দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর : রমজান মাস। কোরআনের মাস। মানুষের মাঝে গভীর উৎসাহ,উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরনা নিয়ে আসে রমজান মাস।রমজান মাসের সম্মান, মর্যাদা ও শক্তির উৎস হলো মহা গ্রন্থ আল কোরআন। আল্লাহ ঘোষনা করেন,‘রমজান মাস।এ মাসে কুরআন অবর্তীন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মানব জাতির জন্য পথ নির্দেশনা। সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী’(বাকারাহ-১৮৫)। রমজান মাসে আল কোরআন নাজিল হয়েছে মানব জাতির সুস্পষ্ট পথ দেখানোর জন্য। ইহা সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী মহা গ্রন্থ।
আল কোরআনের পরিচয় কি? কোরআন শব্দটি ক্বারনুন বা কারউন শব্দ থেকে এসেছে। অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে নবুয়তের ২৩ বছরে বিশ^ নবী (দ) এর উপর অবর্তীন ওহী হচ্ছে আল কোরআন।এরশাদ হচ্ছে-‘হে মোমিনগণ তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সত্য কথা বল’। কোরআন মানব জীবন পরিচালনায় সঠিক পথ দেখায়। ঘোষনা হচ্ছে-‘জমিনের উপর বিনম্রভাবে চল’। আল কোরআন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব।যা সব শেষ নবী (দ) এর উপর নাজিল হয়েছে।এরপর কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন আসমানি কিতাব নাজিল হবে না। আল কোরআনই মানব জাতির জন্য ইহকালিন ও পরকালিন জীবনে মুক্তির একমাত্র পথ। আল কোরআন এমন একটি কিতাব,যা তিলাওয়াত ছাড়া নামাজ আদায় সম্ভব হয় না।মানব জীবনে যতটুকু প্রয়োজন ততোটুকু বিশুদ্ধ তিলাওয়াত করা ফরজে আইন। লাইলাতুল কদর রাতে কোরআন নাজিল হয়েছে।এরশাদ হচ্ছে-‘নিশ্চয় আমি কদরের রাতে কোরআন নাজিল করেছি”।যে মানুষ কোরআনের ধারক বাহক,তার সম্মান ও মর্যাদা ততো বেশী। বিশ^ নবী (দ) বলেন,‘কোরআন ওয়ালা ,আল্লাহ ওয়ালা এবং আল্লাহ পাকের খাস পরিবার’। যে অন্তরে কোরআন নেই.তা যেন পরিত্যক্ত বিরান বাড়ি’।‘হাশরে বিচারের দিনে কোরআন তোমার পক্ষে-বিপক্ষে হুজ্জত হবে’।(মুসলিম)।
আল কোরআন দুনিয়াবী জগতে সর্বাধিক পঠিত একটি কিতাব। সবার্ধিক ভাষায়, সবার্ধিক প্রকাশিত গ্রন্থ। যারা কোরআনের তিলাওয়াত,চর্চা, এবং অনুশীলন করবে না তাদের বিরুদ্ধে বিশ^ নবী (দ) আল্লাহর দরবারে অভিযোগ দায়ের করবেন। এরশাদ হচ্ছে,,‘হে আমার রব! এই লোকেরা কোরআন পরিত্যাগ করেছিল’(ফুরকান)। কোরআন শিক্ষা করা প্রত্যেক মোমেনের উপর ফরজ,ভুলে যাওয়া বড় গুনাহ।বিশুদ্ধ তেলাওয়াত না করে ভুল তেলাওয়াতে কঠিন পাপ হয়। তিন প্রকার তিলাওয়াত কারীকে মাফ করা হবে। যারা বিশুদ্ধ তিলাওয়াত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ,যারা বিশুদ্ধ করার চেষ্টায় আছেন এবং যাদের বিশুদ্ধ শিক্ষার সুযোগ নেই।
বিশ^ নবী (দ) কে মহান আল্লাহ শিক্ষক হিসাবে প্রেরন করেছেন।হযরত ইব্রাহিম (আ) দোয়া করেন,‘হে আমাদের রব! আপনি তাদের মাঝে তাদের মধ্যে থেকে এমন রাসুল পাঠান,যিনি আপনার আয়াত পাঠ করে শোনাবেন,কিতাব ও হিকমাত শিখাবেন এবং তাদের পরিশুদ্ধ করবেন”(রাকারাহ)। আল কোরআন তিলাওয়াত ও শোনা দুটোই ইবাদত।নবী (দ) নিজে তিলাওয়াত করে সাহাবীদেরকে শোনাতেন এবং সাহাবীদের তিলাওয়াত শুনতেন।বিশ^ নবী (দ) হযরত জিব্রাইল (আ) কে শোনাতেন এবং জিব্রাউল (আ) বিশ^ নবী (দ) কে শোনাতেন।
আল কোরআন মানব জীবনের সাথে গভীর সর্ম্পক রয়েছে। এ গ্রন্থ বুঝে পড়ার প্রয়োজন। বুঝে পড়লে অনেক সওয়াব। না বুঝে পড়লেও সওয়াব। হযরত রাসুল (দ) বলেন,বনি আদমের প্রতিটি আমলের প্রতিদান বহু গুনে বৃদ্ধি হতে থাকে। ১০ গুন থেকে ৭ শত গুন পর্যন্ত। এমনকি আল্লাহ চাইলে তার চেয়েও বেশি দেন।হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘রোজার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা রোজা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি স্বয়ং এর প্রতিদান দিব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা পুরন থেকে বিরত থাকে।(মুসলিম)। রমজান মাসে বেশী বেশী কোরআন তিলাওয়াত করার প্রয়োজন।তিলাওয়াত একটি বিশেষ ফযিলত পুর্ণ সুন্নত আমল। সাহাবীঘণ দিনে রাতে কোরআন তিলাওয়াত করতেন। রমজান মাসের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে আল কোরআন। সবার জীবনে আল কোরআনের আর্দশ বাস্তবায়ন হোক। আমিন।
উত্তর দিচ্ছেন : আসাদুজ্জামান আসাদ, গ্রন্থকার, প্রভাষক আরবী, সাংবাদিক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।