নজর কামনা করে শুরু করলাম। বাকী তাঁর দয়ায় পথের মুসাফির হয়ে থাকব। রমজান শব্দটি আমাদের কথ্য ভাষা। কুরআন মাজিদে ব্যবহৃত হয়েছে “রামাদান” বলে। র-ম-দ মূল হতে উদ্ভত। রমজান মুসলিম বর্ষপঞ্জীর নবম মাসের নাম। রমজান হলো বছরের একমাত্র মাস যার নাম কুরআনে উল্লেখিত হয়েছে। এ সম্পর্কে কুরআন মাজিদে আল্লাহ বলেন “রমজান মাস, তাতে কুরআন নাজিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াত, সৎ পথ প্রাপ্তির স্পষ্ট নিদর্শন ও হক বাতিলের পার্থক্যকারী”। (সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৫)
ইতিহাসের তাৎপর্য মন্ডিত রমজান মাসের গরুত্বপূর্ণ দিন সমূহ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ইসলামী ডাইরী নিম্নে তুলে ধরা হলো ঃ- ক. ৬ রমজান শহীদ আল-হুসাইন ইবনে আলীর (রাঃ) জন্ম দিবস। খ. ১০ রমজান রাসুলে আরাবীর সহ ধর্মিনী হযরত খাদিজাতুল কুবরার (রাঃ) ওফাত দিবস। গ. ১৭ রমজান ঈমানদার এবং কাফির গোষ্ঠির সঙ্গে প্রকাশ্যে ইসলামের প্রথম মোকাবিলা, ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ দিবস। ঘ. ১৯ রমজান মহানবী (সাঃ) ও মুসলমানদের যুগ-জনমের আকাংখা পূরনের দিন ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়দিবস। ঙ.২১ রমজান ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী ইব্নে আবী তালিবের (রাঃ) ওফাত দিবস। চ. ২২ রমজান আলী ইবনে আবী তালিবের (রাঃ) জন্ম দিবস এবং ছ. সর্বশেষ ২৭ রমজান লাইলাতুল ক্বদর হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বলা প্রয়োজন, রমজানের ২৭ তম তারিখটি নিশ্চিতরূপে নির্দিষ্ট নয়। তাই আল্লাহ পাগল নবী প্রেমিক ব্যক্তিগণ নেক আমলের জন্য রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিগুলোতে ইবাদত বন্দেগী করে থাকেন। কারন যে কোন অবস্থায় উহাদের একটি লাইলাতুল ক্বদর হবে। ক্বদর রাতের নামটি কুরআনে উল্লেখিত সুরাতুল ক্বদর এর উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত। ক্বদর রাতের ইবাদাত ১০০০ মাস অপেক্ষা উত্তম একটি রাত হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। সে রাতে ফেরেস্তাগন সব দায়িত্ব মুক্ত হয়ে উর্দ্ধাকাশে আরোহন করেন এবং যা উষার লালিমার আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত আর্শিবাদ প্রকাশ করেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন “মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ট। সে রাতে ফেরেস্তাগন ও রুহ অবতীর্ণ হয়, প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই-শান্তি,সে রজনী উষার আবির্ভাব পর্যন্ত”। (সুরা ক্বদর)। একই রাত্রিকে কুরআন মাজিদে অন্যত্র একটি আশির্বাদ প্রাপ্ত “মোবারক রাত্রি” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহর বানী শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমিতো তা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রজনীতে। (সুরা দুখান আয়াত-২)
পবিত্র রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল ইবাদাত করবে রমজান ব্যতিত অন্যান্য সময়ের একটি ফরজের সমান সাওয়াব পাবে। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ ইবাদাত করবে, সে অন্যান্য সময়ের ৭০টি ফরজের ছাওয়াব পাবে। এ মাস ছবর ধৈর্য্য ও অধ্যবসায়ের মাস এবং ছবরের বিনীময় (আল্লাহর নিকট) বেহেশ্ত। রমজান মাস পরস্পর সহানুভুতি প্রদর্শনের মাস। এ মাসে মুমিনের রিজিক বর্ধিত করে দেয়া হয়। রমজান মাসের প্রথম দশকে আল্লাহর (বিশেষ) রহমত বন্টন হয়। দ্বিতীয় দশকে (অগনিত) গুনাহ মাফ করা হয়। শেষ দশকে দোজখ হতে নাজাত লাভ হয়।
ছবর, অধ্যবসায়, সহানুভুতি, সহমর্মিতা, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এ মাসে মুনিবের নিকট গোলামের একান্ত ফরিয়াদ ও মিনতি তিনি যেন অক্ষম হস্তের এ লেখা কবুল করেন এবং আমাদের প্রতি অবিরাম করুনা বর্ষন করেন। আমিন !!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।