Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যথাযথ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৩ এএম

রাজধানীতে এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ নিতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছে র‌্যাবের চার সদস্যসহ পাঁচজন। গ্রেফতারকৃত চার র‌্যাব সদস্যের মধ্যে তিনজন সেনাবাহিনীর ও একজন বিমানবাহিনীর সদস্য। গ্রেফতারকৃত চার র‌্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। তবে তাদের বিচার নিজ নিজ বাহিনীর আইন অনুযায়ী হবে বলে ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন। তাদেরকে স্ব স্ব বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র উল্লেখ করেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যমুনা ফিউচার পার্কের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা নেয়ার সময় র‌্যাব সদস্যদের গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়। একশ্রেণী রর‌্যাব সদস্যর এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়া নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক ও উৎকণ্ঠার।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অপরাধে জড়িয়ে পড়া নতুন কিছু নয়। প্রায়ই একশ্রেণীর সদস্য এমন সব অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, যা কল্পনাও করা যায় না। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, মাদকাসক্তি থেকে শুরু করে হেন কোনো অপরাধ নেই যাতে তারা জড়াচ্ছে না। এ শ্রেণীর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যর কাছে অনেক এলাকার মানুষ জিম্মি হয়ে আছে। সাধারণ মানুষ ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলে না। যখন কোনো ঘটনা প্রকাশিত হয়, তখনই তা আলোচনায় আসে। আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিজস্ব অনুসন্ধান এবং অভিযোগের ভিত্তিতেও অভিযুক্ত সদস্যর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়, যা প্রকাশ্যে আসে না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর কয়েক হাজার সদস্যর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিরও ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ থেকে বোঝা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অনেকে অপরাধে জড়াচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মূল দায়িত্ব জনগণের সেবা করা এবং বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ানো, সেখানে এ বাহিনীর কিছু সদস্যর অপরাধের কারণে পুরো বাহিনীর বদনাম হচ্ছে। আমরা দেখেছি, গত বছর লকডাউনের সময় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা কি অসামান্য দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। করোনার সংক্রমণ উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোসহ খাবার বিতরণ, মৃতদের দাফন, হাসপাতালে নেয়ার মতো মানবিক দায়িত্ব পালন করেছে। পুলিশ প্রকৃতই মানুষের সেবক এবং স্বার্থহীন বন্ধু হয়ে উঠে। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক পুলিশ সদস্য অকাতরে জীবনও দিয়েছে। পুলিশের এই ভূমিকা জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রশংসিত এবং মানুষের আস্থা অর্জিত হয়। বর্তমান আইজিপিও পুলিশকে জনবান্ধব করে তোলার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সাধারণ মানুষ যাতে নির্ভয়ে পুলিশের সেবা পায়, তা নিশ্চিতের নির্দেশনা দেন। করোনার প্রকোপ কমার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কোনো সদস্যর অপরাধে জড়িয়ে পড়ার কারণে মানুষের সেই আস্থা বিনষ্ট হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য হতে পারে না। পুলিশ ও র‌্যাব দুটো আলাদা বাহিনী হলেও দুই বাহিনীর কিছু সদস্যর অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ বরাবরই রয়েছে। র‌্যাবের একশ্রেণীর সদস্যর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মানুষকে তুলে নেয়া কিংবা র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ করার মতো গুরুতর অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। গুম, খুন, অপহরণ এবং ক্রসফায়ারের মাধ্যমে বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ডের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলোও বিভিন্ন সময়ে নিন্দা জ্ঞাপন করেছে। করোনার মধ্যে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন যখন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে, তখন কতিপয় র‌্যাব সদস্যর অপরাধ প্রবণ হয়ে ওঠা খুবই দুঃখজনক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কেউ যদি নিজেরাই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে সাধারণ ও দাগী অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্যর অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠার পেছনে নিয়োগ প্রক্রিয়ার দুর্বলতাকে বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন। তারা মনে করছেন, আগে এ বাহিনীর সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীর পারিবারিক ঐতিহ্য, মর্যাদা, সততার বিষয়গুলো প্রাধান্য দেয়া হতো। এখন প্রার্থী ও নির্বাচিত হওয়ার মূল নিয়ামক হয়ে উঠেছে রাজনীতি। ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পৃক্ততা থাকলে প্রার্থীর সিংহভাগ যোগ্যতা অর্জিত হয়ে যায়। এভাবে নিয়োগপ্রাপ্তরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মূল দায়িত্বের ধারক না হয়ে দলীয় কর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এতে চেইন অফ কমান্ডও বিঘ্নিত হয়। এই দলবাজ সদস্যদের বেপরোয়া ও অপরাধপ্রবণ আচরণে সাধারণ মানুষ যেমন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে, শান্তি-শৃঙ্খলার ব্যত্যয় ঘটে, তেমনি পুরো বাহিনীর ভাবমর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে শুদ্ধি অভিযান জোরালো করা উচিৎ। যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অপহরণ ও মুক্তিপণের অভিযোগে যে র‌্যাব সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে, যথাযথ এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

 



 

Show all comments
  • শ্যামল শীল ১১ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৫৭ এএম says : 0
    আমি ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র।সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি, নাটানা গ্রামে আমার জন্ম। মা,বাবা,ভাই,আমি ও ঠাকুরমা কে নিয়ে আমাদের পরিবার।বাবার উপার্জন দিয়ে আমাদের পরিবার চলে।তার ভিতর দিয়ে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার পর্যন্ত নিয়ে আসছে।হঠাত করে আমার বাবা অসুস্হ হয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৫ মাস অসুস্থ যার কারনে পরিবার টি আর্থিক ভাবে অসচ্ছল হয়ে পড়েছে।ড়াক্তার বাবা কে ভারতে নিয়ে যেতে বলছে।সাতক্ষীরা সুশান্ত কুমার ঘোষ বলেন,বাবার মাথার ড়ান পাশে ব্রেইন সমস্যা, নার্ভ গুলো শুকিয়ে গেছে।হাটা চলা চল করতে পারে না,বিছানায় নিসারে প্রসাব হয়ে যায়,,পায়খানা হয় না,,যা খায় তা মুখ দিয়ে বাইর হয়ে পড়ে,সারা দিন বিছানায় শুয়ে থেকে, আগের মত স্বাভাবিক কথা বলে না।এগুলো যে কত কষ্টের তা আমি ভাষা দিয়ে বেঝাতে পারব না।পরিবারের কেউ বা বিশেষ করে মা, বাবা অসুস্হ থাকলে এ যে কি কষ্ট।বাবা কে ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন যা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না আমাদের জমির পরিমান ৫ শতক।তাই আমি আমার বাবার জন্য দৈনিক ইনকিলাব এ নিউজ করলে কেউ যদি এগিয়ে আসে তাহলে অনেক উপকার হবে।অনেক বার জি মেইল করছি বাট নিউজ টি পাবলিশ হয়নি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন