Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনাঞ্চলে গো চারণ ভূমি স্বল্পতায় খাদ্যের তীব্র সংকট

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৫ এপ্রিল, ২০২১, ৭:২২ পিএম

খুলনাঞ্চলে গো খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছ। জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উচ্চ মূল্যে খড়, বিচালি কিনে গো-খাদ্যর চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে খামারীদের । এতে করে হাজার হাজার কৃষক ও গো-খামারীরা হিমশিম খাচ্ছে। অনেকে গো-খাদ্য সংকটের কারণে গরু ছাগল বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। গবাদিপশু পালনে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হতে হচ্ছে।

সরেজমিনে খুলনার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ অঞ্চলের মানুষের নিত্য সঙ্গী হলেও সকল বিপর্যয় কাটিয়ে জীবন- জীবীকার তাগিদে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া জাতীয় পশু পালন করে আসছে। খুলনার পাইকগাছা, কয়রা, দাকোপ উপজেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সর্বশেষ আম্ফানের কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লবণ পানি ঢোকা, পানিবদ্ধতা, মৎস্য লীজ ঘের ও তরমুজের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় গরুর চারণ ভূমির সংকটের কারণে গো-খাদ্যর সংকট দেখা যায়।

পাইকগাছা উপজেলায় দেশী গরু প্রায় ৪৭ হাজার ২শত ৭৫টি, শংকর জাত বা উন্নত জাতের ৩ হাজার ৪শ ৫০টি, মহিষ ২ শতাধিক, ছাগল প্রায় ৩৫ হাজার এবং ভেড়া ২১ হাজার রয়েছে বলে উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ তরিকুল ইসলাম জানান। উল্লেখিত তথ্য হিসাবে এদের জন্য যে পরিমাণ চারণভূমি বা আঁশ জাতীয় খাদ্যর প্রয়োজন তার ১০ শতাংশ নেই বললেই চলে।

পাইকগাছার সরল গ্রামের সুবোল মন্ডল, শিববাটীর দুলাল সানা, কিরণ মন্ডল ও ভিলেজ পাইকগাছার খানজাহান জানান, আমাদের সারা বছর গরুর দুধ, গোবর, বিক্রি করে কোন মতে সংসার চলে। এবছর গরুর খাদ্য সংকটের কারণে গরু,ছাগল নিয়ে বিপাকে আছি। খড় আগে কিনতাম ৫শ টাকায়, সেই খড় এবার কিনতে হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার টাকায়। এতে করে গরু ছাগল প্রতিপালন আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে। গোপালপুরের মোহাম্মাদ আলী জানান, আমার ৩২টি গরুর জন্য দিনে ১০ হাজার টাকা মত খরচ পড়ে। দানাদার খাবারের মূল্য উর্ধমূখী এবং দুধের বাজার মূল্য কম হওয়ায় খামার টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।

গরুর কষ্ট চোখে দেখা যায় না, না খেতে পেরে কঙ্কালসার। সেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন মাঠ, জমির আইল, বাগান থেকে ঘাস,লতাপাতা জেগাড় করতে হয়। ঠিকমত খাদ্য দিতে না পারায় বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছি। কেউ বিভিন্ন সমিতি এনজিও, যুব উন্নয়ন অফিস থেকে ঋণ করে, কেউ সোনা বন্ধক রেখে, চড়া সুদে ঋণের টাকা নিয়ে অধিক লাভের আশায় গরু, ছাগল, ভেড়া চাষ করছে। এবছর গো-খাদ্যর সংকটের কারণে এসকল অঞ্চলের গো-খামারীরা চরম বিপাকে পড়েছে।

পাইকগাছা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার বিষ্ণুপদ বিশ্বাস জানান, ব্যাপক লবণাক্তটা, মৎস্য ঘের, তরমুজের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় গরুর চারণ ভূমি কমে যাচ্ছে। দানাদার খাবারের মূল্য উর্ধমূখীর হওয়ায় গো-খাদ্যর সংকট মোকাবেলায় আমরা উন্নত জাতের ঘাসের (নেপিয়ার, পাক চং) চাষে খামারীর উদ্বুদ্ধ করছি। দানাদার খাদ্যর পাশাপাশি ঘাসের চাষ করলে খামারীরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবে। গো-খাদ্যর সংকট মোকাবেলায় দানাদার খাদ্যর বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি ঋণের সুদের হার কমানো এবং আর্থিক সহায়তা কমানোসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন খামারীগণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ