Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভেজাল ঘিয়ে বাজার সয়লাব

বিএসটিআই’র নকল সিল ব্যবহার

আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

চট্টগ্রামের আনোয়ারার বিভিন্ন হাট-বাজার ভেজাল ঘিয়ের দখলে চলে গেছে। মনোমুগ্ধকর লেভেলে মোড়ানো এসব ভেজাল ঘি সাধারণ ক্রেতারা আসল ঘি মনে করে ক্রয় করে বিপাকে পড়ছেন। এসব ঘিয়ের কারণে নানা রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়ছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি লোভের আশায় গোপনস্থানে এসব ভেজাল ঘি তৈরি করে বিএসটিআই’র নকল সিল বসিয়ে অবাধে বাজারজাত করছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার চাতরী চৌমুহনী বাজার, বটতলী রুস্তমহাট, বন্দর কমিউনিটি সেন্টার, ভিংরোল ছত্তারহাট, মালঘর বাজার ও আনোয়ারা সদরের জয়কালী হাটসহ বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ দোকানে খুচরা ও পাইকারি দরে ভেজাল ঘি বিক্রি হচ্ছে। ভেজাল ঘিয়ের মধ্যে রূপসা ঘি, থ্রি স্টার ঘি, বিন্টু ঘি, বাঘা বাড়ি ঘি, কর্ণফুলী ঘি, এসপি ঘি, ভিআইপি ঘি, ডানুফা ঘি, এ সেভেন, কুক-মি ঘি, শাহি স্পেশাল গাওয়া ঘিসহ অন্তত ২০টি ভূঁইফোড় ও অবৈধ কোম্পানির ঘি বাজারের বিভিন্ন দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে বিক্রির জন্য রাখা ঘিয়ের কৌটায় দেখা গেছে ১০০ ভাগ খাঁটি ঘি লেখা। বিএসটিআইয়ের নকল সিল মুদ্রণ করে রাখা হয়েছে। তবে কোনোটিতে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখা নেই।
ঘি তৈরির সঙ্গে যুক্ত এমন এক কর্মচারীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, উপজেলার বৈরাগ, চাতরী, জুঁইদন্ডী, বটতলী, শোলকাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৫-৬টি ভেজাল ঘিয়ের কারখানা আছে। এর বাইরে শহরের বিভিন্ন কারখানা থেকে উৎপাদিত ঘি নগরের পাশাপাশি এ উপজেলার গ্রামীণ হাটবাজারেও সরবরাহ করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভেজাল ঘি তৈরি করেন এমন একজন কারিগর জানান, বিভিন্ন বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে ছোট্ট কারাখানা বসিয়ে এসব ভেজাল ঘি বানানো হয়। সাধারণত প্রতিটি কৌটায় ৯০০ গ্রাম ঘি থাকে। এ পরিমাণ ঘি তৈরিতে ৬০০ গ্রাম পাম ওয়েল, ২০০ গ্রাম ডালডা ও ১০০ গ্রাম খাঁটি ঘি দেয়া হয়। এ মিশ্রণে সামান্য পরিমাণে রঙ ব্যবহার করা হয়। এসব কাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়েই কৌশলে তারা এসব ঘি তৈরী করে।
জুঁইদন্ডীর থ্রি স্টার গাওয়া ঘি স্বত্ত্বাধিকারী আতারুল করিম বলেন, রমজানের আগে ঘি তৈরি করে বাজারজাত করে দিয়েছি। বাজারে পাওয়া যাবে এসব ঘি। এখন আর ঘি তৈরি করব না। আমাদের কাগজপত্র বৈধ রয়েছে।
বিএসটিআই দফতরের আনোয়ারার মাঠকর্মী আবদুল মান্নান বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অজ্ঞাতস্থান ব্যবহার করে এসব ঘি তৈরি করে বাজারজাত করছে। এর আগে একাধিকবার এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু জাহিদ মোহাম্মদ সাইফু উদ্দীন বলেন, খাদ্যদ্রব্যে মিশ্রণের খুব ভালো রঙ হলেও সেটি দুই মাসের বেশি কার্যকারিতা হারিয়ে বিষাক্ত হয়ে পড়ে। আর যেহেতু ভেজাল ঘি তৈরি হচ্ছে, তাই সেখানে ভালো রঙ মেশানোর প্রশ্নই আসে না। এ কারণে এসব ঘি খেয়ে পেটের অসুখ থেকে শুরু করে নানা সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, ভেজাল ঘি তৈরি করার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে শিগগির খোঁজ নিয়ে এসব ভেজাল ঘি উৎপাদনকারী ও বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএসটিআই


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ