পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মমতা বেনার্জীর তৃণমূল কংগ্রেসকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলের তুমুল লড়াইয়ে বিজেপি নেতারা অসৌজন্যমূলকভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে নানা মন্তব্য করছেন। বিশেষত ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির সাবেক সভাপতি অমিত শাহ বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের মধ্যে একটি বাংলাদেশ বিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। তথাকথিত অনুপ্রবেশকারি আখ্যা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ৩০ ভাগ মুসলমান ভোটারের বিরুদ্ধে প্রকারান্তরে হুমকি দিচ্ছেন। বিজেপি ক্ষমতায় এলে আসামের মত নাগরিকত্ব বিল কার্যকর করে সেখানকার এককোটি মুসলমানকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার কথাও বিভিন্ন সময়ে বলেছেন অমিত শাহ। এ সপ্তাহে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অমিত শাহ বলেছেন, বাংলাদেশের গরিবরা খেতে না পেয়ে ভারতে আসে। তার এ ধরণের বক্তব্যের কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। গত দুই দশকে বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে তাতে দুই দেশের অর্থনৈতিক-ডেমোগ্রাফিক চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। গত বছর আন্তজার্তিক মূদ্রা তহবিল আইএমএফ’র এক প্রতিবেদনে ২০২০ সাল নাগাদ মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে প্রিডিকশন দিয়েছিল। সামাজিক ও জীবনমান উন্নয়নের অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। এসব রিপোর্ট বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বরাতে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। একদিকে মোদি সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছার দাবি করা হচ্ছে অন্যদিকে অমিত শাহ ও দিলিপ ঘোষরা অনবরত মনগড়া তথ্য দিয়ে বাংলাদেশবিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের গরিবরা না খেতে পেয়ে ভারতে যাচ্ছেন, অমিত শাহর এমন বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই। বরং ভারতের রেমিটেন্স আয় এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশের পরোক্ষ ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের স্বচ্ছল ব্যক্তিরা টুরিস্ট ও মেডিকেল ভিসায় ভারতে গিয়ে ভারতের পর্যটন শিল্পখাতের আয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে। বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৭ সালে ভারতে আগত পর্যটকদের মধ্যে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ থেকে ভারতের যাওয়া পর্যটকের সংখ্যা ছিল সাড়ে ২১ লাখের বেশি, সেখানে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটকের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৩ লাখ। মূদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে পর্যটনখাতের পৌনে দুইলক্ষ কোটি রুপির বড় অংশই ভারত পাচ্ছে বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে। অন্যদিকে বাংলাদেশের বেসরকারি চাকরি বাজারের বড় একটি অংশই ভারতীয়দের দখলে। দেশের গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি, বায়িং হাউজ, ফ্যাশন ডিজাইনিং, আইটি সেক্টরসহ বিভিন্ন সেক্টরে লাখ লাখ ভারতীয় কর্মী কাজ করে শত শত কোটি ডলার ভারতে নিয়ে যাচ্ছে। এক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, দেশে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত ৫ লক্ষাধিক ভারতীয় কর্মীর বেশিরভাগই অবৈধ। তারা মূলত ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে কোনো ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই চাকরি করে টাকা দেশে পাঠাচ্ছে। ভারতের সামগ্রিক অর্থনৈতিক খাতের বড় অংশই রেমিটেন্সের উপর নির্ভরশীল । বাণিজ্য ও রেমিটেন্স আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশই ভারতের অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ ভ’মিকা পালন করছে। অথচ সে দেশের রাজনীতিকরা মিথ্যা চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশকে হেয় করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
ভারতীয় রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি ও ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পজিটিভ দিকগুলোকে শুধু অস্বীকারই করছেন না, কোটি ভারতীয়কে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলে তারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নশীল অবস্থানের বিরুদ্ধে হুমকি সৃষ্টি করে চলেছেন। আমাদের দেশের এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতি কর্মী যখন তখন সাম্প্রদায়িকতার ধোঁয়া তুলে দেশের মুসলমানদের অসমাম্প্রদায়িক চেতনায় আঘাত দিলেও ভারতের মন্ত্রী ও রাজনীতিবিদদের বাংলাদেশবিদ্বেষী ও উস্কানিমূলক বক্তব্যে সব সময় নিরব থাকেন। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকেও এসব বক্তব্যের জোরালো প্রতিবাদ দেখা যায় না। অমিত শাহর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে তার জ্ঞান সীমিত। এটা কোনো জোরালো বক্তব্য বা প্রতিবাদ হয়নি। বাংলাদেশে একলাখের বেশি ভারতীয় চাকরি করেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাও যথার্থ নয়। যেখানে ভারতীয় মন্ত্রীরা ভিত্তিহীনভাবে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের গল্প তৈরী করছেন, সেখানে ভারতের ৫লক্ষাধিক অবৈধ কর্মীকে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষাধিক বলছেন! বাংলাদেশে বৈধ-অবৈধ ভারতীয়দের চাকরি, রেমিটেন্স আয় এবং সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার তথ্য উপাত্ত ও পরিসংখ্যান তুলে ধরে অমিত শাহ্র বক্তব্যের জবাব দিতে হবে। সেই সাথে দেশ থেকে অবৈধ ও অপ্রয়োজনীয় ভারতীয় কর্মীদের চিহ্নিত করে দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। বিজেপি নেতাদের বাংলাদেশ বিরোধী, ভিত্তিহীন ও অবমাননাকর বক্তব্য বন্ধ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।