Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাঁশখালীর ঘটনায় নিহত ফুলবাড়ীর শ্রমিকের লাশ দাফন সম্পন্ন

ছেলের লাশ নিয়ে পিতা -মাতার আহাজারি

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৫২ পিএম

অবশেষে জীবন যুদ্ধে হার মেনে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ রাজিউল(২২) লাশ হয়েই বাড়ি ফিরলেন। পরিবারের দাবি চিকিৎসার টাকার জোগান দিতে না পারায় মৃত্যু হয়েছে রাজিউলের।
গত ১৭ এপ্রিল '২০২১ চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে শ্রমিক আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ শ্রমিক রাজিউল গত ১৯এপ্রিল '২০২১ রাত দেড় টায় চট্টগ্রামের বেসরকারি পার্ক ভিউ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করলে গত২০ এপ্রিল রাতে রাজিউলের লাশ তার নিজ বাড়ি দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার বেতদিঘী ইউনিয়নের নথন গ্রামে এসে পৌঁছায়। লাশ আসার খবরে সজনের আহাজারিতে আশপাশের বাতাস ভারি যেন হয়ে উঠে।
বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলা নিহতের মা ওয়াজীবন বেগম বলছিলেন, অভাবের সংসারে একটু সুখের আশায় ছেলে রাজেউল (২২)অল্প বয়সেই কাজের সন্ধানে চট্রগ্রামের বাশখালিতে যায়। সেখানে গত ৬ মাস আগে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে( রিগাড়ি)শ্রমিক হিসেবে কাজে যোগদান করে। কিন্তু এত দ্রুত ছেলের লাশ দেখে কিছুতেই মানতে পারছেন না তিনি।

নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে জানা যায়,পারিবারিক অর্থ কষ্টে আব্দুল মান্নান মণ্ডল ও ওয়াজীবন বেগমের ছোট ছেলে রাজেউল ইসলাম (২২) চট্টোগ্রাম বাঁশখালি কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রীগাড়ি (মাল লোড- আনলোড) হিসেবে গত ৬ মাস আগে চাকরি নেন। সেখানে কাজ করতে গিয়ে নানা দুর্ভোগের কথাও ফোনে জানান রাজিউল। মালিক পক্ষ মাসের বেতন একমাস বিশ দিন পার হলেও দিতেন না। খাবার পানির সংকট ছিল প্রবল। কষ্টের তুলনায় ন্যায্য মজুরী ছিল কম। এরপরেও শ্রমিক কাটিং (ছাটাই) এর ভয়ে মুখ বুঝে সব সহ্য করা শ্রমিক ন্যায্য দাবিতে মানববন্ধনে নামেন। সেখানেই পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রথমে বাশখালি হাসপাতাল থেকে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সবশেষে চট্টগ্রাম পার্কভিউ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন রাজিউল।

নিহতের পিতা আব্দুল মান্নান বলেন,ঘটনার তিন দিন আগে ছেলে তাকে ফোনে আন্দোলনে যাওয়ার কথা বলে। তিনি আন্দোলনে যেতে ছেলেকে নিষেধ করেন। তিনি বলেন কি দোষ ছিল আমার ছেলের? ন্যায্য দাবির কথা বলতে না হয় মানববন্ধনে অংশ নিয়েছে, আর তাতেই ওরা আমার ছেলেকে মেরে দিল। তিনি জানান,গুলি খেয়ে দীর্ঘক্ষণ পরে ছিল তার ছেলে। পুলিশ এবং মালিক পক্ষ প্রথমে হাসপাতালে নিতে দেয়নি । পরে বন্ধু-বান্ধব ঝুঁকি নিয়ে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বাঁশখালি হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে বাহিরে নিতে বলেন। পরে রাজেউলকে নেয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় চিকিৎসার গুরুত্ব না পেলে বন্ধুদের সহায়তায় চট্রগ্রাম বেসরকারি হাসপাতাল পার্ক ভিউতে নেয়া হয় তাকে। একদিন পার হতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। এই টাকার যোগান দিতে না পারায় ছেলে রাজিউল মৃত্যু হয় বলে দাবি করেন তিনি।
নিহত রাজিউল ইসলামের মরদেহ গত ২০ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টায় পারিবারিক কবস্থানে দাফন করা হয়।

এদিকে খবর পেয়ে ২০ এপ্রিল '২১ রাতেই ফুলবাড়ীর বাম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ রাজিউলের পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করতে যান। নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের ফুলবাড়ী উপজেলা শাখার সম্পাদক সঞ্জিত প্রসাদ জিতু, জাতীয় গণফ্রন্টের ফুলবাড়ী শাখার সমন্বয়ক হিমেল মন্ডল,নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার সংগঠক আমিনুল হক,জাতীয় কৃষক ক্ষেতমজুর সমিতির সংগঠক রিপন রায়, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ফুলবাড়ী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দাফন সম্পন্ন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ